ঢাবি মেডিকেল আধুনিকায়নসহ ৬ দফা দাবিতে শিক্ষার্থীর অনশন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. মোর্তজা মেডিকেল সেন্টারের আধুনিকায়নসহ ৬ দফা দাবিতে অনশন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরমেন্স স্টাডিজ বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনি। গত শনিবার দুপুর থেকে মেডিকেল সেন্টারের তৃতীয় তলার ডেঙ্গু ইউনিটে এই অনশন শুরু করেন তিনি।
তার ছয় দফা দাবির মধ্যে রয়েছে- মেডিকেল সেন্টারের প্রবেশ পথে তথ্য কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে; প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য আধুনিক লিফট, র্যাম্প, হুইল চেয়ার ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক উপকরণ প্রদান করতে হবে। মেয়ে শিক্ষার্থীদের অন্তবর্তীকালীন শারীরিক সমস্যার সব চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় টিকা প্রদান করতে হবে। দ্রুত প্রয়োজনীয় আধুনিক চিকিৎসা সামগ্রী ও ওষুধ প্রদান এবং প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম বা যন্ত্রপাতি স্থাপন করতে হবে। মেডিকেল সেন্টার কর্তৃক নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার প্রদান ও ক্যান্টিন স্থাপন নিশ্চিত করতে হবে। হাইকমোড, তথা অত্যন্ত সজ্জিত স্যানিটেশন সিস্টেমে টয়লেট তৈরি করতে হবে।
অনশনের দ্বিতীয় দিনে তার সঙ্গে সংহতি জানিয়ে অনশনে যোগ দিয়েছেন একই বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শেখ রাহাতুল ইসলাম।
গত ৫ এপ্রিল থেকে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় বাম পা এবং কোমরে আঘাত পেয়ে এ মেডিকেল সেন্টারে ভর্তি হন রনি। যথাযথ চিকিৎসা ও সুযোগ-সুবিধা না পেয়ে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে সেখানকার ভোগান্তি, অনিয়ম এবং অব্যবস্থাপনা নিয়ে ২ মিনিট ৫৪ সেকেন্ডের একটি ভিডিও বার্তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করেন। ভিডিও বার্তা দেখে তার হলের প্রভোস্ট, পরিবারের সদস্য এবং হলের বন্ধু- বান্ধবরা রনিকে বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিতে চাইলে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে তিনি মেডিকেল সেন্টারে শনিবার দুপুর থেকে অনশনের সিদ্ধান্ত নেন।
এ বিষয়ে রনি বলেন, ‘২৪ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে অনশন চলছে। খাবার ও ঔষধপত্র সব ছেড়ে দিয়েছি। আমার শরীর দুর্বল হয়ে গেছে। কিন্তু আমার ৬ দফা দাবির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোনো সাড়া দেয়নি। আমি আর কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করব। এরপর আমরণ অনশন ঘোষণা করব। আমার একটি পা উৎসর্গ করে দেব। আর যদি এখান থেকে আমাকে বের হতেই হয় তাহলে আমার লাশ বের হবে।’
অনশনে সংহতি জানানো শিক্ষার্থী রাহাতুল ইসলাম বলেন, ‘আমি আমার বড় ভাইয়ের দাবিকে যৌক্তিক মনে করি। আমাদের মেডিকেল সেন্টারে অধিকাংশ শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মকর্ত-কর্মচারী সুচিকিৎসা পায় না। বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষের দ্বারপ্রান্তে এসে এটা কোনভাবেই কাম্য নয়। তাই এই ছয় দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমি অনশন চালিয়ে যাব।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত চিফ মেডিকেল অফিসার ডা. হাফেজা জামান বলেন, ‘ওকে বৃহস্পতিবার থেকে নিয়মিত চেকআপ করা হচ্ছে। যেই দিন ও কাউকে না পাওয়ার অভিযোগ করেছে সেইদিনও একজন ডাক্তার ওকে চেকআপ করেছে। আর হাসপাতালের আধুনিকায়নের ব্যাপারে রনি যে দাবি জানিয়েছে সেগুলো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হাতে, আমাদের হাতে নেই। আর তা আমি যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’
অনশনের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, ‘কেউ একজন অনশন ঘোষণা করলেই তো হয়ে গেল না। সবকিছুরই একটা প্রক্রিয়া আছে। অসুস্থ শিক্ষার্থীর সুস্থ হবার জন্য তো চিকিৎসা নেওয়া দরকার, সেখানে অনশন তো কোনো সমাধান হতে পারে না। তার চিকিৎসার সব ব্যবস্থার জন্য বলা হয়েছে। তার কাছে আমাদের দুটো পরামর্শ থাকবে, সে যেন সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করে এবং তার যদি কোনো পরামর্শ থাকে তাহলে আমাদের যেনো লিখিত আকারে দেয়।’