ফরিদপুরে ১২ বাসে আগুন তদন্তে কমিটি
ফরিদপুরে অগ্নিকাণ্ডে সাউথ লাইন পরিবহণের ১২টি বাস পুড়ে যাওয়ার ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে পুলিশ। পাঁচ কর্ম দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে তিন সদস্যের ওই কমিটিকে। এ ঘটনায় পুলিশ একটি মামলাও করেছে।
গত শুক্রবার দিবাগত রাত ১টার দিকে শহরের গোয়ালচামটে নতুন বাস টার্মিনালের পাশে অগ্নিকাণ্ডে সাউথ লাইন পরিবহনের বাসগুলো পুড়ে যায়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা রাত আড়াইটার দিকে আগুন নেভাতে সক্ষম হন। যদিও তার আগে বাসগুলো পুড়ে যায়।
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এ জলিল জানান, এ ঘটনায় গতকাল শনিবার রাতে কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. গাফফার বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন।
সাউথ লাইন পরিবহণের মালিক মালিক সাজ্জাদ হোসেন বরকত দুই হাজার কোটি টাকা পাচার মামলায় গ্রেপ্তার হন। তিনি এক সময় শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। দলটি বিভিন্ন অপরাধে তাঁকে সেই পদ থেকে বহিস্কার করে।
ওসি এম এ জলিল বলেন, ‘চারটি বিষয়কে সামনে রেখে আমরা তদন্ত কাজ করছি। বিষয়গুলো হলো—ব্যাংকের লোন থেকে বাঁচতে, বিমা থেকে টাকা পেতে, গাড়ি পুড়িয়ে ফেললে মামলা দুর্বল করতে হতে পারে, অথবা যাঁরা তাঁদের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাঁরাও এই কাজ করতে পারেন। আশা করি, দ্রুত সময়ে মূল ঘটনা তুলে ধরতে পারব।’
এদিকে, অগি্নকাণ্ডের এ ঘটনার পর সাজ্জাদ হোসেন বরকতের স্ত্রী সুরাইয়া পারভীন বলেছেন, ‘গত বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি আমাদের বাসসহ মোট ৫৫টি গাড়ি আদালতের নির্দেশে সিআইডি জব্দ করার পর নতুন বাস টার্মিনালের পাশে একটি শেডের নিচে রাখা হয়। সম্প্রতি ম-আদ্যক্ষরের একজন ২০ লাখ টাকায় ওই জমি বিক্রির পর গাড়িগুলো খোলাস্থানে সরিয়ে রাখেন। মনে হচ্ছে, শত্রুতামূলক তাঁরাই এ আগুন দিয়েছেন।’
তবে অভিযুক্ত ব্যক্তি এ ঘটনা অস্বীকার করে বলেন, ‘এটা সত্য নয়। আমার জমি খালি করতেই ওখান থেকে বাসগুলো সরানো হয়।’ তিনি উল্টো বিষয়টিকে সাজানো নাটক বলে অভিহিত করেছেন।
পুলিশ জানায়, অর্থপাচার মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর বরকতের মালিকানাধীন ওই বাসগুলো আদালতের নির্দেশে জব্দ করে নতুন বাস টার্মিনালের কাছে রাখা ছিল।
বাসগুলো পাহারায় মালিকপক্ষের নিযুক্ত নৈশপ্রহরী শেখ মোহাম্মদ আলী (৫৫) জানান, শুক্রবার দিবাগত রাত ১টার দিকে তিনি প্রথমে একটি বাসে আগুন জ্বলতে দেখেন। সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার দিয়ে স্থানীয়দের নজরে আনেন এবং পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসে ফোন দেন। মানুষজন আসতে আসতেই ১০ মিনিটের মধ্যে অন্য গাড়িগুলোতেও আগুন লেগে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সারিবদ্ধভাবে খোলা জায়গায় রেখে দেওয়া গাড়িগুলোতে রহস্যজনকভাবে আগুন লাগে। আগুনে এতগুলো বাস পুড়ে যাওয়ার কারণ এখন পর্যন্ত জানাতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস।
ফরিদপুর ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক শিপলু আহমেদ বলেন, ‘খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখে সবকটি বাসেই আগুন জ্বলছে। এর মধ্যে কয়েকটি বাস আংশিক পুড়েছে। অগ্নিকাণ্ডের কারণ এখনও জানা যায়নি।’
শিপলু বলেন, ‘এ ছাড়া কোনো দাহ্য পদার্থ দিয়ে আগুন ধরানো হয়েছে কি না, তাও বলতে পারছি না এই মুহূর্তে।’
ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জামাল পাশা বলেন, ‘এই নাশকতার সঙ্গে কারা জড়িত, সেটি এখনও শনাক্ত করা যায়নি। এ বিষয়ে থানায় মামলা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ১৬ মে রাতে ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুবল চন্দ্র সাহার বাড়িতে হামলার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় গ্রেপ্তার হন বরকত, রুবেলসহ তাদের নয় সহযোগী। এরপর ঢাকার সিআইডি তাঁদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও অর্থপাচারের অভিযোগে দুই হাজার কোটি টাকা পাচারের মামলা করেন রাজধানীর কাফরুল থানায়। পরে আদালতের নির্দেশে বাসগুলো জব্দ করে সেখানে রাখা ছিল।
ব্যাপক আলোচিত অর্থপাচারের এ মামলায় বরকত ও রুবেল এখন কারাগারে। এই মামলায় গত ৫ মার্চ শুক্রবার রাতে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার হন সাবেক এলজিআরডিমন্ত্রী ও ফরিদপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ভাই খন্দকার মোহতেশাম হোসেন বাবর।