দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকায় প্রার্থিতা হারালেন যারা
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রার্থীদের আপিল আবেদনের শুনানি নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আজ শুক্রবার (১৫ ডিসেম্বর) ষষ্ঠ ও শেষ দিনের শুনানি চলছে। এদিন দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দুজনসহ মোট তিনজনের প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন কমিশন এ তিনজনের মনোননয়পত্র বাতিল করে রিটার্নিং কর্মকর্তার দেওয়া সিদ্ধান্ত বহাল রাখেন।
আজ আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বরিশাল-৪ আসনের শাম্মী আহমেদ, ফরিদপুর-৩ আসনের শামীম হক ও স্বতন্ত্র প্রার্থী বরিশাল-৫ আসনের সাদিক আব্দুল্লাহর মনোনয়নপত্র আপিল শুনানিতে বাতিল করা হয়েছে।
ফরিদপুর-৩ আসানের স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল কাদের আজাদ (এ কে আজাদ) একই আসনের নৌকার প্রার্থী শামীম হকের বিরুদ্ধে আপিল করেছিলেন। অন্যদিকে এ কে আজাদের দ্বৈত নাগরিকত্বের অভিযোগ এনে আপিল করেছিলেন শামীম হক। কিন্তু, কমিশন ওই আপিল খারিজ করে দেন। ফলে, একে আজাদের বৈধ প্রার্থিতা বহালই থাকল।
শামীম হকের আপিলের পরিপ্রেক্ষিতে এ কে আজাদের দ্বৈত নাগরিকত্বের তথ্য দিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেয় ইসি। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দূতাবাসগুলোর মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহের জন্য বলেছিল সংস্থাটি।
শুনানি শেষে বের হয়ে এ কে আজাদের পক্ষের আইনজীবী বলেন, ‘ফরিদপুর-৩ আসনের আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী শামীম হকের আইনজীবী একটি অভিযোগ দাখিল করেন যে, এ কে আজাদ আমেরিকার নাগরিক। আজ কমিশন শুনানিতে শামীম হকের আইনজীবীর কাছে জানতে চায়, তাদের সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ আছে কি না? জবাবে তারা বলেন, আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। পরে তথ্য প্রমাণ না থাকায় এ কে আজাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ খারিজ করে দেয় ইসি।’
অপরদিকে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া ফরিদপুর-৩ আসানের প্রার্থী শামীম হক হলনামায় তথ্য গোপন করায় তার মনোনয়ন বাতিল চেয়ে ইসিতে আপিল করেন একই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী এ কে আজাদ। মনোনয়নপত্রে তার দ্বৈত নাগরিকত্ব (নেদারল্যান্ডস) সংক্রান্ত তথ্য গোপন করেছেন মর্মে অভিযোগ করে মনোনয়নপত্র বাতিল চান স্বতন্ত্র এ প্রার্থী। ইসি আজাদের আপিলের পরিপ্রেক্ষিতে প্রার্থীর নেদারল্যান্ডসের দ্বৈত নাগরিকত্ব সম্পর্কে তথ্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ঢাকার নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের সহায়তায় সংগ্রহের জন্য নির্দেশনা দিয়েছিল। আওয়ামী লীগের এই প্রার্থীর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সত্য হওয়ায় আপিলে তার মনোনয়নপত্র বাতিল করেছে ইসি।
এদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরিশাল-৪ সংসদীয় আসনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শাম্মী আহমেদ মনোনয়নপত্রে তার দ্বৈত নাগরিকত্ব (অস্ট্রেলিয়া) সংক্রান্ত তথ্য গোপন করেছেন মর্মে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করে তার প্রার্থিতা বাতিল চেয়েছিলেন ওই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী পংকজ দেবনাথ। অভিযোগ পেয়ে রিটার্নিং অফিসার শাম্মী আহমেদের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে বাতিল করে।
রিটার্নিং কর্মকর্তার আদেশের বিরুদ্ধে শাম্মী আহমেদ নির্বাচন কমিশনে আপিল দায়ের করেন। নির্বাচন কমিশন বর্ণিত আপিলকারীর দ্বৈত নাগরিকত্ব সম্পর্কে তথ্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ঢাকার অস্ট্রেলিয়া দূতাবাসের সহায়তায় সংগ্রহের জন্য নির্দেশনা দিয়েছিল। সে পরিপ্রেক্ষিতেই দ্বৈত নাগরিকত্বের প্রমাণ পাওয়ায় কমিশন শাম্মী আহমেদের মনোনয়ন বাতিল করে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরিশাল-৫ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর মনোনয়নপত্র বাতিল চেয়ে আপিল করেন ওই আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জাহিদ ফারুক শামীম। সাদিকের বিরুদ্ধেও দ্বৈত নাগরিকত্বের অভিযোগ আনা হয়। পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীমের পক্ষে তার মনোনয়নপত্রের সমর্থনকারী কে বি এস আহমেদ নির্বাচন কমিশনে এ আবেদন করেন। আপিলে সাদিক আব্দুল্লাহকে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ভোটার হিসেবে উল্লেখ করে সেখানকার ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া তথ্যও যুক্ত করা হয়। নির্বাচন কমিশন আপিল শুনানি শেষে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাদিক আব্দুল্লাহর প্রার্থিতা বাতিল করে রায় দেন। তবে প্রার্থিতা ফিরে পেতে সাদিক আব্দুল্লাহ হাইকোর্টে আবেদন করবেন বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবী।