ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ছুটছেন গাজীপুর সিটির প্রার্থীরা
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের (গাসিক) ভোট যতই এগিয়ে আসছে, প্রার্থীরা বিজয়ী হতে ততই নিচ্ছেন নানা পরিকল্পনা। ইতোমধ্যে ছুটতে শুরু করেছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। এক মুহূর্ত সময় নষ্টের ফুরসত নেই তাদের। নাওয়া-খাওয়াও যেন ভুলতে বসেছেন কর্মী-সমর্থকরা। নিজ প্রার্থীর সমর্থনে পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও দল বেঁধে যাচ্ছেন ভোটারদের বাড়িবাড়ি, চালাচ্ছেন নির্বাচনী প্রচারণা।
এবারের নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীদের বেশ কয়েকজন প্রার্থী তরুণ ও নবীন। ফলে নবীন ও প্রবীণ প্রার্থীদের মধ্যকার এ ভোটযুদ্ধ ইতোমধ্যেই জমে উঠেছে। বিজয় ছিনিয়ে আনতে মরিয়া হয়ে গণসংযোগ ও প্রচারের মাধ্যমে নির্বাচনী মাঠকে সরগরম করে তুলেছেন প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকরা। ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে নাগরিক সেবা ও উন্নয়নের নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন তারা। এদিকে, নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীদের অনেকেই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলছেন।
এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে মোট ৯ জন প্রার্থী থাকলেও মূল লড়াই হবে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর সঙ্গে বলে মনে করছেন নগরবাসী। নৌকা প্রতীকের প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি। তিনি সাবেক টঙ্গী পৌরসভার মেয়র ও চেয়ারম্যান হিসেবে তিনবার নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগের এ মেয়র প্রার্থী নগরীর উন্নয়ন ও নাগরিক সেবার জন্য তার ১৮ বছরের অভিজ্ঞতা এবং প্রযুক্তিকে প্রধান্য দিয়ে ভোটের প্রচারণা চালাচ্ছেন।
টেবিল ঘড়ি প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগের সাবেক মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন। টেবিল ঘড়ি প্রতীকের এই স্বতন্ত্র প্রার্থী নগরীর উন্নয়নে তার ছেলের অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, মাদকমুক্ত সমাজ এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিকে অগ্রাধিকার দিয়ে একটি পরিকল্পিত নগর উপহার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন।
এদিকে, নির্বাচনে এ দুই প্রার্থীর লড়াইয়ের সুযোগ নিয়ে বিজয়ী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন জাতীয় পার্টি ও ইসলামী আন্দোলন’র প্রার্থীসহ স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বিএনপি নেতার ছেলে শাহনূর ইসলাম রনি।
লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন, হাতপাখা প্রতীক নিয়ে ইসলামী আন্দোলন-বাংলাদেশের গাজী আতাউর রহমান, গোলাপ ফুল প্রতীক নিয়ে জাকের পার্টি মনোনীত প্রার্থী মো. রাজু আহাম্মেদ, মাছ প্রতীক নিয়ে গণফ্রন্টের আতিকুল ইসলাম, স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি নেতা নুরুল ইসলাম সরকারের ছেলে সরকার শাহনূর ইসলাম রনি হাতি এবং ঘোড়া প্রতীক নিয়ে হারুন অর রশীদ রয়েছেন নির্বাচনী মাঠে।
মেয়র প্রার্থীদের গণসংযোগ
আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লা খান : আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লা খান (নৌকা প্রতীক) শনিবার বিকেলে মহানগরীর ১ থেকে ৬ নং ওয়ার্ডে এবং কাশিমপুর ও কোনাবাড়ি থানার সুরাবাড়ি, সুলতান মার্কেট, ভবানিপুর বটতলা মাঠ, পানিশাইল তিন রাস্তার মোড়, হাতীমারা ও কাশিমপুর এলাকায় গণসংযোগ করেন। এসময় তিনি একাধিক পথসভায় বক্তব্য রাখেন। এর আগে তিনি টঙ্গীর বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ ও বৈঠক করেন। এসব অনুষ্ঠানে দলের নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মচারী, মসজিদের ইমাম এবং সাধারণ ভোটাররা ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে যোগ দেন।
