যেভাবে গরুর মাংস রান্না করলে ঝুঁকিমুক্ত হবেন
গরুর মাংস অনেকের প্রিয় খাবার। কিন্তু স্বাস্থ্যঝুঁকি বিবেচনায় অনেকে গরুর মাংস এড়িয়ে চলেন। তবে গরুর মাংসে রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ। আজ আমরা একজন পুষ্টিবিদের কাছ থেকে জানব, গরুর মাংস কারা খাবেন আর কারা খাবেন না।
এনটিভির নিয়মিত স্বাস্থ্যবিষয়ক এক আয়োজনে এ নিয়ে বিস্তারিত বলেছেন পুষ্টিবিদ সুরাইয়া নাজনীন তুলি। তিনি বলেন, ১০০ গ্রাম গরুর মাংসে প্রায় ২২.৬ গ্রাম প্রোটিন থাকে, যা আমাদের প্রোটিনের যে প্রয়োজন, তা অনেকাংশে পূরণ করে থাকে। এর মধ্যে রয়েছে অত্যাবশ্যকীয় অ্যামাইনো অ্যাসিড, যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য কাজ করে। শুধু প্রোটিন নয়, এটি বিভিন্ন রকম ভিটামিন-মিনারেলে ভরপুর। যেমন রয়েছে জিঙ্ক, সেলেনিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়ামসহ বিভিন্ন রকমের পুষ্টি উপাদান। জিঙ্ক আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে এবং আমাদের দৈনন্দিন যে জিঙ্কের চাহিদা, তার প্রায় ৩৯ শতাংশ পূরণ করতে পারে গরুর মাংস। বাড়ন্ত কিশোর-কিশোরীদের গরুর মাংস দিয়ে জিঙ্কের অভাব পূরণ করতে পারি।
সুরাইয়া নাজনীন তুলি বলেন, অনেকের প্রশ্ন, গরুর মাংস যে আমরা খাব, কতটুকু খাব। স্বাভাবিক সুস্থ মানুষ প্রতিদিন তিন আউন্স পরিমাণ গরুর মাংস খেতে পারে। এতে করে গরুর মাংসের ভেতরে যে পুষ্টি উপাদান রয়েছে, তা আমরা ঠিকভাবে নিতে পারব। তবে যাঁরা কিডনি রোগে আক্রান্ত বা উচ্চ রক্তচাপ আছে যাঁদের, তাঁদের গরুর মাংস এড়িয়ে চলা ভালো। গরুর মাংসে পর্যাপ্ত সোডিয়াম থাকার কারণে এটি রক্তচাপকে বাড়িয়ে দিয়ে হৃৎপিণ্ডকে অনেক সময় অসুস্থ করে ফেলতে পারে। যাঁরা কিডনি রোগে আক্রান্ত, তাঁদের নির্দিষ্ট পরিমাণে প্রোটিন গ্রহণ করতে বলা হয়ে থাকে। যে কারণে গরুর মাংস গ্রহণ করলে কিডনি রোগীদের কঠিন সমস্যা দেখা দিতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ, অতিরিক্ত ওজন এবং কিডনি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের গরুর মাংস এড়িয়ে চলা ভালো। যদি কখনও খেতে ইচ্ছে করে, তাহলে তিন আউন্সের বেশি খাওয়া যাবে না।
গরুর মাংসে রয়েছে আয়রন। যাঁরা রক্তস্বল্পতায় ভুগছেন, তাঁরা গরুর মাংস থেকে ভালো পরিমাণে আয়রন পেতে পারেন। যখন গরুর মাংস গ্রহণ করবেন, তখন ভিটামিন সি হিসেবে লেবু বা কাঁচামরিচ নিতে পারেন। আর যাঁরা গরুর মাংস খুবই পছন্দ করেন, সে ক্ষেত্রে গরুর মাংস রান্নার প্রক্রিয়া একটু অন্যরকম করে নিতে হবে। তাহলে এর মধ্যে যে খারাপ কোলেস্টেরল বা ফ্যাট রয়েছে, তা একটু দূর করে খেলে ক্ষতিকর দিক থেকে দূরে থাকতে পারব। যেমন—আমরা গরুর মাংসকে যদি একটু সেদ্ধ করে নিই, সেদ্ধ করে এর যে তৈলাক্ত অংশ আছে, তা ফেলে দিই; তাহলে এর ফ্যাট সরিয়ে ফেলতে পারব। গরুর মাংসকে আমরা যদি বাঁধাকপি, ফুলকপিসহ বিভিন্ন সবজি দিয়ে রান্না করি, সে ক্ষেত্রেও এর ঝুঁকি কিছুটা আমরা এড়াতে পারি। এ ছাড়া টকদই দিয়েও যদি রান্না করি, সে ক্ষেত্রে এর ঝুঁকি কিছুটা কমে যায়। খেয়াল রাখতে হবে, আমরা কীভাবে গরুর মাংস রান্না করছি বা প্রসেসিং করছি।
পুষ্টিবিদ সুরাইয়া নাজনীন তুলি বলেন, অনেকে ঘি বা বাটার দিয়ে ভেজে রান্না করেন। এটা কিন্তু অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। যাঁদের বিভিন্ন ধরনের কঠিন রোগ রয়েছে, তাঁদের জন্য তেলে ফ্রাই বা ঘিয়ে ফ্রাই, বাটারে ফ্রাই করা গরুর মাংস এড়িয়ে চলাই ভালো। গরুর মাংসের যেমন উপকারিতা রয়েছে, তেমনই অপকারিতাও রয়েছে। অবশ্যই শরীরের অবস্থা বুঝে গরুর মাংস গ্রহণ করতে হবে।