রাবিতে প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ফিশারিজ বিভাগের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে একের পর এক উঠছে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ।
গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি থেকে প্রশ্ন ফাঁস করেন ওই বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ইসতিয়াক হোসাইন। এর রেশ না কাটতেই অভিযুক্ত এ অধ্যাপক আঙুল তুললেন বিভাগের আরেক সহযোগী অধ্যাপক ইয়ামিন হোসেনের বিরুদ্ধে। ‘ব্যক্তিগত আক্রোশে কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি’ বিভাগের মান ক্ষুণ্ন করার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম নষ্ট করছে বলে মনে করছেন জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকেরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ফিশারিজ অনুষদের নির্বাচিত ডিন ও বিভাগীয় অধ্যাপক ইসতিয়াক হোসেনের ফেসবুক স্টোরিতে চলমান পরীক্ষার একটি কোর্সের (এফএমএমসি-৬৪১) প্রশ্নপত্র দেখা যায়। এ ঘটনায় পরীক্ষা স্থগিত করে পরীক্ষা কমিটি। এ ঘটনার পর একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ইয়ামিন হোসেন সাজেশনের নামে চূড়ান্ত পরীক্ষার আগেই এক কোর্সের প্রশ্নপত্র অনলাইন ক্লাসে কিছু শিক্ষার্থীর কাছে শেয়ার করেন। ফলে ওই পরীক্ষা বাতিল চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বরাবর আবেদন করেছেন এর আগে প্রশ্ন ফাঁসে অভিযুক্ত অধ্যাপক মো. ইসতিয়াক হোসাইন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সালেহ হাসান নকিব এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ক্লাসে আলোচ্য প্রশ্নের সঙ্গে পরীক্ষার প্রশ্ন মিলে গেলে পুরো প্রশ্নকরণ ও পরীক্ষণ পদ্ধতিটাই প্রশ্নবিদ্ধ হয়। বিষয়গুলো একাডেমিক কাউন্সিলে আসা উচিত। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে অভিযোগ প্রমাণিত হলে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’ এমন সব কাজে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম নষ্ট হচ্ছে বলে মনে করেন এই শিক্ষক।
ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘ফিশারিজ বিভাগের শিক্ষকদের মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক খারাপ কেন, সেটা খতিয়ে দেখা উচিত। দ্রুত এমন সমস্যার সমাধান না হলে আগামীতে সমস্যা বাড়তে পারে। এতে শিক্ষার্থীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ফিশারিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ইয়ামিন হোসেন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমাদের মতাদর্শ এবং নির্বাচনের ফলাফলে কোনো সমস্যা নেই। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ আসলে ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব থেকে এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমার সুনাম নষ্টের জন্য করা হয়েছে।’
শিক্ষার্থীদের প্রশ্নের ধারণা দিতে বিগত বছরের প্রশ্ন দেখিয়েছেন দাবি করে তিনি বলেন, ‘যে প্রশ্নগুলোর স্ক্রিনশট প্রচার করা হয়েছে, আমি সেগুলো পড়াই না। আর এটি ২০১৮ সালের জুন মাসের প্রশ্নপত্র। শিক্ষার্থীরা প্রশ্নপত্রের ধারণা নিতে চাওয়ায় আমি পূর্বের বছরের প্রশ্ন থেকে তাঁদের ধারণা দিয়েছি।’
প্রশ্নপত্র নিজের ফেসবুক আইডিতে শেয়ার প্রসঙ্গে অধ্যাপক ইসতিয়াক হোসাইন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আসলে বিভাগের প্রশ্নপত্রের মডারেশনের গাফিলাতি রোধের জন্য আমি আগে ছবি তুলেছিলাম। সেটি ভুলবশত ফেসবুকে শেয়ার হয়ে যায়। এ ভুলের জন্য আমি শাস্তি পেতে রাজি আছি। যদিও আমার উদ্দেশ্য ছিল ভালো কিছুর।’
সহযোগী অধ্যাপক ইয়ামিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রসঙ্গে অধ্যাপক ইসতিয়াক বলেন, ‘ইয়ামিনের সঙ্গে আমার এখনও ভালো সম্পর্ক রয়েছে। অভিযোগের পর থেকে অনেকে ভিন্ন কিছু ভাবছে। তবে, আমি মূলত বিভাগের প্রশ্নপত্র মডারেশনের বিষয়টি স্বচ্ছ করার জন্য এমন অভিযোগ করেছি।’
বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মঞ্জুর আলম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘এসব ঘটনার পর আমি মর্মাহত। এতে নিজেদের বিভাগের মান-সম্মান ক্ষুণ্ন হচ্ছে। যদিও প্রশ্নপত্রের বিষয়ে আমার করার কিছু নেই।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক আলমগীর হোসেন বলেন, ‘অভিযোগটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে পাঠানো হবে। তারপর নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে বিস্তারিত জানানো হবে।’