প্রতি বৃহস্পতিবার ফকিরদের সঙ্গে খাই : অনন্ত জলিল
বাংলা চলচ্চিত্রের অন্যতম জনপ্রিয় নায়ক তিনি। সেই সঙ্গে একজন প্রতিষ্ঠিত গার্মেন্ট ব্যবসায়ী। পেয়েছেন কর্মাসিয়াল ইম্পরটেন্ট পারসন_সিআইপির মর্যাদা। বাবার সামান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে করেছেন বিশাল মহীরূহে। সেই তিনি হলেন এম এ জলিল অনন্ত। সবার কাছে তিনি অনন্ত জলিল, অসম্ভবকে সম্ভব করাই যার কাজ।
সেই অনন্ত জলিলের সঙ্গে কথা বলেছে এনটিভির জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ‘বন্ধু তোমারই খোঁজে’। জাহাঙ্গীর চৌধুরীর প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন ইভান সাইর। অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হয়েছে বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় এনটিভিতে।
সেই অনুষ্ঠানে অনন্ত জলিলের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল ঈদুল আজহার পরিকল্পনার ব্যাপারে। ঈদের দিন অনেকে নিজের মতো সময় কাটান, পরিবারের সঙ্গে সময় কাটান, বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটান। তাঁর এমন কোনো পরিকল্পনা আছে কিনা।
অনন্ত জলিল বললেন, ‘ঈদের সময় দেশের বাইরে যাই না। ঈদের পরে যাই সব সময়। ঈদের দিনটা দেশে থাকি এ কারণে যে আমাদের লাইফ এখন শুধু আমাদের না। আমরা কিন্তু জনগণের হয়ে গেছি। আমাদের ভক্তরা চান ঈদের দিন আমাদের সঙ্গে দেখা করতে। নরমালি প্রত্যেকটা ঈদেই দেখা যায়, ঈদের দিন নামাজের পর থেকেই দলে দলে আনটিল চারটা-পাঁচটা পর্যন্ত কিন্তু মেহমানদারি করতে হয়।’
সবার সঙ্গে এ রকম করে দেখা করা বা নিজেকে সবার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ করে রাখা এই বিষয়টা কি মেইনটেইন করতে হয় নাকি ন্যাচারালি আসে?
অনন্ত জলিল বলেন, ‘এটা আসলে বাইবর্ন। এটা ও রকম কোনো ক্যারেকটার না যে নতুন করে করতে হয়েছে দর্শকদের জন্য বা আমার লাইফের জন্য হবে। যেমন : আমি ঢাকাতে থাকলে প্রত্যেক বৃহস্পতিবার ফকিরদের সঙ্গে খাই। আমাদের বাড়িতে বৃহস্পতিবার গেট ওপেন থাকে। ওখানে বাবুর্চিরা পাকাতে থাকবে। দুপুর বেলা যেই হোক সেটা গরিব মানুষ রিকশাওয়ালা হোক, ফকির হোক, দিনমজুরও হতে পারে। এটা আজকে থেকে না। যেমন : এতিম বাচ্চাদের সঙ্গে আমি খাই। এক সঙ্গে নিচে বসে খাই। এটা দেখানোর ব্যাপার না। আর মিডিয়াতে আসছি বিধাই আপনারা কোনো কোনো সময় কোয়েশ্চেন করেন, উত্তর দিতে হয়। মানুষ জেনে যায়। আসলে এগুলো না জানানো সবচেয়ে ভালো ব্যাপার।’
অনন্ত জলিলের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল তাঁর ব্যবসা শুরুর কথা। বললেন, ‘স্ট্রাগল ছাড়া যে অর্থকড়ি উপার্জন হয় সেটাতে কোনো স্বাদ নেই। আমার একটা স্ট্রাগল ছিল, স্বপ্ন ছিল। আমি যখন ফ্যামিলি বিজনেসে জয়েন করি, তখন আমাদের মিরপুরের ভাড়া কারখানায় ২০০ লোক কাজ করত। এখন আমাদের ৩৯ বিঘার ওপরে ফ্যাক্টরি। এখানে আট হাজারের ওপর লোক কাজ করে।’
‘আমি কিছুদিন আগে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে গিয়েছিলাম, গেস্ট হয়ে। ওখানে জানেন, এইটিনথ থাউজেন্ড স্টুডেন্ট আছে, অলটুগেদার। আমি তাঁদের উদ্দেশে একটা কথা বলেছিলাম। আজকে যদি আমার বাবা স্টুডেন্ট লাইফে আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দেন আমার কিন্তু কোনো পরিচিতি নাই।... আমাদের সততা দরকার, ডিসিপ্লিন দরকার, স্ট্রাগল দরকার, প্যাশন দরকার, ডেডিকেশন দরকার। সব কিছু দরকার।’
