আমরা হঠকারী সিদ্ধান্ত নিইনি : সিইসি
গাইবান্ধা-৫ (সাঘাটা-ফুলছড়ি) আসনের উপনির্বাচন বন্ধ ঘোষণার পরদিন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, ‘আমরা হঠকারী কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিনি। খুব নিবিড়ভাবে প্রত্যক্ষ করে তারপর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সিইসি একথা বলেন।
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘আমরা যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি, সেটা কমিশন করেছে। আমি এককভাবে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিনি। সিইসি এককভাবে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন না, করতে পারেন না।’
সিইসি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের অফিসে বসে কীভাবে সব দেখলাম, এমন প্রশ্ন অনেকে করছেন। সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে আমরা সংযোগ স্থাপন করেছি। নির্বাচন কীভাবে হচ্ছে, সেটা খুব নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ আছে। পর্যবেক্ষণ কক্ষে বসে আমরা ভোট কীভাবে হয়েছে, তা দেখেছি।’
‘আমাদের সঙ্গে সাংবাদিকরাও দেখেছেন’ উল্লেখ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘এটা যে এভাবে করা যায়, সে বিষয়টি হয়তো অনেকের জানা নেই।’
এরপর সিইসি লিখিত বক্তব্য পড়তে শুরু করেন। লিখিত বক্তব্যে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘আপনারা সবাই জানেন, গতকাল বুধবার গাইবান্ধা-৫ আসনের একাদশ জাতীয় সংসদের উপনির্বাচন ছিল। এ নির্বাচনটি যাতে অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়, সেজন্য নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে করণীয় সব আয়োজন সম্পন্ন করা হয়েছিল। নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানা গত ২৮ সেপ্টেম্বর গাইবান্ধা সার্কিট হাউজে উপস্থিত থেকে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আইনশৃঙ্খলাবিষয়ক সভায় বক্তব্য রাখেন। ওই সভায় জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর স্থানীয় প্রধান, সব প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীসহ সংশ্লিষ্ট অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। পরবর্তীতে আমি নিজে ও কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানা জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, রিটার্নিং অফিসারের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছি। যাতে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন করা সম্ভব হয়।’
সিইসি বলেন, ‘আমরা দায়িত্বগ্রহণের পর যতগুলো নির্বাচন করেছি সবগুলো নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করে অত্যন্ত সফলভাবে সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছি। নির্বাচনের ক্ষেত্রে সিসিটিভি স্থাপনের ফলে অপরাধ একেবারেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছিল। তারই আলোকে এবং গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনের গুরুত্বের কারণে এখানেও ইভিএমে ভোটগ্রহণ ও প্রতিটি ভোট কেন্দ্রের প্রতিটি ভোটকক্ষে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়।’
সিইসি আরও বলেন, ‘গতকাল সকাল ৮টায় যথারীতি ভোট শুরু হয়। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন, আগারগাঁওয়ে স্থাপিত কন্ট্রোল রুমে আমিসহ অন্যান্য কমিশনার, দায়িত্ব পালনকারী ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তারা ও কারিগরি সহায়তাকারী ব্যক্তিরা এবং পরে মিডিয়ার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।’
কাজী হাবিবুল আউয়াল আরও বলেন, ‘ভোট শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যে আমরা তিনটি কেন্দ্রে দেখতে পাই—ভোটগ্রহণের কক্ষে প্রার্থীর পুরুষ এজেন্টরা বুকে ও পিঠে প্রার্থীর মার্কার একই রকম গেঞ্জি পরে আছেন এবং মহিলা এজেন্টরা একই রকম শাড়ি পরা, যা আচরণ বিধিমালার ১০ (ঙ) ভঙ্গের মধ্যে পড়ে। এই সব এজেন্টরা ছাড়া আরও অনেক অবৈধ লোকজন ভোটকক্ষে অবস্থান করে ভোটারদেরকে ভোট দিতে প্রভাবিত করছেন। ভোটাদের কন্টোল ইউনিটে আঙুলের ছাপ দেওয়ার পরপরই এজেন্টরা গোপনকক্ষে প্রবেশ করে ভোটারকে ভোটদানের সুযোগ না দিয়ে নিজেই ভোট দিয়ে দিচ্ছেন। ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের মধ্যে কেউ কেউ একই কাজ করছেন।’
সিইসি আরও বলেন, ‘কমিশন থেকে ফোন দিয়ে প্রিসাইডিং অফিসারদের ভোটকক্ষের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু, ভোট কক্ষের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার কোন কার্যকরি পদক্ষেপ তাদের গ্রহণ করতে দেখা যায়নি। তখন কমিশন থেকে ওই তিনটি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিতের নির্দেশনা প্রদান করা হয়। এরপর একে একে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত ৫০টি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে দেখা হয়। প্রতিটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণের অবস্থা একই রকম দেখা যায়। ইতোমধ্যে রিটার্নিং অফিসার একটি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ বন্ধ করে দেন।’
‘আমি ও বেগম রাশেদা সুলতানা রিটার্নিং অফিসার, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলি। কিন্তু, পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। অন্যান্য কেন্দ্রগুলোতেও সিসিটিভি দেখার সময় পেলে দেখা যেত যে, ওই কেন্দ্রগুলোতেও একই অবস্থা। তাই, কমিশন মনে করে যে, এ ধরনের একটি আইনবহির্ভূত ভোগ প্রদান বা গ্রহণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তাই কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, দুপুর আড়াইটায় গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচন সম্পূর্ণভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়।’
সিইসি বলেন, ‘অনিয়মগুলো তদন্ত করে আগামী সাতদিনের মধ্যে একটি প্রতিবেদন দিতে একটি কমিটি করা হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পরে গাইবান্ধা-৫ আসনের পরবর্তী নির্বাচন বিষয়ে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।’