থানা থেকে ছাড়া পেয়ে যা বললেন ঢাবি শিক্ষার্থী মারুফ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের মেসেঞ্জার গ্রুপের কথোপকথনকে সরকারবিরোধী কাজ ও জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগ এনে দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মিফতাহুল মারুফকে থানায় দেওয়া হয়। সেখানে ১২ ঘণ্টা থাকার পর ছেড়েও দেওয়া হয়। এসময় শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মওদুত হাওলাদার বলেন, ‘সে যে মন্তব্য করেছে এটা সম্পূর্ণ তাঁর ব্যক্তিগত মতামত। তাই আমরা তদন্তের পরে তাঁকে একটি মুচলেকা নিয়ে শিক্ষকদের জিম্মায় ছেড়ে দিয়েছি।’
থানা থেকে ছাড়া পেয়ে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের এক প্রতিবাদ ও বিক্ষোভে আটক থেকে ছাড়া অবধি নানা প্রসঙ্গে কথা বলেন মারুফ। মারুফকে থানা থেকে মুক্ত করে আনার সময় অপর দুই শিক্ষার্থী সালেহ উদ্দিন সিফাত ও আহনাফ সাইদ খানের ওপর হামলার প্রতিবাদে এই বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে সংগঠনটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।
আজ শুক্রবার বিকেল ৫টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মেফতাহুল মারুফ বলেন, ‘চ্যাট গ্রুপে করা আমার একটি সাধারণ বক্তব্য ইস্যু বানিয়ে হল ছাত্রলীগ আমাকে হল প্রশাসনের কাছে নিয়ে যায়। হল প্রভোস্ট কোনো তদন্ত না করে আমাকে শাহবাগ থানায় সোপর্দ করে। আমার বন্ধু, সিনিয়র, জুনিয়র, বিভিন্ন এক্টিভিস্টদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় মুক্তি পাই। আমার সঙ্গে হওয়া এ অন্যায় যেনো আর কারো সঙ্গে না হয়।’
মারুফ বলেন, ‘আমাকে থানায় নেওয়ার পর থেকে এই অবধি যে প্রতিবাদ হয়েছে, সে সিলসিলা যেন সামনের দিনের বজায় থাকে।’
মারুফ আরও বলেন, ‘আখতার ভাই যখন আমার সঙ্গে দেখা করতে যান, আমি তখন তাঁকে বলেছি, ঠিক আছি। কিন্তু, আমাকে শারীরিক নির্যাতন না করা হলেও মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে। আমি এমন অবিচারের অবসান চাই।’
উল্লেখ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ১৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের আবাসিক ছাত্র মেফতাহুল মারুফকে গতকাল রাত ১২ টায় প্রাইভেট গ্রুপের মেসেজের সূত্র ধরে জঙ্গি ও রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ তুলে শাহবাগ থানায় হস্তান্তর করেন জিয়া হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. বিল্লাল হোসেন। তাৎক্ষণিকভাবে গভীর রাত থেকেই মারুফকে মুক্ত করার জন্য কাজ করে ছাত্র অধিকার পরিষদ ও স্টুডেন্ট এগেনেস্ট টর্চার। দুপুর ১২ টার পর মুচলেকা নিয়ে মারুফকে শাহবাগ থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
শুক্রবার দুপুরে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মওদুত হাওলাদার বলেন, ‘অভিযোগ পাওয়ার পর আমরা তাঁর এলাকায় খোঁজ নিয়েছি। তাঁর (মারুফ) পরিবারের বড় দুই রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা আছে৷ তবে, ব্যক্তিগতভাবে তাঁর কোনো দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা নেই। সে যে মন্তব্য করেছে এটা সম্পূর্ণ তাঁর ব্যক্তিগত মতামত। তাই আমরা তদন্তের পরে তাঁকে একটি মুচলেকা নিয়ে শিক্ষকদের জিম্মায় ছেড়ে দিয়েছি।’
মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘আমাদের হল থেকে প্রাথমিক তদন্ত করে মারুফের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতার প্রমাণ পেয়ে প্রক্টরিয়াল টিমের হাতে তুলে দিয়েছিলাম। এরপর প্রক্টরিয়াল টিম থানায় দিয়েছে। কোনো ছাত্রকে সরাসরি আমি থানায় দিতে পারি না, এটা আমাদের সিস্টেমে নেই। সে আমাদের ছাত্র হিসেবে সহযোগিতা করে কথা বলেনি। এজন্য প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে আমার কাছে যতটুকু এভিডেন্স ছিল, তার ভিত্তিতেই থানায় দিতে বাধ্য হয়েছি।’