বন্ধুদের কথা জানতে চাইলে অনন্ত জলিল বলেন, ‘আমার লাইফ অনেক রেস্ট্রিকটেড ছিল। যেহেতু মা পাঁচ বছর বয়সে মারা যায়। দুই ভাই আমরা। বাবা মুন্সীগঞ্জে কোল্ডস্টোরেজের বিজনেস করতে পাঁচ দিনই সেখানে থাকতেন। মা ছাড়া ছেলে কেমন হবে না হবে সেই ভয় তাঁর ছিল। বাবা, আমাদের দুই ভাইকে কাকরাইল মসজিদে নিয়ে তওবা করান যে জীবনে কোনো ড্রিংকস করব না, সিগারেট খাব না, এমন কোনো কাজ করব না যে পুলিশের ঝামেলায় পড়ব।’
‘আমার কিন্তু অত বড় ফ্রেন্ড সার্কেল গড়ে তোলা হয়নি। কারণ দেখা যেত, আমার সঙ্গে কেউ যেত, স্কুলে নিয়ে যেত। খেলতে নিয়ে যেত। সংসদ ভবনের মাঠ, ডেন্টাল কলেজের ছাত্রাবাসের মাঠে খেলতাম। তখন ও রকম করে ফ্রেন্ড সার্কেল করতে পারিনি। তারপর বিজনেস লাইনে সবাই আমার সিনিয়র। তাদের সঙ্গে মিশেও যে একটা কিছু করব, পারিনি। তারপর মিডিয়ায় আসলাম। আমি যাদের সঙ্গে আমার চলচ্চিত্রে কাজ করেছি, এর বাইরে কারো সঙ্গে দুই একবার কথা বলেছি কি না আমার মনে নেই।’
ব্যবসাকে ছাপিয়ে বন্ধুত্ব বড় হয়ে উঠতে পারে? জবাবে অনন্ত জলিল বলেন, ‘ব্যবসা তো ব্যবসা। ফ্রেন্ড তো ফ্রেন্ড। বন্ধু তো হৃদয় থেকে আসবে। আমি যদি বলি এখানে ৫০০ লোক আমার বন্ধু। এটা হতে পারে। ইভরিওয়ান ইজ মাই ফ্রেন্ড। অ্যান্ড ফ্যান ইজ ডিফারেন্ট থিং। খুব ক্লোজ ফ্রেন্ড দুই চারজনই হয়। এই রকমও আমার লাইফে হয়ে ওঠেনি। হয়তো বিজনেস করতে করতে গিয়ে, কারো সাথে পরিচয় হতে গিয়ে। দেখা গিয়েছে, দুই একজন লোককে আমার ভালো লাগে। তাঁদের ন্যাচার ভালো লাগে। তাঁদের সততা ভালো লাগে। তাঁদের ক্যারেকটারগুলো ভালো লাগে। এ রকম দুই একজনের সঙ্গে আমার পরিচয় আছে। একজন হচ্ছেন আলম ভাই। আরেকজন হচ্ছেন কেমিকেল বিজনেস করেন হারুন ভাই। একজন আমার চেয়ে অনেক সিনিয়র, শাহীন ভাই। ওনার সঙ্গে আমার তাবলিগে গিয়ে দেখা হয়েছিল। আরেকজন আমার খুব কাছের, ওসামা ভাই।’
বন্ধুত্বে বয়স নির্ভর করে কি না? অনন্ত জলিল জানালেন, তাঁর একজন বন্ধুর বয়স ৫৪ হতে পারে। একজনের ৫৮ বছর। আরেকজন হয়তো তাঁর মতো বয়স।
বাবার বড় ভূমিকা আছে আপনার ওপর। সন্তানের সঙ্গে বাবার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক হতে পারে কি না ?
অনন্ত জলিল বলেন, ‘আমার লাইফে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল না অতটা। এখন তো ইন্টারনেটের যুগ। এখন বেশি বন্ধুত্ব হয়। বাবারও ফেসবুক আছে। ছেলেরও ফেসবুক আছে।... বাবা হচ্ছে সবচেয়ে বড় বন্ধু, এটা আমি বলতে পারি। তবে একটা ব্যাপারে আমি অস্বীকার করব, আমি খুব সহজেই বাবার সামনে করতে পারব, বাবা শাসন করবে না। এ রকম বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক হওয়া উচিত না।’
অনন্ত জলিলের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল তাঁর সঙ্গে চলচ্চিত্রে বর্ষার জুটি, পরে ভালোবাসা, বিয়ের ব্যাপারে।
অনন্ত জলিল বলেন, ‘হাজবেন্ড ওয়াইফ সবার আগে বন্ধু হতে হবে। হাজবেন্ড ওয়াইফ বন্ধু না হলে একজন আরেকজনকে হাইড করবে। বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকলে হাইড থাকবে না।’
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক ধরনের বন্ধুত্ব হচ্ছে। এর মাধ্যমে ভালো বন্ধুত্ব হতে পারে কি না। জবাবে অনন্ত জলিল বলেন, ‘ ফেসবুক ফ্রেন্ড। এটার ভালো দিকটাও আছে, খারাপও দিকটাও আছে। এখন একজনের বউ। সে যেমনই হোক না কেন আরেকজনের সুন্দর একটা ছবি দিয়ে আরেকজনের সঙ্গে প্রেম করে যাচ্ছে। এটার মধ্যে কিন্তু সততা নেই। এই ফেসবুক ফ্রেন্ড হয়তো হান্ড্রেড পারসেন্ট খারাপ তা বলব না। দুই পারসেন্ট ভালো থাকতে পারে। এটা দিয়ে আপনি কোনো ট্রাস্ট করতে পারবেন না।’
সব শেষে অনন্ত জলিল তাঁর দর্শকসহ সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা জানান।
(অনন্ত জলিলের পুরো সাক্ষাৎকার দেখা যাবে ভিডিওতে। সেখানে তাঁর ব্যাপারে কথা বলেছেন তাঁর বন্ধু মো. নজরুল ইসলাম আলম।)