১৮ মাস পর খুলল ঢাবির হল, শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাস
মহামারি নভেল করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘ ১৮ মাস বন্ধ থাকার পর খুলেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আবাসিক হল। আজ মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে হলে উঠছেন শিক্ষার্থীরা। দীর্ঘদিন পর হলে উঠতে পেরে উচ্ছ্বাস প্ৰকাশ করতে দেখা যায় তাঁদের।
কয়েকটি হল পরিদর্শন করে দেখা যায়, স্নাতক (সম্মান) চতুর্থ বর্ষ ও স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে ফুল, চকলেট এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগোসহ মাস্ক দিয়ে বরণ করে নিচ্ছে হল কর্তৃপক্ষ। শিক্ষার্থীরাও স্বাস্থ্যবিধি মানছেন এবং হলের বৈধ পরিচয়পত্র ও টিকার প্রমাণ দেখিয়ে হলে ঢুকছেন।
শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘দীর্ঘ ১৮ মাস পর হলে এসেছি। সবাইকে দেখে খুব ভালো লাগছে। এ অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। হল কর্তৃপক্ষও সুন্দরভাবে আমাদের ফুল দিয়ে বরণ করে নিয়েছেন, একই সঙ্গে সব রকমের স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে। আশা করছি, আমরা এবার সব স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরে যেতে পারব।’
স্যার এ এফ রহমান হলের ছাত্র মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আজকের দিনটি ঈদের মতোই আনন্দের। এই দিনটির জন্য অপেক্ষা করছিলাম, অবশেষে পেলাম। এখন মনে হচ্ছে, সবকিছুই স্বাভাবিক।’
জহুরুল হক হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমরা সবাইকে হলে ওঠাচ্ছি। আবাসিক শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং ছাত্রনেতারা সবাই আমাদের সহযোগিতা করছে। সবাই শৃঙ্খলা বজায় রেখেই হলে উঠছে।’
আবাসিক হল ব্যবহারের জন্য কিছু নির্দেশনা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সেগুলো হলো—কক্ষের বাইরে এলে সবাইকে বাধ্যতামূলকভাবে নিয়মিত ও সার্বক্ষণিক সঠিক নিয়মে নাক-মুখ ঢেকে মাস্ক পরিধান করতে হবে; স্বাস্থ্যবিধি পালনের জন্য সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করতে হবে; স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী পরস্পরের কাছ থেকে কমপক্ষে এক মিটার (৩ ফুট) শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে; কোনো কক্ষের মেঝেতে শোয়া যাবে না, এক বিছানায় একাধিক ব্যক্তি শোয়া যাবে না। কেবল আবাসিক ও দ্বৈতাবাসিক শিক্ষার্থীরা হলে অবস্থান করতে পারবেন। কোনো বহিরাগত বা বাইরে থেকে আসা কাউকে কক্ষে অবস্থান করতে দেওয়া যাবে না; প্রয়োজন সাপেক্ষে কক্ষে এবং কক্ষের বাইরে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে; শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ কক্ষ এবং কক্ষের প্রয়োজনীয় আশপাশ সবসময় নিজ দায়িত্বে পরিষ্কার রাখতে হবে এবং এ ক্ষেত্রে হল প্রশাসন সহযোগিতা প্রদান করবে; হল ডাইনিং, ক্যান্টিন, মেস, দোকান, সেলুন, রিডিংরুম, অডিটোরিয়াম, টিভিরুম, অতিথিকক্ষ, পাঠাগার, মসজিদ ও উপাসনালয়ে ভিড় করা যাবে না। এসব জায়গায় শারীরিক ও সামাজিক দূরত্ব বিধি অনুসরণ এবং মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। ডাইনিংয়ে পালাক্রমে খাবার খেতে হবে; পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত অতিথিকক্ষে শিক্ষার্থীদের সমাবেশ বন্ধ রাখতে হবে। বেড়াতে ও ঘুরতে যাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে এবং সভা-সমাবেশ, রেস্তোরাঁ, পার্টি ও গণপরিবহণ এড়িয়ে চলতে হবে।’
এদিন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হল পরিদর্শন করতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘আজ আমাদের জন্য খুব আনন্দের দিন। অনেকটা মনে হচ্ছে যেন ঈদের দিনের মতো। যেভাবে আন্তরিকতার সঙ্গে প্রতিটি হলে শিক্ষার্থীদের বরণ করে নিচ্ছে এবং শিক্ষার্থীরা শৃঙ্খলার সঙ্গে উঠছে, এটা আমাদের জন্য আনন্দদায়ক।’
ঢাবি উপাচার্য বলেন, ‘এই ক্যাম্পাস শিক্ষার্থীদের, শিক্ষার্থীরা চলে আসায় শিক্ষকদের মধ্যেও একটা প্রাণচাঞ্চল্য চলে এসেছে, প্রশাসনের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য আসছে। সবার মনে আনন্দ, এটা সবচেয়ে বড় দিক। এত দিন যে স্থবিরতা ছিল, সেটার অবসান ঘটেছে এবং তা অব্যাহত থাকবে। যত দ্রুত সম্ভব সব শিক্ষার্থীদের আমরা হলে নিয়ে আসতে পারি, সেটাই আমাদের লক্ষ্য। আজকের এই কর্মসূচি আমাদের পরবর্তী কর্মসূচি ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে অনুপ্রেরণা যোগাবে।’
দু-একদিনের মধ্যেই অন্যান্য বর্ষের শিক্ষার্থীদের হলে তোলার সিদ্ধান্ত হবে উল্লেখ করে ঢাবি উপাচার্য বলেন, ‘দুটি সূচক আমাদের সামনে আছে, যেগুলো শিক্ষার্থীদের আনার অনুকূলে যায়। একটি হলো—সংক্রমণ হার সেটি একদমই নিচের দিকে। আরেকটি হলো—শিক্ষার্থীদের টিকা কার্যক্রমের আওতায় নিয়ে আসার হার, সেটিও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ দুটি আশাব্যঞ্জক সূচক বিবেচনায় নিয়েই দু-একদিনের মধ্যেই আমরা সিদ্ধান্ত নেব, যেন সব শিক্ষার্থী নিয়েই আমরা সব ধরনের স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরে যেতে পারি।’