বিএনপির ব্যাপারে ইসি সচিবের ‘নো কমেন্ট’
আগামী চার নভেম্বর নির্বাচন কমিশন তাদের নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের ব্যাপারে সব দলকে অবহিত করবে ইসি। সেই আমন্ত্রণে বিএনপির পক্ষ থেকে কেউ উপস্থিত থাকবে কি না, সে ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘নো কমেন্ট’।
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সফলভাবে সম্পন্ন করতে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে আজ বুধবার বৈঠক করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বৈঠক শেষে ইসি সচিব এ কথা বলেন।
মো. জাহাংগীর আলম বলেন, ‘আমি আপনাদের বিনীতভাবে জানাতে চাই ইসি সংলাপের আয়োজন করেনি। তবে, নিবন্ধিত যে রাজনৈতিক দলগুলো রয়েছে, সেই পার্টি থেকে দুই জন করে মনোনীত ব্যক্তিকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সভাপতি অথবা সাধারণ সম্পাদক অথবা তাদের মনোনীত দুজন প্রতিনিধিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু করতে কমিশন যে সব আয়োজন করছে সেই বিষয়ে অবহিতকরণ করা হবে।’
৪৪টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মধ্য বিএনপিও আছে। কিন্তু, বর্তমানে রাজনৈতিক যে প্রেক্ষাপট, কেউ পলাতক কেউ জেলে। বিএনপি যদি বলে তাদের কোন প্রতিনিধি নাই, তাহলে কী করা হবে। বিএনপি যদি সময় চায় তখন কী করবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে ইসি মো. জাহাংগীর আলম বলেন, ‘নো কমেন্ট’।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কার কী দায়িত্ব, তা নির্ধারণ করতে আজ বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে একটি বৈঠকের আয়োজন করে ইসি। এ বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোর নির্বাহী পরিচালক বা উপযুক্ত কর্মকর্তা, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ, অর্থ ও নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রতিনিধি ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের (সমন্বয় ও সংস্কার) সচিবসহ বিভিন্ন বিভাগের প্রধানসহ ২৯ জন কর্মকর্তা বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিত্বে বুধবার বৈঠকটি নির্বাচন ভবনের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠক শেষে মো. জাহাংগীর আলম বলেন, ভোট সুষ্ঠু করতে ইসি যখন যে সহায়তা চাইবে তখন সেই সহায়তা দিতে সব মন্ত্রণালয় ও দপ্তর-অধিদপ্তর প্রস্তুত আছে। এই বিষয়ে ইসিকে আশ্বস্ত করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
মো. জাহাংগীর আলম বলেন, ‘সবাই আগে থেকেই অবগত আছেন, ইসি দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন সংবিধানের যে সময়সীমা আছে, সেই সময়ে আয়োজনে বদ্ধ পরিকর। তাই এই নির্বাচনের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিভিন্ন দপ্তর, বিভাগ ও মন্ত্রণালয় এদের প্রধানদের নিয়ে পর্যায়ক্রমে আমরা সভা করছি। গত পরশু দিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানদের সঙ্গে মিটিং করেছি। আজকে সিভিল জনপ্রশাসনের সিনিয়র সচিব, মহাপরিচালক, দপ্তর প্রধান ও প্রধান প্রকৌশলীদের সঙ্গে সভা করেছি। বৈঠকের মূল আলোচ্য বিষয় ছিল আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু করা। এ জন্য স্ব স্ব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের যা কিছু করণীয় আছে তা অবহিত করা হয়। নতুন যে বিধি বিধান রয়েছে তার আলোকে কী করণীয়, তাদের জানিয়ে দেওয়া হয়।’
ইসি সচিব বলেন, ‘আজকের সভায় জনপ্রশাসন ও জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিবসহ বিভিন্ন দপ্তরের ২৯ জন কর্মকর্তারা তাদের বক্তব্য রেখেছেন। নির্বাচনে যা যা করণীয় তারা নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা মোতাবেক বাস্তবায়ন করবেন বলে কমিশনকে আশস্ত করেছেন। নির্বাচন কমিশনও তাদের কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। যাতে করে নির্বাচন পিচফুলি সুন্দরভাবে আয়োজন হয়।’
মো. জাহাংগীর আলম আরও বলেন, ‘স্বরাষ্ট্র, অর্থ, তথ্য, শিক্ষা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা, নৌ-পরিবহণ, সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ, মাধ্যমিক শিক্ষা, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষার কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। যার যেটুকু করণীয় সেই বিষয়টুকু স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে। যাতে করে নির্বাচনের সময় কোথাও কোন সমস্যার সৃষ্টি না হয়। এই গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। কমিশন তাদের বক্তব্য ধৈর্য সহকারে শুনেছেন। নির্বাচন কমিশন যে সহায়তা প্রত্যাশা করেন; তারা তাদের সেই সহায়তা দিতে প্রস্তুত রয়েছে।’
ইসি সচিব আরও বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট কোন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়নি। আমরা কিছু গাইড লাইন দেখিয়েছিলাম। সেই আলোকে সবগুলো বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’
পোস্টাল ব্যালটে ভোট হবে কি, এমন প্রশ্নের জবাবে মো. জাহাংগীর আলম বলেন, ‘আইনের আলোকে শুধু এবার না সব সময় ভোট দেওয়া যায়, এবারও যাবে।’
ঋণ খেলাপি প্রসঙ্গে ইসি সচিব বলেন, ‘আইন যে সংশোধন হয়েছে নমিনেশন জমা দেওয়ার সর্বশেষ যে তারিখ আছে ওই দিনের আগের দিন পর্যন্ত যারা ঋণ খেলাপি, তারা টাকা পয়সা জমা দেবেন। মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের সময় তারা যাতে রিটার্নিং অফিসারের কাছে হালনাগাদ তথ্য জমা দিতে পারেন।’
দুর্গম এলাকায় ব্যালট পেপার পাঠানোর বিষয়ে কোন আলোচনা হয়নি জানিয়ে জাহাংগীর আলম বলেন, ‘আমি অনেক আগেই বলেছি নির্বাচন কমিশনের বার্তা একটি সুন্দর ও সুষ্ঠু নির্বাচন করা। এর জন্য সংবিধান যাদের উপরে যে দায়িত্ব দিয়েছে সেই দায়িত্ব তারা যাতে যথাযথভাবে পালন করবেন।’