ঢাবির রেজিস্ট্রার ভবনে হয়রানি বন্ধের দাবিতে শিক্ষার্থীর অবস্থান
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) প্রশাসনিক ভবনে শিক্ষার্থী হয়রানি ও বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ তুলে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন আবু হাসনাত আব্দুল্লাহ নামের এক শিক্ষার্থী। তিনি ইংরেজি বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের ও বিজয় একাত্তর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। আজ মঙ্গলবার সকাল ১১টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে তিনি আট দফা দাবিতে এ কর্মসূচি শুরু করেন।
অবস্থান কর্মসূচি নিয়ে আবু হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গতবছরই তার গৌরবময় শতবর্ষ পূর্ণ করেছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় আজ ১০১তম বছরে এসেও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক জটিলতাজনিত হয়রানি কমেনি। এখনও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন, হল অফিস ও বিভাগীয় অফিসের মধ্যে কাজের সমন্বয়হীনতার প্রবল অভিযোগ রয়েছে। যেখানে বাংলাদেশের সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্ব শাসিত সবক্ষেত্রে ডিজিটাইজড পদ্ধতিতে সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা কাজ করে যাচ্ছেন, সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো শতবর্ষী ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানে এখনো এনালগ পদ্ধতির ধূলোমলিন ফাইলপত্রের ভারে ন্যুব্জ। যার ফলশ্রুতিতে এবং কর্মকর্তাদের গাফলতিতে গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র হারানোর খবর শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাঝেমধ্যেই শোনা যায়। এটি ডিজিটাল যুগে সনাতনী নির্যাতনের নামান্তর।’
হাসনাত আব্দুল্লাহ আরও বলেন, “রেজিস্ট্রার ভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বেচ্ছাচারিতা এবং নিয়মানুবর্তিতায়ও ঘাটতি রয়েছে। তাদের কাজে দীর্ঘসূত্রিতা আছে। কাজের ব্যাপারে তাদের অলসতা এবং দায়মুক্তির খবর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘লাঞ্চের পর আসুন সুলভ’ আচরণ হিসেবে সর্বজনবিদিত।”
কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অফিস চলাকালে অন্যান্য কাজে ব্যস্ত থাকা প্রসঙ্গে আব্দুল্লাহ বলেন, ‘কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অফিস টাইমে নির্বাচনি প্রচারণাসহ বিভিন্ন ব্যক্তিগত কাজে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। অনেকে অফিস টাইমে নিজস্ব ব্যবসায় সময় দেন। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের আচরণ মনিব-গোলাম পর্যায়ের। এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে আমার অবস্থান।’
আবু হাসনাতের আট দফা দাবিগুলো হলো-
১. শিক্ষার্থীদের হয়রানি নিরসনের জন্য ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কাজের জবাবদিহিতা নিশ্চিতকল্পে শিক্ষক ও ছাত্র প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে অভিযোগ সেল গঠন করতে হবে। যেখানে সেবাগ্রহীতারা সুনির্দিষ্ট প্রমাণাদির ভিত্তিতে অভিযোগ জানাতে পারেন।
২. প্রশাসনিক সব কার্যক্রম অনতিবিলম্বে ডিজিটাইজড করতে হবে।
৩. নিরাপত্তা ও হারিয়ে যাওয়া কাগজপত্র তদন্তের স্বার্থে অফিসসমূহে প্রতিটি কক্ষে পর্যাপ্ত পরিমাণে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে।
৪. প্রশাসনিক ভবনে অফিসসমূহের প্রবেশদ্বারে ডিজিটাল ডিসপ্লে স্থাপন করতে হবে। ডিসপ্লেতে অফিস সমূহের নাম, কক্ষ নম্বর ও সেখানে প্রদত্ত সেবার বিবরণী, কর্তব্যরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নাম ও ছবিসহ প্রয়োজনীয় তথ্যাবলি প্রদর্শন করতে হবে।
৫. কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য স্বাস্থ্যকর ও সুন্দর কর্ম পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। প্রশাসনিক ভবনের ক্যান্টিনেরও সংস্কার করতে হবে।
৬. কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আধুনিক সাচিবিক-বিদ্যা, পেশাদারত্ব, মানুষিক ও আচরণগত প্রশিক্ষণ আইন করে বাধ্যতামূলক করতে হবে। প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থিত মানসিক সেবা প্রদানকারী বিভাগ ও সেন্টারসমূহের শরণাপন্ন হতে হবে।
৭. অফিস চলাকালীন প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ব্যক্তিগত, ব্যবসায়িক কিংবা রাজনৈতিক কোনো কাজেই লিপ্ত থাকতে পারবেন না। সে নিরিখে প্রশাসনিক ভবনের অভ্যন্তরে অবস্থিত কর্মচারী ইউনিয়ন অফিস বাধ্যতামূলকভাবে তাদের ক্লাবসমূহে স্থানান্তর নিশ্চিত করতে হবে।
৮. কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্বাচনকালীন প্রচারণা পরিবেশবান্ধব করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক শিক্ষা পরিবেশ বজায় রাখতে, বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য হানিকর ও পরিবেশ বিপর্যয়কারী অপ্রয়োজনীয় পোস্টার লিফলেট ও ব্যানার ব্যবহার আইন করে নিষিদ্ধ করতে হবে।