মেজো ভাই, আমি তো গান কিছু জানি না...
পপগুরু বা পপসম্রাটখ্যাত আজম খান এক দশকের বেশি সশরীরে না থাকলেও বাংলাদেশের সংগীতজগতে তিনি আছেন অমর হয়ে। আজম খানের সংগীতজীবনের শুরু প্রকৃতপক্ষে ষাট দশকের শুরুতে। যেটুকু শিখেছেন, সেটা মেজো ভাই বিশিষ্ট সুরকার আলম খানের কাছে।
সেই গান শেখার শুরুর গল্পটা এনটিভি অনলাইনকে ২০১৫ সালে শুনিয়েছিলেন আলম খান। সেই গল্পে বলছিলেন, “প্রথমে আজম খান আবদুল লতিফের গাওয়া গণসংগীত গাইত, একদিন আজম বলল, মেজো ভাই, আমি তো গান কিছু জানি না। না শিখেই গান গাই। আমি আপনার কাছে গান শিখতে চাই। পরে আমি তাঁকে বললাম ঠিক আছে, শেখাব।”
সেই গল্পে আরও যুক্ত করেছিলেন, “আমাদের বেডরুম ছিল তিনটা। গান-বাজনা করার জন্য বাইরে আমি একটি ঘর করেছিলাম। হঠাৎ একদিন আজম আমাকে বলল, ‘মেজো ভাই, আমার ওই ঘরটা লাগবে। আমি সেখানে তিনটি গিটার আর ড্রামস রাখব। বন্ধুদের নিয়ে আমি সেখানে রেওয়াজ করতে চাই।’ তার পর আমি আজমের কলেজ ছুটির পর বিকেল ৫টা থেকে ৭টা পর্যন্ত আমার ঘরে রিহার্সেল করার অনুমতি দিই।”
মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের পর ১৯৭২ সালে আজম খান তাঁর বন্ধুদের নিয়ে ‘উচ্চারণ’ ব্যান্ড গঠন করেন। ১৯৭৪-৭৫ সালে একটি গান বাংলাদেশের সংগীতপ্রেমীদের, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের হৃদয় জয় করে নেয়, সেটি হচ্ছে আজম খানের গাওয়া গান ‘হায় রে বাংলাদেশ’।
১৯৫০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন আজম খান। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিনি ঢাকায় বেশ কয়েকটি গেরিলা অভিযানে অংশ নেন। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে আজম খানের নতুন ঘরানার সংগীত তরুণ প্রজন্মের কাছে বিপুল জনপ্রিয়তা পায়। তাঁকে বাংলাদেশে ব্যান্ড সংগীতের বিকাশের পথিকৃৎ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
পপসম্রাট আজম খানের বিখ্যাত গানগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘রেললাইনের ওই বস্তিতে’, ‘ওরে সালেকা ওরে মালেকা’, ‘আলাল ও দুলাল’, ‘কেন মন কাঁদে রে’, ‘জীবনে কিছু পাব নারে’, ‘জীবনে মরণ কেন আসে’, ‘পাপড়ি কেন বোঝে না’সহ আরও অনেক গান।