কর্ণাটকের মুসকানের সঙ্গে ঢাবি শিক্ষার্থীদের সংহতি
ভারতের কর্ণাটক রাজ্যে মুসলিম স্কুল-কলেজ ছাত্রীদের হিজাব পরা নিয়ে ব্যাপক উত্তেজনা চলছে। এরই মধ্যে সেখানে একদল গেরুয়া উত্তরীয় পরিহিত তরুণদের সামনে একা দাঁড়িয়ে কথা বলে সাহস দেখিয়েছেন মুসকান নামের এক কলেজছাত্রী। সেই মুসকানের সঙ্গে সংহতি জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী।
আজ বুধবার সকাল সাড়ে ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে মানববন্ধন করেন ঢাবি শিক্ষার্থীরা।
তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জোবায়দা রহমান বলেন, ‘হিজাব হোক, জিন্স প্যান্ট বা শাড়ি হোক, সিঁদুর-শাখা হোক—এটা একটা মেয়ের অধিকার, সে পছন্দ করবে তার পোশাক। হিজাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা কেবল ভারতে নয়, এটা বাংলাদেশসহ পৃথিবীর অনেক দেশে ছড়িয়ে রয়েছে। আমি যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওরিয়েন্টেশনে আসি, তখন আমিও বাধার শিকার হই। আমার শ্রেণিকক্ষের অধ্যাপিকা আমার হিজাবের কারণে আমাকে কটাক্ষ করেন। আজ এখান থেকে সবার সোচ্চার হওয়া উচিত।’
আরেক শিক্ষার্থী জয় চন্দ্র দাস বলেন, ‘একটা মেয়ে কী পরবে, তা কোনো ব্যক্তি বা রাষ্ট্র ঠিক করবে না। বোরকা সবাই পরতে পারে, এটা একটা শালীন পোশাক। আর, যেহেতু এটা মুসলিমদের সংস্কৃতি, তাহলে তারা কোনো বাধার মুখোমুখি হতে পারে না। এটা এক উদ্ভট সাম্প্রদায়িকতা। আমি একজন হিন্দু হয়ে আজ লজ্জাবোধ করছি। আমি মনে করি—বোরকা আমার মা-বোনও পরতে পারেন। আমরা আজ এটাই বলতে চাই—পৃথিবীর যেকোনো জায়গায়, যেকোনো প্রতিষ্ঠানে একটা মেয়ে বা একটা ছেলে কী পরবে, এটা একান্তই তার ব্যাপার।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী তাবাসসুম রহমান বলেন, ‘কর্ণাটকের প্রতিবাদী মেয়েটির সঙ্গে আমরা সংহতি প্রকাশ করছি। আমার পোশাক আমার স্বাধীনতা। আমি বোরকা পরব, না সালোয়ার-কামিজ পরব, না ফ্রক পরব, এটা একান্ত আমার ব্যাপার। একটা রাষ্ট্র হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান—সব ধর্মের মানুষ নিয়ে গঠিত। সবার পোশাকের ভিন্নতা হবে, এটাই তো স্বাভাবিক। আজ এ সাম্প্রদায়িকতা কেবল ভারত নয়, বাংলাদেশেও অহরহ রয়েছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও এ সাম্প্রদায়িকতার শিকার হয়। এখন থেকে যখন যেখানেই এমন সাম্প্রদায়িকতা দেখা যাবে, সেখানেই প্রতিবাদ, প্রতিরোধ গড়ে উঠবে।’
মানববন্ধন শেষে শিক্ষার্থীদের একটি মিছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান প্রদক্ষিণ করে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে এসে শেষ হয়।