একাদশে অনলাইনে ভর্তি, শিক্ষার্থীরা বিপাকে
একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির নতুন নীতিমালা অনুযায়ী ভর্তিচ্ছুদের কোনো পরীক্ষা দিতে হবে না। এসএসসির ফলাফলের ভিত্তিতে করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডই ঠিক করে দেবে কে কোন কলেজে ভর্তির সুযোগ পাবে। এ জন্য ভর্তিচ্ছুদের অনলাইনে বা এসএমএসের মাধ্যমে পছন্দের পাঁচটি কলেজের তালিকা দিয়ে আবেদন করতে হচ্ছে। একটি বিশেষ সফটওয়্যারের মাধ্যমে এসব আবেদন সন্নিবেশিত করে ফলাফল আকারে প্রকাশ করা হবে। মূলত কোচিং ও ভর্তি-বাণিজ্য রোধ করার জন্যই নতুন এ পদ্ধতি নেওয়া হয়।
তবে নতুন এই নীতিমালা অনুযায়ী অনলাইনে ভর্তির আবেদন করতে গিয়ে বিপাকে পড়ছেন ভর্তিচ্ছু অনেক শিক্ষার্থী। এই প্রক্রিয়ার সবচেয়ে বড় ত্রুটি হলো, অন্যের রোল নম্বর ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর দিয়ে যে কেউ তার অগোচরে চাইলেই আবেদন করতে পারবে। চাইলেই কেউ অনলাইনে অন্যের আবেদন পূরণ করে শিক্ষার্থীদের বিপদে ফেলতে পারে।
কারিগরি এ ত্রুটির কথা স্বীকার করে শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ ভর্তিচ্ছুদের বেশি উদ্বিগ্ন না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। রাজধানীর তিনটি কলেজ সরকারের এ প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে আদালতের দারস্থ হয়ে নিজেদের মতো ভর্তি কার্যক্রম চালাচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন এ ভর্তি প্রক্রিয়ায় সুবিধা-অসুবিধা দুটোই রয়েছে।
এ বিষয়ে ভর্তিচ্ছু এক শিক্ষার্থী বলল, ‘আমার পেছনে যে ব্যক্তিটা আছে ওর সাথে যদি আমার কোনো প্রকার সমস্যা থাকে, যেমন ও আমার রোলটা কিন্তু জানে। সে কিন্তু আমার রোল নিয়ে চাইলে যে কোনো কিছুই করতে পারে।’
আরেক শিক্ষার্থী বলল, ‘আমি অনলাইনে অ্যাপ্লাই করছি একটা দোকান থেকে। ওখানে যায়া আমি অ্যাপ্লাই করছি কিন্তু আমি আমার ওটিপিটা, ওটিপি (ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড) একটা কোড নম্বর, কে যেন দুইবার ক্লিক করে নষ্ট করে দিসে। এখন তো আমি আমার কলেজগুলো চেঞ্জই করতে পারছি না।’
এ বিষয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আবু বকর সিদ্দিক জানান, এ বিষয়ে অনেক অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে এবং ভুক্তভোগীদের সমাধান দেওয়ার চেষ্টা চলছে।
তিনি বলেন, ‘এ বিষয়টি আমরা অবগত আছি। এটি বুয়েটকে বলে দিয়েছি। বুয়েট সেভাবে ব্যবস্থা নিচ্ছেন। অনলাইনে একটা কমপ্লেইন বক্স আছে। সেখানে আবেদন করলে পরে তার চয়েজ ক্রমটা সে জানাবে এবং সে অনুযায়ী তার আগের যে চয়েজ ক্রম ছিল সেটা বাতিল হয়ে নতুনভাবে তার ইচ্ছা অনুযায়ী একটি চয়েজ ক্রম করে দেবে বা কোনো কোনো ছাত্রছাত্রী যারা সরাসরি আবেদনপত্র নিয়ে এসেছে, তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা সেই ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
নতুন এ ভর্তি প্রক্রিয়ায় কলেজগুলোর এখন আর আগের মতো শিক্ষার্থী বেছে নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে না।
রাজধানীর বদরুন্নেছা সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মাহবুবা রহমান এর ভালো-মন্দ দুটোই দেখছেন। তিনি বললেন, ‘একটাই মাত্র ভয় যে ছাত্রছাত্রীরা হয়তো তাদের পছন্দমতো জায়গাটি পাবে না। এটাই আমরা আশঙ্কা করছি।’
তবে সরকারি এ নীতিমালা মেনে শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে চায়নি রাজধানীর তিনটি খ্রিস্টান মিশনারি প্রতিষ্ঠান। নটর ডেম কলেজ, হলিক্রস ও সেন্ট জোসেফ স্কুল অ্যান্ড কলেজ উচ্চ আদালতের আদেশ নিয়ে তাদের সনাতন পদ্ধতি অর্থাৎ ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমেই শিক্ষার্থী ভর্তি করাবে।
নটর ডেম কলেজের অধ্যক্ষ বলেন, ‘জিপিএ ৫ তো পাইতে পারে অনেকভাবে। সত্যিকারের মেধা যেখানে গ্রামে সুবিধাবঞ্চিত তাদের যদি একটু ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ দিই তারাও তাদের মেধাটা কিন্তু এখানে যাচাইয়ের সুযোগ পায়। তো এই সমস্ত কারণেই আমরা বলি যে যদি আমরা মানসম্মত শিক্ষা দিতে চাই, এই প্রতিষ্ঠানগুলোর মান মর্যাদা ধরে রাখতে চাই, দেশের জন্য ভালো যোগ্য নেতা বানাতে চাই তাহলে এই ভর্তি প্রক্রিয়াটা আমাদের একটা উল্লেখযোগ্য বিষয়।’
নটর ডেম কলেজের অধ্যক্ষ আরো বলেন, ‘কোচিং সেন্টারের বাণিজ্য বন্ধ করতে একটি আইনই যথেষ্ট। এর জন্য নতুন নতুন নীতিমালার প্রয়োজন নেই।’