৩৭ মামলা থেকে বাঁচতে নায়ক হয়েছিলেন ফারুক
শুনে অবাক লাগতে পারে, ঢাকাই সিনেমার বরেণ্য অভিনেতা আকবর হোসেন পাঠান ফারুক এক সময় ছিলেন পুরান ঢাকার ‘দুলু গুণ্ডা’। তাঁর নামে ছিল ৩৭টি মামলা; এই মামলাগুলো থেকে বাঁচতেই নায়ক হয়েছিলেন তিনি।
২০১৮ সালে এনটিভি অনলাইনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নিজের ফেলে আসা জীবনের গল্পে এমনটা জানিয়েছিলেন ফারুক।
চলচ্চিত্রে যুক্ত হওয়া প্রসঙ্গে নায়ক ফারুক বলেছিলেন, “চলচ্চিত্রে আমি আসলে এসেছি আশ্রয় নেওয়ার জন্য। কারণ, ১৯৬৬ সালে ছয় দফা আন্দোলন যখন শুরু হয়, তখন আমি সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে যুক্ত। আমার নামে ৩৭টি মামলা, সে সময় আমার কাছের বন্ধুরা আমাকে বুদ্ধি দেয়, আমি যেন চলচ্চিত্রে কাজ শুরু করি, তাহলে মামলা থেকে কিছুটা হলেও রেহাই পাব। তখন আমাকে পরিচালক এইচ আকবর সাহেব নবাবপুর রোডে একটি হোটেলে নিয়ে যান এবং আমাকে পরিচয় করিয়ে দেন সবার সঙ্গে। আমার নাম বদল করা হয়, নতুন নাম দেওয়া হয় ফারুক। প্রথম ছবির নাম আমার মনে নেই। তবে প্রথম মুক্তি পাওয়া ছবিটি ছিল ‘জলছবি’। নবাবপুর রোডটি আসলে আমাদের কৃষ্টি-কালচারের আঁতুরঘর।”
সেই গল্পে ফারুক আরও শুনিয়েছিলেন, ‘একসময় পুরান ঢাকার মানুষ আমাকে ভয় পেত। সবাই আমাকে দুলু গুণ্ডা নামে চিনত। এলাকায় কোনো নাটক হলে আমাকে ভাড়া করা হতো তা নষ্ট করার জন্য। দেখা গেল, নাটক শুরু হয়েছে আর আমি পাশে দাঁড়িয়ে পচা ডিম মারছি। ভয়ে আমাকে কেউ কিছু বলতেও পারত না। পুরান ঢাকার দুলু গুণ্ডাই আজকের নায়ক ফারুক।’
ঢাকাই সিনেমার বরেণ্য অভিনেতা আকবর হোসেন পাঠান ফারুক ২০২৩ সালের আজকের দিনে (১৫ মে) সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ২০২১ সালের ৪ মার্চ থেকে আকবর হোসেন পাঠান ফারুক সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালের চিকিৎসাধীন ছিলেন।
চিত্রনায়ক ফারুক ১৯৪৮ সালে ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালে এইচ আকবর পরিচালিত ‘জলছবি’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে ঢাকাই সিনেমায় অভিষেক হয় তাঁর। এরপর তিনি পরিণত হন অন্যতম জনপ্রিয় নায়কে।
এইচ আকবর পরিচালিত ‘জলছবি’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে নায়ক ফারুক বড় পর্দায় আসেন। অভিনয়ের জন্য ১৯৭৫ সালে শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। ২০১৬ সালে ভূষিত হয়েছেন আজীবন সম্মাননায়। তাঁর অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবির মধ্যে রয়েছে ‘সারেং বৌ’, ‘লাঠিয়াল’, ‘সুজন সখী’, ‘নয়নমনি’, ‘মিয়া ভাই’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘সাহেব’, ‘আলোর মিছিল’, ‘দিন যায় কথা থাকে’ ইত্যাদি।