যে কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য হয়, দূর করতে যা করবেন
কোষ্ঠকাঠিন্য খুবই কমন বা সাধারণ একটি সমস্যা। কিন্তু এই কমন সমস্যার কারণেই জীবন দুর্বিষহ হয়ে যায়। অনেকে প্রায় সারা বছরই কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগতে থাকেন। বিশেষ করে বয়স্ক মানুষেরা, কিছু কিছু ক্ষেত্রে গর্ভবতী নারীরাও কোষ্ঠকাঠিন্যে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। আজ আমরা একজন বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানব।
এনটিভির নিয়মিত এক স্বাস্থ্যবিষয়ক অনুষ্ঠানে এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছেন পুষ্টিবিদ শবনম মোস্তফা। তিনি বলেন, বিশেষজ্ঞদের মত হলো, সপ্তাহে তিন বারের কম বাওয়েল মুভমেন্ট হলে আমরা সেটাকে কোষ্ঠকাঠিন্য বলে সংজ্ঞায়িত করতে পারি। খাবারে আঁশজাতীয় খাদ্য উপাদানের ঘাটতি ও পর্যাপ্ত পানি পান না করার কারণে সাধারণত কোষ্ঠকাঠিন্যে মানুষ আক্রান্ত হয়। এ ছাড়া কিছু অসুখের কারণেও কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। স্ট্রোক কিংবা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, ডায়াবেটিস; এ ছাড়া অন্ত্রের কোনো জটিল রোগ, যেমন টিউমার প্রভৃতি কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। অনেক সময় বড় কোনো রোগের কারণ ছাড়াই কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। এ কারণগুলো সাধারণ জীবনযাপনের পদ্ধতিগুলোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকে। যেমন খাবারে আঁশজাতীয় খাদ্য উপাদানের অভাব, পর্যাপ্ত তরল বা পানি না খাওয়া ও নিয়মিত ফাস্টফুড খাওয়া। এ ছাড়া দুশ্চিন্তা থেকে মানুষ কোষ্ঠকাঠিন্যে আক্রান্ত হতে পারে। আরেকটি কমন সমস্যা হচ্ছে টয়লেট চেপে রাখা। এ ক্ষেত্রে দেখা যায়, অনেক সময় কর্মজীবী নারীরা কর্মস্থলে পর্যাপ্ত প্রাইভেসির অভাব কিংবা ওয়াশরুম পর্যাপ্ত ক্লিন না থাকার কারণে তাঁরা যেতে চান না। এখান থেকেও তাঁরা পরবর্তীতে কোষ্ঠকাঠিন্যে আক্রান্ত হতে পারেন।
কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তির উপায় কী, তাও বাতলেছেন শবনম মোস্তফা। তিনি বলেন, কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় যাঁরা ভুগছেন, তাঁদের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকা থেকে কিছু খাবার অবশ্যই বাদ দিতে হবে। প্রথমেই আসি দুধ বা দুধজাতীয় খাবার, এ ধরনের খাবারে ফাইবার কম থাকে। ফলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা অনেকাংশে বেড়ে যায়। এরপর আসছি রেড মিটে। গরু বা খাসির মাংসে চর্বির পরিমাণ বেশি থাকে। ফলে কোষ্ঠকাঠিন্যে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। তবে এ ক্ষেত্রে আমাদের পরামর্শ হচ্ছে, গরু বা খাসির মাংস খাওয়ার সময় অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমাণে সালাদ এবং সবজি সহযোগে খাবেন। অনেকে নাশতা হিসেবে চিপস জাতীয় আইটেম বেছে নেন। এগুলো কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য অনেকাংশে দায়ী। এ খাবারগুলো অবশ্যই বাদ দিতে হবে। পাশাপাশি ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, চিকেন ফ্রাই কিংবা ব্রেড ক্রাম্পে তৈরি খাবারগুলো অবশ্যই এড়িয়ে যেতে হবে।
আমাদের দেশে ফ্রোজেন ফুডগুলো এখন খুব অ্যাভেইলেবল হয়ে গেছে। এসব ফ্রোজেন ফুডে কিন্তু প্রক্রিয়াজাত করে পানিটাকে ফেলে দেওয়া হয় এবং পাশাপাশি কিছু লবণ যোগ করা হয়। ফলে এ খাবারগুলো থেকেও কিন্তু কোষ্ঠকাঠিন্যে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যেতে পারে। অর্থাৎ কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে দূরে থাকতে হলে অবশ্যই এ খাবারগুলো আমাদের খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিতে হবে।
শবনম মোস্তফার পরামর্শ, প্রথমেই আসছি পানির বিষয়ে। এ কথা বলার অবকাশ নেই, পানি আমাদের দেহের জন্য কতটা উপকারী। পানি যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে না খাওয়া হয়, তাহলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। সুতরাং কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে দৈনন্দিন অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি খেতে হবে। এ ক্ষেত্রে দুই লিটার পানি অবশ্যই খেতে হবে। এরপর আসছি ডায়েটারি ফাইবার সমৃদ্ধ খাবারে। যেমন সবুজ শাকসবজি। সবুজ শাকসবজির মধ্যে পালং শাক আমাদের খুবই পছন্দের একটি সবজি। এক কাপ সেদ্ধ পালং শাক থেকে প্রায় ১৫০ মিলিগ্রামের মতো ম্যাগনেশিয়াম পাওয়া যায়। ম্যাগনেশিয়াম কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূরীকরণে অনেকাংশে সাহায্য করে।
কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করতে টক দইয়ের তুলনা নেই। নিয়ম করে টকদই খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে দূরে থাকা অনেকাংশে সম্ভব। এ ছাড়া কোষ্ঠকাঠিন্য দূরীকরণে ইসপগুলের ভুসি, বেলের শরবত উৎকৃষ্ট দাওয়াই হিসেবে কাজ করে। তবে খেয়াল রাখতে হবে, ইসপগুলের ভুসি যেন ইনস্ট্যান্ট পানিতে ভিজিয়ে খেয়ে ফেলা হয়। পাশাপাশি দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় ফলমূল যোগ করলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থেকে আরোগ্যলাভ করা সম্ভব হয়। যেমন একটি উৎকৃষ্ট ফল হলো আপেল।
এ পুষ্টিবিদ আরো বলেন, কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে দূরে থাকতে সাহায্য করে কলা। কলায় প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে। এর পাশাপাশি কলায় পটাশিয়াম থাকে। পটাশিয়াম কিন্তু ক্ষুদ্রান্ত্র ও বৃহদান্ত্রকে কার্যকর রাখতে সাহায্য করে। অর্থাৎ কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে দূরে থাকতে কলা আমাদের অনেকাংশে সাহায্য করে। এ ছাড়া রয়েছে কমলা। কমলা একটি উচ্চ ফাইবার সমৃদ্ধ ফল।
সবশেষে বলা যায়, কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে দূরে থাকতে হলে খাদ্যাভ্যাসের কোনো বিকল্প নেই। দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় পর্যাপ্ত ফাইবার জাতীয় খাবার যুক্ত করতে হবে। আমেরিকান জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশন বলছে, প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় অবশ্যই ৩৮ থেকে ৪০ গ্রামের মতো ফাইবার থাকতে হবে। পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। নিয়মিত ব্যায়াম তথা হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। এগুলো করলে আমরা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থেকে মুক্তি পাব।