১৬ বছরে প্রেমের টানে মায়ামি থেকে মুম্বাই, তারপর...
টিনএজ ক্রাশ সালমান খানকে বিয়ে করার লক্ষ্যে ১৯৯১ সালে মাত্র ১৬ বছর বয়সে যুক্তরাষ্ট্রের মায়ামি থেকে ভারতের মুম্বাইয়ে যান সোমি আলি। এক বছর পর সালমানের সঙ্গে তাঁর শুধু সাক্ষাৎই হয়নি, ধীরে প্রেমে জড়ান। মধ্য-নব্বইয়ে বি-টাউনে সালমান-সোমির প্রেম ছিল আলোচনার কেন্দ্রে। কিন্তু সেই সম্পর্কের অবসান হয় ১৯৯৯ সালে। এরপর সোমি ফিরে যান নিজ দেশ যুক্তরাষ্ট্রে।
সম্প্রতি ভারতীয় গণমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার সঙ্গে একান্ত আলাপে সেই সব দিনের কথা বলেছেন সোমি আলি। বলেছেন, বহু বছর সালমানের সঙ্গে তাঁর কথা হয় না।
যুক্তরাষ্ট্রে ফেরার পর সোমি আলি পড়াশোনা শুরু করেন। কয়েক বছর পর একটি সংগঠন গড়ে তোলেন, নাম ‘নো মোর টিয়ার্স’। মানসিক ও শারীরিকভাবে নিগৃহীতদের সাহায্য করে সংগঠনটি। এক সাক্ষাৎকারে সোমি আলি বলেছিলেন, ঐশ্বরিয়া রাইয়ের কারণে সালমানের সঙ্গে তাঁর বিচ্ছেদ হয়েছিল।
৩০ বছর আগে মুম্বাইয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে সোমি আলি বলেন, “১৯৯১ সালে আমার বয়স ছিল ১৬ বছর। আমি ‘ম্যায়নে পিয়ার কিয়া’ দেখেছিলাম এবং ‘এই মানুষটিকে বিয়ে করব!’ ভেবে গিয়েছিলাম। আমি মাকে বলেছিলাম, কালই ভারতে যাচ্ছি। তিনি, অবশ্যই, আমাকে ঘরে পাঠিয়ে দিলেন; কিন্তু আমি অনুনয় করছিলাম, আমাকে ভারতে যেতে হবে এবং এই মানুষটিকে বিয়ে করতে হবে—সালমান খান। ওই রাতে আমি স্বপ্ন দেখেছিলাম, সালমানকে বিয়ে করতে যেতে হবে। কারণ, সে আমার ত্রাতা হতে চলেছে। তার মন গলল না, বাবাকে ডাকলাম। কিন্তু কেন আমি ভারতে যেতে চাইছি, তা অবশ্য বলিনি।”
সোমি আলি যুক্ত করেন, “আমি তাকে বলেছিলাম, মুম্বাইয়ে আমার আত্মীয়-স্বজন আছে এবং আমি ওদের সঙ্গে দেখা করতে চাই। এ-ও বলেছিলাম, তাজমহল দেখা আমার স্বপ্ন, যেখানে আমাকে যেতেই হবে। আমি এখনো সেটি দেখিনি (হেসে)। আমি পাকিস্তানে জন্মেছি এবং মায়ামিতে যাওয়ার আগে সেখানে কয়েক বছর ছিলাম। তো, আমি সেখানে এক সপ্তাহ কাটালাম এবং এরপর ভারতে গেলাম, পাঁচতারকা হোটেলে উঠলাম। মানুষ আমাকে ‘উঠতি অভিনেতা’ বলে মজা করত, যে আবার অভিজাত হোটেলে থাকে।”
সালমান খানের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর মায়ামিতে চলে যান সোমি আলি। দীর্ঘ সাক্ষাৎকারের এক পর্যায়ে তিনি সে প্রসঙ্গে বলেন, ‘১৯৯৯ সালের ডিসেম্বরে আমি যুক্তরাষ্ট্রে ফেরার সিদ্ধান্ত নিই। প্রাথমিক কারণ ছিল, সম্পর্ক খুব খারাপ অবস্থায় পৌঁছেছিল। মনে রাখা দরকার, আমি নবম গ্রেড পর্যন্ত পড়েছিলাম এবং আর পড়াশোনা ছিল না। ফিরেই পড়াশোনা শেষ করার আকাঙ্ক্ষা ছিল। আমি মনে করি, সেটা আমার সেরা সিদ্ধান্ত ছিল। কারণ, যদি না ফিরতাম, আমার সংগঠন থেকে হাজারও মানুষ উপকৃত হতো না। মায়ামিতে ফেরার পর আমি মনোবিজ্ঞানে ব্যাচেলর ডিগ্রি সম্পন্ন করলাম। ভিকটিম অ্যাডভোকেট হিসেবে আমার সনদ আছে। তো, যারা নিগ্রহের শিকার হয়েছে, তাদের প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করলাম। সম্প্রচার সাংবাদিকতায় আমার মাস্টার্স ডিগ্রি রয়েছে।’
সালমান খানেরও সংগঠন রয়েছে, সেটিও মানুষকে নানাভাবে সাহায্য করে। সালমানের সঙ্গে যোগাযোগ আছে? এমন প্রশ্নের জবাবে সোমি আলি বলেন, ‘না, বহু বছর সালমানের সঙ্গে কথা হয় না এবং আমি মনে করি, অতীতকে এড়ানোর এটাই সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা। মানুষ আমাদের জীবনে আসে, আমরা তাদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখি—কী করা উচিত আর কী উচিত নয়। এবং একটা সময় আসে, আপনাকে এগিয়ে যেতে হয়। যা হোক, আমি তার ফাউন্ডেশনকে সম্মান করি এবং আমি শুনেছি, ওরা অসাধারণ কাজ করে। আমি ওর মা সালমা আন্টির সঙ্গে দেখা করেছিলাম, যিনি এই পৃথিবীতে আমার অন্যতম প্রিয়, দুই বছর আগে যখন উনি মায়ামিতে এসেছিলেন। উনার দেখা পাওয়াটা সত্যিই দারুণ ছিল।’
মুম্বাইকে মিস করেন? জবাবে সোমি আলি জানান, তিনি পানি পুরি ও পাও ভাজি মিস করেন। ঘরে যে পাঁচজন মানুষ তাঁকে সাহায্য করতেন, তাঁদের মিস করেন। এ ছাড়া অনেকের কথা মনে পড়ে তাঁর। এখন সোমির বয়স ৪০ হয়েছে। সেই ষোড়শী মেয়েটি আর নেই। আজও ভারতকে ভালোবাসেন আর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, কখনো ভারতে গেলে তিনি নিশ্চয়ই তাজমহল দেখতে যাবেন।
সেই ১৬ বছর বয়সে প্রেমের দেখা পেয়েছিলেন সোমি আলি। আর প্রেমের সন্ধান মেলেনি? উত্তরে হেসে সোমি বলেন, ‘আমি আমার সংগঠনের সঙ্গে সংসার করে সুখী আছি। যদি আপনি প্রেমের সন্ধান করেন, তবে সেটি ধরা দেবে না। এখন আমি সন্তানও চাই না, কিন্তু যখন ভারতে ছিলাম, চাইতাম। তখন আমি চাইতাম, বিয়ে করব, পাঁচ সন্তান হবে; কিন্তু এখন এ চল্লিশে এসে আর চাই না। যদি ভালোবাসা আসে এবং আমাদের মানসিকতা একই হয়, তবে নিশ্চয়ই এগোব, কিন্তু এমন মানুষের দেখা আমি এখনো পাইনি।’