সান্ধ্যকালীন কোর্সে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার চায় জবি নীলদল
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সান্ধ্যকালীন কোর্সগুলোর ওপর স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার চায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামী লীগপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন নীলদলের একাংশ। আজ সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্য বরাবর পাঠানো সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক ড. কাজী সাইফুদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক ড. সিদ্ধার্থ ভৌমিক স্বাক্ষরিত এক আবেদনে এই দাবি জানানো হয়।
আবেদনে বলা হয়, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক বিভাগ ইভিনিং প্রোগ্রাম পরিচালনা করে আসছিল। ইভিনিং প্রোগ্রাম পরিচালনাকারী বিভাগসমূহ সংশ্লিষ্ট অনুষদ ও সিন্ডিকেটের অনুমতি ও অনুমোদন সাপেক্ষে বিভাগ কর্তৃক আরোপিত নির্দিষ্ট শর্ত ক্রাইটেরিয়া অর্জনযোগ্য আবেদনকারীদের মধ্যে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে বাছাইপূর্বক ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করতো। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের একটি চিঠির প্রেক্ষিতে প্রাক্তন মাননীয় উপাচার্য বিষয়টি অনুষদ কিংবা সিন্ডিকেটসহ কোনো ফোরামে আলোচনা না করেই ইভিনিং প্রোগ্রাম স্থগিত করে দেন। উল্লেখ্য যে মঞ্জুরি কমিশনের চিঠির প্রেক্ষিতে কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় তাদের ইভিনিং প্রোগ্রাম সাময়িক সময়ের জন্য স্থগিত করলেও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরো অনেক বিশ্ববিদ্যালয় বর্তমানে ইভিনিং প্রোগ্রাম চালু চলমান রয়েছে। তাই সান্ধ্যকালীন কোর্সসমূহের অনিয়মতান্ত্রিক স্থগিত আদেশ প্রত্যাহারপূর্বক স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানাচ্ছি।
২০১৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫২তম সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বাণিজ্যিক কোর্স’ নিয়ে বক্তব্য দেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। সমাবর্তনে তিনি বলেন বাণিজ্যিক কোর্স সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করছে এবং এতে ক্যাম্পাসের সার্বিক পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে। রাষ্ট্রপ্রধান আরো বলেন, ‘এসব বাণিজ্যিক কোর্সের মাধ্যমে প্রতি বছর হাজার হাজার গ্র্যাজুয়েট বের হচ্ছেন। এসব ডিগ্রি অর্জন করে শিক্ষার্থীরা কতটুকু লাভবান হচ্ছেন এ ব্যাপারে প্রশ্ন থাকলেও এক শ্রেণির শিক্ষক কিন্তু ঠিকই লাভবান হচ্ছেন। তাঁরা নিয়মিত নগদ সুবিধা পাচ্ছেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়কে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করছেন বলেও মন্তব্য করেন রাষ্ট্রপ্রধান।
রাষ্ট্রপ্রধানের এমন বক্তবের দুই দিন পর ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. দিল আফরোজা বেগম স্বাক্ষরিত চিঠিতে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সান্ধ্য কোর্স বন্ধের কথা বলা হয়। এবং বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির কার্যালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়েছে।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘সান্ধ্য কোর্স পরিচালনা করা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈশিষ্ট্য ও ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করে বিধায় সান্ধ্যকালীন কোর্স বন্ধ হওয়া দরকার। চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক প্রধান হিসেবে উপাচার্যরা নিজেদের মেধা, জ্ঞান ও প্রজ্ঞা দিয়ে তাঁদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব ও কর্তব্য প্রতিপালন করে যাচ্ছেন। তবুও নানা কারণে কোনো কোনো ক্ষেত্রে নিয়ম-নীতি অনুসরণে শিথিলতা দেখা যাচ্ছে। এসব কারণে উচ্চশিক্ষা প্রশাসনে সৃষ্টি হচ্ছে বিশৃঙ্খলা, যা কাম্য নয়।’
এ ছাড়া জবি শিক্ষকদের নীল দল করোনা সংকট উত্তরণে অনলাইন কিংবা বিকল্প ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেওয়া এবং ক্লাস শুরুর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক পদসমূহে একই ব্যক্তিকে একাধিকবার না দেওয়া এবং যোগ্যতার ভিত্তিতে প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ; প্রক্টর, বিভিন্ন দপ্তরের পরিচালকসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পদসমূহে নিয়োগ প্রদানে পক্ষপাতমূলক আচরণের অবসান, সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আর্থিক অনিয়ম, নিয়োগ ও পদোন্নতি বিষয়ে অনিয়মের যে সব সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে তার যথার্থতা এবং সঠিকতা নির্ধারণের লক্ষ্যে অতিসত্তর নিরপেক্ষ তথ্যানুসন্ধান কমিটি গঠন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষককে ধর্ম, বর্ণ, জাতি, গোষ্ঠী নির্বিশেষে সৌহার্দ্য সম্প্রীতি বজায় রাখার স্বার্থে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে লেখালেখি করা থেকে বিরত থাকার জন্য জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় নীলদলের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়েছে।