মূল দাবি অমীমাংসিত রেখেই শেষ শাবিপ্রবির বৈঠক
উপাচার্যের অপসারণের মূল দাবি অমীমাংসিত রেখেই শেষে হয়েছে সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রীর বৈঠক। তাঁদের দাবির বিষয়টি আচার্যকে (রাষ্ট্রপতি) অবহিত করা হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এরই মধ্যে কয়েকটি দাবি বাস্তবায়ন হয়েছে, আর নতুন কিছু দাবিও এসেছে বলে জানান তিনি।
আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় সিলেট সার্কিট হাউজে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ১১ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক শেষে গণমাধ্যমকে এসব কথা জানান শিক্ষামন্ত্রী। বৈঠকে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সচিব ফেরদৌস আহমেদ তুহিন অংশ নেন।
উপাচার্যের পদত্যাগের দাবির বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আচার্য যেহেতু একজন উপাচার্যকে নিয়োগ দেন কিংবা অপসারণ করেন, সেহেতু আমরা বিষয়টি আচার্যকে অবহিত করব।’
ডা. দীপু মনি বলেন, ‘আমরা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁরা তাঁদের বক্তব্য, দাবি-দাওয়া ও পুরো ঘটনা তুলে ধরেছেন। ভালো আলোচনা হয়েছে, ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। আমরা তাঁদের কথা বুঝতে চেষ্টা করেছি।’
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘তাঁদের যে দাবিগুলো আছে- শিক্ষার মান, আবাসনের মান কীভাবে উন্নত করা যায়, সে সংক্রান্ত তাঁরা নিজেরাই চিন্তা করে বেশ কিছু প্রস্তাব দাঁড় করিয়েছে। আমরাই বলেছিলাম, তাঁদের ঠিক করতে। আমরা যে প্রস্তাবগুলো দেখলাম, তার মধ্যে বেশ কিছু ইতোমধ্যে পূরণ করা হয়ে গেছে। আরও যেগুলো আছে, প্রায় সবগুলোই আমরা আশা করি পূরণ করতে পারব। সে উদ্যোগ আমরা নেব।’
এর আগে বিকেল ৩টায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সিলেট সার্কিট হাউজে বৈঠকে বসেন শিক্ষামন্ত্রী। সেই বৈঠক চলে টানা তিন ঘণ্টা।
শিক্ষার্থীদের পক্ষে বৈঠকে অংশ নেন শাহরিয়ার আবেদিন, নাফিসা আনজুম, সাব্বির আহমেদ, সাবরিনা শাহরিন রশীদ, মোহাইমিনুল বাশার রাজ, আশিক হোসাইন মারুফ, ইয়াসির সরকার, সুদীপ্ত ভাস্কর অর্ঘ, আমেনা বেগম, মীর রানা ও জাহিদুল ইসলাম অপূর্ব।
গত ১৩ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়টির বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অসদাচরণসহ বিভিন্ন অভিযোগ তুলে তাঁর পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন হলের কয়েকশ ছাত্রী। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ১৫ জানুয়ারি ছাত্রলীগ হামলা চালায়। পরদিন ১৬ জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ লাঠিপেটা করে এবং শটগানের গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। পরে আন্দোলনটি উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে রূপ নেয়।
কর্মসূচির একপর্যায়ে ১৯ জানুয়ারি থেকে এক দফা দাবিতে আমরণ অনশন শুরু করেন ২৪ জন শিক্ষার্থী। অনশনের আট দিন পর ২৬ জানুয়ারি সকাল ১০টা ২০ মিনিটে বরেণ্য কথাসাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের অনুরোধে হাতে অনশন ভাঙেন শিক্ষার্থীরা।
এর ১৪ দিন পর গত বুধবার (৯ ফেব্রুয়ারি) বিকেল থেকে পরপর দুদিন উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনের ছবি, ব্যঙ্গচিত্র সংবলিত প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তাঁরা বলেন, ‘আমাদের আন্দোলন চলছে ও চলবে।’ এদিন তাঁরা অবিলম্বে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে উপাচার্যের পক্ষ নেওয়াদের হুঁশিয়ারি দেন।
এরপর আজ শুক্রবার সকালে শাবিপ্রবির আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে ও চলমান সংকট নিরসনে সিলেট পৌঁছান।