প্রতীকী কর্মসূচির মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ পূর্তি উদযাপন
১০০ বছর আগে ১৯২১ সালের এই দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়েছিল। আজ বৃহস্পতিবার সকালে নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে জাতীয় সংগীত পরিবেশন, জাতীয় পতাকার পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা উত্তোলন এবং বেলুন উড্ডয়নের মাধ্যমে দিবসটির প্রতীকী কর্মসূচি শুরু হয়।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। মূল বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন বিশিষ্ট ভাষাসৈনিক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট আবদুল গাফফার চৌধুরী। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ ও উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভিন্ন হলের প্রাধ্যক্ষ, প্রক্টর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং সীমিত সংখ্যক শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন। ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার প্রবীর কুমার সরকার অনুষ্ঠান সঞ্চালন করেন।
ভাষা সৈনিক আবদুল গাফফার চৌধুরী বলেন, শতবর্ষ ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার গৌরবময় ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। এটি আমার বিস্ময়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উপমহাদেশের প্রথম অসাম্প্রদায়িক এবং একটি জাতীয়তাবাদী বিশ্ববিদ্যালয়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাম্প্রদায়িকতা ছিল, কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাম্প্রদায়িকতা ছিল না। একটু লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, যদিও পূর্ববঙ্গের মুসলমান ছাত্র-ছাত্রীরা এ বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিয়েছেন, কিন্তু তার শিক্ষকরা ছিলেন অন্য সম্প্রদায়ের।
এ ভাষা সৈনিক বলেন, ভারতীয় উপমহাদেশে আধুনিক শিক্ষার প্রবর্তনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দাগ অসীম। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয় যে কাজটি করতে পারেনি সে কাজটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় করেছে। একটি স্বাধীন অসাম্যতায় জাতি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছে, বাংলা ভাষার সাহিত্যকে এই চর্যাপদের আমল থেকে রবীন্দ্রনাথ, শামসুর রাহমান পর্যন্ত যে স্রোত, সে স্রোতকে বেগবান করেছে। বাংলা ভাষাকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের মর্যাদায় উন্নীত করেছে।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ এবং ১৯১১ সালের বঙ্গভঙ্গ রদের রাজনৈতিক, সামাজিক ঘটনাপ্রবাহের মধ্য দিয়ে তৎকালীন নেতৃবৃন্দ অনুভব করেছিলেন এই অঞ্চলে একটি বিশ্ববিদ্যালয় থাকা অতীব প্রয়োজন। জ্ঞানোদীপ্ত, বুদ্ধিদীপ্ত সমাজ বিনির্মাণ, বিশেষ করে অবহেলিত নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষের উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে সমাজে নেতৃত্ব দেওয়ার গুণাবলী অর্জনের জন্য এ বিশ্ববিদ্যালয়টির জন্ম। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে খ্যাতিমান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অন্তর্ভুক্ত হওয়াও একটি উদ্দেশ্য।
উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ বলেন, অতীত থেকে এ পর্যন্ত এ দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে, সাংস্কৃতিক, নাট্য, বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস হলো এ জাতির মুক্তি আন্দোলনের ইতিহাস। সাথে সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ জাতির জ্ঞান বিস্তারে, বাঙালি জাতির যে রুপ, অর্জন সব কিছুতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ জাতিকে সমৃদ্ধ করেছে।
দিবসটি উপলক্ষে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান কার্জন হল প্রাঙ্গণে একটি বুদ্ধ নারিকেল গাছের চারা রোপণের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষে শত বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিরও উদ্বোধন করেন।
শতবর্ষের বর্ণাঢ্য ও জাঁকজমকপূর্ণ মূল অনুষ্ঠান আগামী ১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে রাষ্ট্রপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য মো. আবদুল হামিদ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে শতবর্ষের মূল অনুষ্ঠান উদ্বোধন করতে সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন।