১৭ লাখ টাকার সোনার গয়না, জানুন বাপ্পির কম জানা কথা
ডিসকো কিং খ্যাত উপমহাদেশের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী, সুরকার ও সংগীত পরিচালক বাপ্পি লাহিড়ি ভারতের মুম্বাইয়ের জুহুর ক্রিটিকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। মাত্র ৬৯ বছরে থেমে গেছে তাঁর সুর।
লতা মঙ্গেশকর ও সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের পর চলতি মাসে ভারতীয় উপমহাদেশের সংগীত জগতের আরও এক গুণীজনের মৃত্যু হলো। হিন্দি চলচ্চিত্র অঙ্গনে সংগীতের দশা ও দিশা দুটোই বদলে গিয়েছিলেন এই বাঙালি সংগীতশিল্পী। ডিসকো সংগীতের অবিসংবাদিত রাজা ছিলেন সবার প্রিয় বাপ্পিদা। তাঁর পোশাক, শরীরজুড়ে সোনার গয়না, ফ্যাশন সেন্স নিয়েও কম আলোচনা হতো না। সদা হাস্যোজ্জ্বল মানুষ ছিলেন। যে কোনও অনুষ্ঠানে গেলে একেবারে জমিয়ে দিতেন।
হিন্দুস্তান টাইমসের খবর, বাপ্পি লাহিড়ির জীবন রীতিমতো রঙিন। সেই রঙিন ঘটনাগুলোর অনেকই কম জানা। জন্মসূত্রে বাপ্পি লাহিড়ির নাম ছিল অলকেশ। সিনেমার জগতে আসার পরে নাম নেন বাপ্পি। ছেলের নাম অরুণেশ। একবার মজা করে বাপ্পি বলেছিলেন, এই ধারা চলতে থাকলে পরের জনের নাম হবে স্যুটকেস।
১৯৮৩ থেকে ১৯৮৫ সালের মধ্যে ১২টি সুপারহিট জুবিলি সিনেমার সুর দেন তিনি। যেটি একটি রেকর্ড। দিনে সর্বাধিক গানের রেকর্ডিং আছে তাঁর। বছরে সর্বাধিক গানের রেকর্ডের জন্যও গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নাম উঠেছিল বাপ্পির। ১৯৮৬ সালে বাপ্পি ৩৩টি সিনেমার জন্য ১৮৬টি গান রেকর্ড করেন।
কিশোর কুমার ছিলেন বাপ্পি লাহিড়ির মামা। চলচ্চিত্রজগতে কাজের সুযোগ হয়েছিল মামার কারণেই। বাপ্পি লাহিড়ি একমাত্র ভারতীয় সুরকার, যাঁকে বিবিসি লন্ডনের হয়ে লাইভ পারফরম্যান্সের অনুরোধ জানান জোনাথন রস। শোনা যায়, বাপ্পি লাহিড়ির কাছে নাকি ১৭ লাখ টাকার চেয়েও বেশি দামের সোনার গয়না আছে।
মঙ্গলবার রাতে জুহুর ক্রিটিকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান বাপ্পি লাহিড়ি। প্রয়াতের তত্ত্বাবধানে থাকা এক চিকিৎসক আজ বুধবার জানিয়েছেন, একাধিক শারীরিক জটিলতায় বাপ্পির মৃত্যু হয়েছে। বাপ্পির মৃত্যুর কারণ হিসেবে ডা. দীপক নামজোশি অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়ারের (ওএসএ) কথা উল্লেখ করেছেন।
১৯৫২ সালের ১৭ নভেম্বর পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়িতে জন্ম বাপ্পি লাহিড়ির। ছোট থেকেই সুরের জগতের মানুষ ছিলেন বাপ্পি। তাঁর বাবা অপরেশ লাহিড়ি ছিলেন বাংলা সংগীতের অন্যতম জনপ্রিয় গায়ক। মা বাঁশরী লাহিড়ি ছিলেন শাস্ত্রীয় সংগীত শিল্পী। বাপ্পি লাহিড়ি শুধু একজন সংগীত পরিচালকই ছিলেন না, প্লে-ব্যাকও করেছেন সমানতালে। পিতা-মাতার সান্নিধ্যেই তাঁর সংগীতে হাতেখড়ি। ১৯ বছর বয়সে দাদু (১৯৭২) নামক বাংলা চলচ্চিত্রে প্রথম কাজ করেন বাপ্পি লাহিড়ি।
১৯৭০ থেকে ৮০-এর দশকে হিন্দি চলচ্চিত্র জগতের অন্যতম জনপ্রিয় নাম বাপ্পি লাহিড়ি। মুম্বাইয়ের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে যেসব বাঙালি সংগীতশিল্পী দাপটের সঙ্গে কাজ করেছেন, তাঁদের মধ্যে একদম ওপরের সারিতে থাকবেন বাপ্পি লাহিড়ি। আশি দশকে বলিউড মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির দিশা বদলে দিয়েছিলেন এ বাঙালি। ‘ডিসকো ড্যান্সার’, ‘হিম্মতওয়ালা’, ‘শারাবি’, ‘অ্যাডভেঞ্চার্স অব টারজান’, ‘ড্যান্স ড্যান্স’, ‘সত্যমেভ জয়তে’, ‘কমান্ডো’, ‘শোলা অউর শবনম’-এর মতো একাধিক সুপারহিট সিনেমায় সংগীতের দায়িত্বে ছিলেন বাপ্পি লাহিড়ি।
মিঠুন চক্রবর্তীর ‘ডিসকো ড্যান্সার’ সিনেমার মিউজিক কম্পোজ করে রাতারাতি সুপারস্টারে পরিণত হয়েছিলেন বাপ্পি লাহিড়ি। তাঁর জনপ্রিয়তা ভারতের গণ্ডি পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়ে বিদেশে। এর পর থেকেই ডিসকো কিং নামে পরিচিতি লাভ করেন এই বাঙালি গায়ক।
বলিউড সুপাস্টার আমির খানের বাবা তাহির হুসেনের ‘জখমি’ সিনেমা দিয়ে বলিউডের সংগীত জগতে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন এ বাপ্পি লাহিড়ি। ২০২০ সালে তাঁর শেষ গান ছিল বলিউডের ‘বাঘি থ্রি’ সিনেমায়।
২০২১ সালের নভেম্বরে ‘সারেগামাপা’র মঞ্চে হাজির হয়েছিলেন বাপ্পি লাহিড়ি। শেষ বার তিনি প্রকাশ্যে আসেন সালমান খানের ‘বিগ বস-১৫’-এর মঞ্চে। তাঁর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমেছে সংগীতজগতে।