পথসভায় আজমত উল্লা খান বলেন, ‘আমি কাজ পছন্দ করি। বেকার যুবকদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে একটি স্বচ্ছল সমাজ ও স্বচ্ছ সিটি করপোরেশন গঠন করতে চাই। আমি নির্বাচিত হলে নগরীর উন্নয়ন, মাদকমুক্ত সমাজকে অগ্রাধিকার দেব। আপনারা আমাকে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করুন, আমি আপনাদের একটি পরিকল্পিত ও সুন্দর নগর উপহার দেব।’
স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন : টেবিল ঘড়ি প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাবেক মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন। সাপ্তাহিক ছুটির দিন শনিবার ছেলে জাহাঙ্গীরকে সঙ্গে নিয়ে তিনি নগরীর টঙ্গী এলাকা হতে গণসংযোগ শুরু করেন। টঙ্গীর দুটি থানা এলাকা ঘুরে তিনি পূবাইল ও সদর থানায় এলাকায় গণসংযোগ করেন। তিনি কর্মীসমর্থকদের নিয়ে বাজার, মার্কেট, শিল্প প্রতিষ্ঠানসহ ভোটারদের ঘরে ঘরে গিয়ে ভোট প্রার্থনা করেন। এসময় মা ও ছেলে একাধিক পথসভায় বক্তব্য দেন।
জাতীয় পার্টির প্রার্থী : জাতীয় পার্টি মনোনীত মেয়র প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন (লাঙল প্রতীক) শনিবার মহানগরীর সদর থানার জয়দেবপুর, চতর, শিমুলতলী, মারিয়ালী, নাওভাঙ্গা, লক্ষীপুরা ও ধীরাশ্রম এলাকায় দিনভর কর্মী সমর্থকদের নিয়ে গণসংযোগ করেন। এসময় তিনি একাধিক পথসভায় বক্তব্য দেন।
স্বতন্ত্র প্রার্থী সরকার শাহনূর ইসলাম রনি : হাতি প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী সরকার শাহনূর ইসলাম রনি এদিন সকাল হতে মাজুখান, করমতলা, হারবাইদ, বিন্দান, মীরের বাজার, পূবাইল বাজার, ভাদুন, মেঘডুবি, ইছালি, নন্দিবাড়ী, কলের বাজার, হায়দরাবাদ এলাকায় গণসংযোগ করেন। বিএনপি নেতা নুরুল ইসলাম সরকারের ছেলে সরকার শাহনূর ইসলাম বিকেলে নগরীর খরতৈল, সাতাইশ, গুটিয়া, সাতাইশ চৌরাস্তা, তিলার গাতি, শিংবাড়ি, মুদাফা, দেওড়া এলাকায় গণসংযোগ ও পথসভা করেন।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ’র প্রার্থী : ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত মেয়র প্রার্থী গাজী আতাউর রহমান (হাত পাখা) কর্মী সমর্থকদের নিয়ে নগরীর কাশিমপুর থানার ১ থেকে ৬ নং ওয়ার্ডে গণসংযোগ করেছেন। এসময় তিনি একাধিক পথসভায় বক্তব্য রাখেন। তিনি নগরীর বিভিন্ন সমস্যা দূর করে নগরবাসীর জীবনমান উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দেন।
এদিকে বসে নেই এ নির্বাচনে অংশ নেওয়া কাউন্সিলর প্রার্থীরাও। নিজেদের কর্মী সমর্থকদের নিয়ে তারাও গণসংযোগ ও পথসভা এবং উঠোন বৈঠক করে দিনরাত নির্বাচনী প্রচার চালিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।
জেলা নির্বাচন অফিসার ও গাসিক নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং অফিসার এ এইচ এম কামরুল হাসান জানান, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের এবারের নির্বাচন আগামী ২৫ মে সকাল ৮টা হতে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ইভিএমের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
এ নির্বাচনে সর্বশেষ হালনাগাদকৃত ভোটার সংখ্যা ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে পুরুষ ভোটার পাঁচ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন, নারী ভোটার পাঁচ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন এবং হিজড়া ভোটার সংখ্যা ১৮ জন। নির্বাচনে ভোট গ্রহণের জন্য মোট ৪৮০টি ভোট কেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে মোট ভোট কক্ষ তিন হাজার ৪৯৭টি, এরমধ্যে ৪৯১টি অস্থায়ী ভোটকক্ষ থাকবে। এ সিটি করপোরেশনে মোট সাধারণ ওয়ার্ডের সংখ্যা ৫৭টি এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সংখ্যা ১৯টি।