নায়ক জসিমের ১৭তম মৃত্যুবার্ষিকীতে নানা আয়োজন
আজ ৮ অক্টোবর, নায়ক জসিমের ১৭তম মৃত্যুবার্ষিকী। এ উপলক্ষে নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। ‘মুক্তিযোদ্ধা চিত্রনায়ক জসিম স্মৃতি সংসদ’-এর আয়োজনে আজ বৃহস্পতিবার এফডিসিতে বাদ আসর মিলাদ মাহফিল ও দোয়া পড়ানো হবে। এ ছাড়া বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির উদ্যোগে বিকেলে আলোচনা সভা ও দোয়া পড়ানো হবে শিল্পী সমিতির স্টাডিরুমে।
শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অমিত হাসান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকে সমৃদ্ধ করতে জসিম ভাই যে অবদান রেখেছেন, তা কখনো ভোলার নয়। আমরা আজ বাদ আসর মিলাদ ও দোয়ার মাধ্যমে এই মহান শিল্পীকে শ্রদ্ধা জানাব। সবাই দোয়া করবেন, যেখানেই থাকুন তিনি যেন ভালো থাকেন।’
ফাইট ডিরেক্টর আতিকুর রহমান চুন্নু বলেন, ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্রের ফাইট আজ যে অবস্থানে আছে, তা তৈরি করেছেন জসিম ভাই। তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা আমাদের জানা নেই।’
বাংলা চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় নায়ক জসিম ছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধা। খলচরিত্র দিয়ে অভিনয়ের ক্যারিয়ার শুরু করলেও পরে নায়ক হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি। তাঁকে ধরা হয় বাংলাদেশের অ্যাকশন ধারার চলচ্চিত্রের অন্যতম প্রবর্তক। ১৯৯৮ সালের ৮ অক্টোবর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণে ঢাকায় মারা যান তিনি।
নায়ক জসিমের পুরো নাম আবদুল খায়ের জসিম উদ্দিন। তিনি ১৯৫০ সালের ১৪ আগস্ট ঢাকার কেরানীগঞ্জের বক্সনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। লেখাপড়া করেন বিএ পর্যন্ত। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে ২ নম্বর সেক্টরে মেজর হায়দারের নেতৃত্বে লড়াই করেন তিনি।
মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭২ সালে ‘দেবর’ ছবির মাধ্যমে চলচ্চিত্রে জসিমের আত্মপ্রকাশ। এ ছবিতে তাঁর অভিনয় পরিচালকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। অল্পদিনের মধ্যেই চলচ্চিত্রে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তিনি। ১৯৭৩ সালে ‘রংবাজ’ ছবিতে অ্যাকশন ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করে দেশব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি করেন জসিম।
দুই বন্ধু আরমান ও মাহবুবকে নিয়ে তিনি গড়ে তোলেন ‘জেমস ফাইটিং গ্রুপ’। চলচ্চিত্রের অ্যাকশন দৃশ্য পরিচালনা এবং স্ট্যান্টম্যান সরবরাহের কাজ করত গ্রুপটি।
নায়ক জসিম খলচরিত্রে অভিনয় করেন দেওয়ান নজরুলের ‘বারুদ’, ‘আসামি হাজির’, ‘ওস্তাদ সাগরেদ’, ‘জনি’, ‘কুরবানি’সহ অনেক ব্যবসাসফল ছবিতে। বলিউডের বিখ্যাত চলচ্চিত্র ‘শোলে’র আদলে ঢাকায় নির্মিত হয় ‘দোস্ত দুশমন’ ছবিটি। মূল ‘শোলে’ ছবিতে খলনায়ক ‘গাব্বার সিং’-এর ভূমিকায় অভিনয় করে অমর হয়ে আছেন আমজাদ খান। ‘দোস্ত দুশমন’ ছবিতে খলনায়কের ভূমিকায় অভিনয় করেন জসিম।
১৯৮০-এর দশকের শুরুর দিকে সুভাষ দত্তের পরিচালনায় ‘সবুজ সাথী’ ছবির মাধ্যমে তিনি নায়ক হয়ে পর্দায় হাজির হন। ভিলেন থেকে নায়ক চরিত্রে এসেও ব্যাপক সাফল্য পান জসিম। তিনি ববিতা, সুচরিতা, শাবানা, রোজিনা, নাসরিনসহ সে সময়ের সফল নায়িকাদের বিপরীতে অভিনয় করেন।
জসিম অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবিগুলোর মধ্যে রয়েছে—‘রাজ দুলারী’, ‘দোস্ত দুশমন’, ‘তুফান’, ‘জবাব’, ‘নাগ নাগিনী’, ‘বদলা’, ‘বারুদ’, ‘সুন্দরী’, ‘কসাই’, ‘লালু মাস্তান’, ‘নবাবজাদা’, ‘অভিযান’, ‘কালিয়া’, ‘বাংলার নায়ক’, ‘গরিবের ওস্তাদ’, ‘ভাইবোন’, ‘মেয়েরাও মানুষ’, ‘পরিবার’, ‘রাজা বাবু’, ‘বুকের ধন’, ‘স্বামী কেন আসামি’, ‘লাল গোলাপ’, ‘দাগী’, ‘টাইগার’ ও ‘হাবিলদার’।
জসিমের প্রথম স্ত্রী ছিলেন চিত্রনায়িকা সুচরিতা। পরে তিনি ঢাকার প্রথম সবাক চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’-এর নায়িকা পূর্ণিমা সেনগুপ্তার মেয়ে চিত্রনায়িকা নাসরিনকে বিয়ে করেন। নায়ক জসিমের নামে এফডিসির ২ নম্বর ফ্লোরের নামকরণ করা হয়েছে।