অপেরার সংগীত আর ব্রেকডান্সের মেলবন্ধন
অপেরার সংগীতের সঙ্গে ব্রেকডান্সের কোনো সম্পর্ক আছে কি? পোল্যান্ডের এক শিল্পীর এই দুই জগতই পছন্দের তারকা হিসেবে তিনি তরুণ প্রজন্মের মধ্যেও ক্লাসিকাল সংগীত সম্পর্কে আগ্রহ জাগিয়ে তুলছেন ইয়াকুপ ইয়ুসেফ অর্লিনস্কি অপেরা জগতের উঠতি তারকা। পোল্যান্ডের ৩২ বছর বয়সি এই ব্যক্তি নিজের কণ্ঠের অসাধারণ ‘ভোকাল রেঞ্জ' সফলভাবে রপ্ত করেছেন। আট বছর বয়সেই তিনি ওয়ারশ শহরে বালকদের এক কয়ারে গাইতে শুরু করেন। বড় হলে তিনি যে পেশাদার কাউন্টারটেনর হয়ে উঠবেন, তখন সেই ধারণাই ছিল না। স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে ইয়াকুপ বলেনস ‘‘প্রথম দিকে আমি জানতামই না, যে এটাকে ফালসেটো টেকনিক, অর্থাৎ কাউন্টারটেনার ভয়েস বলা হয়। আমি শুধু গান গাইতাম, বিভিন্ন সুর অনুশীলন করতাম। তখন আমি বোঝাতাম, পরীক্ষা করতাম, গ্রুপের অন্যদের কণ্ঠের সঙ্গে সুর মেলানোর চেষ্টা করতাম। পরে আমরা এক কর্মশালায় যোগ দিতে গেলে একজন শিক্ষক আমাকে বললেন, তুমি তাহলে কাউন্টারটেনর। প্রথমে মনে হয়েছিল, তিনি আমার মনে আঘাত দিতে চাইছেন। সেটা আবার কী! তারপর সব তথ্য পেলাম৷'' কিন্তু ইয়াকুপের একটা হবি বা শখও রয়েছে। সেটা হলো ব্রেকডান্স।
এমনকি অপেরার সঙ্গে ট্যুরে বের হলেও তিনি প্রায় প্রতিদিন অনুশীলন করেন। কিশোর বয়সে তিনি বন্ধুদের সঙ্গে পথের উপর নাচতেন। একই সঙ্গে অপেরার প্রতি ভালোবাসাও টের পাচ্ছিলেন। ইয়াকুপ বলেন, ‘‘আমি সেটা না লুকালেও প্র্যাকটিসে যেতাম না। বাকিদের বলতাম, দেখো আমি কাউন্টারটেনর। অর্থাৎ সেটা আমার মধ্যে কোথাও একটা ছিল। প্রথমদিকে আমার যেন দুটি জীবন ছিল। একদিকে অপেরা গায়ক, কাউন্টার টেনর – অন্যদিকে ড্যান্সার, ব্রেকার৷ তারপর দুটি সত্তারই মিলন ঘটলো৷'' একই সঙ্গে অপেরা ও ব্রেকডান্সিং-এর প্রতি ভালবাসার মধ্যে তিনি কোনো দ্বন্দ্ব দেখেন না। ইয়াকুপ ইয়ুসেফ অর্লিনস্কির মতে, ‘‘দুটির মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। আসলে কিন্তু আবার অনেক মিলও রয়েছে। আমি বেশ পরিপূর্ণ বোধ করি। কারণ গান গাইতে আমার খুব ভালো লাগে৷ সেটাই আমার দৈনন্দিন জীবনের পেশা। কিন্তু নাচ আমার আবেগের জায়গা, নাচতে খুবই ভালোবাসি৷। সংগীত, শরীরের সঞ্চালন, অ্যাক্রোব্যাটিক্স এবং মুক্তির স্বাদ৷ অনেকটা ধ্যানের মতো। কিছু মানুষ বসে পড়ে চোখ বন্ধ করতে ভালোবাসেন। আর আমাকে নাচতে হয়।''
বারোক যুগের অপেরার এই বিশেষজ্ঞ ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেক্ষাগৃহে নিজের প্রতিভা তুলে ধরে দর্শকদের মুগ্ধ করেন৷ এমনকি তরুণ দর্শকদের মধ্যেও অপেরা সংগীতের প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টি করেন তিনি। ইয়াকুপ বলেন, ‘‘তরুণ প্রজন্মকে আমাদের কনসার্টে আসতে দেখে সত্যি খুব ভালো লাগে। কারণ সেটা সত্যি আনন্দের জায়গা৷ তাছাড়া এনার্জি ও পরিবেশ একেবারে আলাদা। বলবো না আরও ভালো, তবে ভিন্ন ধরনের।'' এখনো পর্যন্ত অর্লিনস্কির সবচেয়ে বড় সাফল্য এসেছে শর্টস আর স্নিকার পরে। ২০১৭ সালে ফ্রান্সের দক্ষিণে এক্সঁ প্রোভঁসে এক সংগীত উৎসবে তাঁর পারফর্মেন্সের ভিডিও ইন্টারনেটে এক কোটিরও বেশি ভিউ পেয়েছে৷ ইয়াকুপ বলেন, ‘‘আমার মতে, সেটা একটা স্তরে ক্লাসিকাল জগতের আড়ষ্টতা ভেঙেছে৷ কারণ আমরা সুন্দর এক প্রাঙ্গণে ছিলাম। বাইরের তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রির মতো ছিল৷ সবাই গরমে কাহিল হয়ে পড়ছিল। ফ্রান্সের দক্ষিণে যেমনটা হয়, আমরা সবাই হালকা সুন্দর পোশাক পরে ছিলাম।'' ২০২৩ সালের প্রথমার্ধে ব্যস্ত এই অপেরা তারকা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, পোল্যান্ড, ফ্রান্স, স্পেন, পর্তুগাল ও জার্মানিতে সংগীত পরিবেশন করছেন। তবে তা সত্ত্বেও ব্রেক ডান্সিং-এর জন্যও কিছু সময় পাবেন বলে তিনি নিশ্চিত।