মায়ের শোকসভায় খুনসুটিতে শ্রেষ্ঠ আর স্বর্গ : জানে না, মা আর নেই...
১৪ দিনের দীর্ঘ লড়াই শেষে দুই সন্তান, অনেক স্বজন ও অসংখ্য শুভাকাঙ্ক্ষীকে এপারে অপেক্ষায় রেখে অবশেষে জীবনের ওপারে পাড়ি জমালেন অভিনেত্রী রিশতা লাবনী সীমানা। আজ (৪ জুন) মঙ্গলবার সকাল ৬টায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে মাত্র ৩৯ বছর বয়সে শেষ হলো এই অভিনেত্রীর কর্মময় পথচলা।
অভিনেত্রী সীমানার প্রথম নামাজে জানাজা সম্পন্ন হয় দুপুর ১২টা ১৫ মিনিটে চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে। জানাজায় উপস্থিত ছিলেন সীমানার দীর্ঘদিনের সহকর্মীরা। চ্যানেল আইতে সীমানার মরদেহ নিয়ে এলে সেখানে তৈরি হয় শোকাবহ পরিবেশ।
চ্যানেল আই ভবনে যেখানে অভিনেত্রী রিশতা লাবনী সীমানার জন্য শোকবই রাখা, সেখান থেকে একটু দূরে ছিল তার দুই সন্তান শ্রেষ্ঠ ও স্বর্গ। তাদের মা যে মারা গেছেন, তা নিয়ে কোনো ধারণা নেই ছোট এই দুই শিশুর। মায়ের মরদেহের গাড়ি যখন চ্যানেল আই ভবনে পৌঁছাল, আট বছর বয়সী শ্রেষ্ঠ ছোট ভাইকে বলল, মা আসছে, চলো স্বর্গ মাকে দেখি। এই দুই শিশু জানে না যে, তাদের মা আর ফিরে আসবে না।
চ্যানেল আই প্রাঙ্গণ ভর্তি মানুষের মাঝেও দিব্যি ছোটাছুটি করে বেড়াচ্ছে, খেলাধুলা করছে। তাদের মা যে আর নেই, সেটা এখনো বুঝে উঠতে পারেনি এ দুই অবুঝ শিশু! মায়ের ছবির পাশে দাঁড়িয়ে দুষ্টুমিতে মেতে ছিল তারা। বাচ্চা দুটি এখনো বোঝেনি, বোঝার কথাও নয় যে, তাদের মা আর ফিরবে না। সদ্য মা-হারা দুই বাচ্চাকে দেখে অনেকেই হয়ে উঠেছিলেন অশ্রুসজল!
জানাজার জন্য যখন মরদেহ নামানো হয়, শ্রেষ্ঠ বারবার দৌড়ে যেতে চাইছিল মায়ের কাছে। দেখতে চাইছিল মায়ের মুখ। মায়ের কথা জিজ্ঞেস করতেই শ্রেষ্ঠর ছোট উত্তর, ‘মায়ের ইচ্ছে ছিল আমাকে ক্যাডেটে পড়াবে। কিন্তু মা তো মারা গেছে, আমার আর ভালো লাগছে না।’
এরই মধ্যে অভিনেত্রী রিসাত লাবনী সীমানার প্রথম নামাজের জানাজা শেষ হয়েছে চ্যানেল আই প্রাঙ্গনে। শেরপুরের নলডাঙা এলাকার গ্রামের বাড়িতে দাফন হবে এই অভিনেত্রীর। এখন চলছে সেই প্রস্তুতি।
প্রায় ১৪ দিন অচেতন ছিলেন সীমানা। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল গত ২০ মে। এরপর করানো হয় সার্জারি। কিন্তু আশানুরূপ কোনও উন্নতি হয়নি বলে দেয়া হয় লাইফ সাপোর্ট। অসুস্থ হওয়ার পর থেকে সীমানা চিকিৎসাধীন ছিলেন ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতালে। তবে অবস্থার অবনতি হওয়ায় বুধবার (২৯ মে) অভিনেত্রীকে স্থানান্তর করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে।
শোবিজে সীমানার পথচলা শুরু হয় ২০০৬ সালে লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতার মাধ্যমে। এরপর থেকে তিনি নাটক, বিজ্ঞাপনে নিয়মিত কাজ করছিলেন। দেখা গেছে সিনেমায়ও। অভিনয় করেছেন চলচ্চিত্রেও। নির্মাতা তৌকীর আহমেদ পরিচালিত ‘দারুচিনি দ্বীপ’-তার অভিনীত প্রথম সিনেমা। তবে মাঝে ২০১৬ সাল থেকে বছর ছয়েক পারিবারিক কারণে কাজ থেকে বিরতিতে ছিলেন। বিরতি কাটিয়ে গত বছর কাজে ফিরেছিলেন তিনি।