যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন চরমে, যা বললেন চীনা প্রতিরক্ষামন্ত্রী
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক সাম্প্রতিক সময়ে জটিল দিকে মোড় নিচ্ছে। এমন পরিপ্রেক্ষিতে চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওয়েই ফেংহে রোববার বলেছেন, দুদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উন্নতির বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল। খবর বার্তা সংস্থা রয়টার্সের।
রোববার এশীয় নিরাপত্তা বৈঠক শাংরি-লা সংলাপে চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী একাধিক বার বলেন—চীন আগ্রাসী নয় বরং শান্তি ও স্থিতিশীলতা চায়। সেইসঙ্গে তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ‘সংহতি জোরদার করতে এবং সংঘর্ষ ও বিভাজনের বিরোধিতা করার’ আহ্বান জানান।
এ ছাড়া চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানান, গতকাল শনিবার মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের বক্তৃতায় ‘গালিগালাজ, অভিযোগ এমনকি হুমকি’ চীন দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করছে।
শাংরি-লা সংলাপে পিপলস লিবারেশন আর্মির জেনারেলের ইউনিফর্ম পরিহিত চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওয়েই বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রকে আমরা চীনকে গালি দেওয়া এবং খাটো করে দেখা বন্ধ করার অনুরোধ করছি। চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা বন্ধ করুন। মার্কিন পক্ষ তা করতে না পারলে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উন্নতি হবে না।’
এর আগে গতকাল শনিবার অস্টিন বলেছিলেন, অন্যান্য দেশের সঙ্গে চীনা উড়োজাহাজ ও নৌযানের মধ্যে অনিরাপদ ও অপেশাদার সংঘর্ষ ‘উদ্বেগজনক হারে’ বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি আরও জানান, যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানসহ মিত্রদের পাশে থাকবে।
ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের বিষয়টি শাংরি-লা বৈঠকের প্রধান আলোচনার বিষয়ে পরিণত হয়েছে। বৈঠকে চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওয়েই বলেন, তাঁর দেশ শান্তি আলোচনাকে সমর্থন করে এবং ‘অস্ত্র সরবরাহ ও সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগের’ বিরোধিতা করে।
কারও নাম উল্লেখ না করে বা চীনের অবস্থান উল্লেখ না করে চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী প্রশ্ন করেন, ‘এ সংকটের মূল কারণ কী? এর পেছনে মূলহোতা কে? কার সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হলো? এবং কে সবচেয়ে বেশি লাভবান হলো? কারা শান্তির প্রচার করছে, আর কারা আগুনে ঘি ঢালছে? আমি মনে করি—এসব প্রশ্নের উত্তরগুলো আমাদের সবারই জানা।’
এর আগে গতকাল শনিবার ভিডিও লিঙ্কের মাধ্যমে দেওয়া ভাষণে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি শাংরি-লা বৈঠকে অংশ নেওয়া প্রতিনিধিদের উদ্দেশে বলেন, ইউক্রেনে রুশ আক্রমণ সমগ্র বিশ্বকে দুর্ভিক্ষ ও খাদ্য সংকটের ঝুঁকিতে ফেলেছে।
এদিকে, রোববার তাইওয়ানের ইস্যুতে চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওয়েই বলেন, দ্বীপরাষ্ট্রটির বিষয়ে চীনের অবস্থান অপরিবর্তিত রয়েছে। তাইওয়ানকে বেইজিং নিজেদের প্রদেশ গণ্য করে। ওয়েই বলেন, চীন সরকার তাইওয়ানের সঙ্গে ‘শান্তিপূর্ণ পুনর্মিলন’ চায়। তবে, ‘অন্যান্য বিকল্প’ ব্যবস্থাও তারা মাথায় রেখেছে।
ওয়েই বলেন, ‘চীন অবশ্যই (তাইওয়ানকে) একীকরণ বাস্তবায়ন করবে। যারা চীনকে বিভক্ত করার প্রয়াসে তাইওয়ানের স্বাধীনতা চাচ্ছে, তাদের পরিণতি অবশ্যই ভালো হবে না।’
এ ছাড়া চীন কোভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিশ্বব্যাপী প্রচেষ্টায় অবদান রেখেছে বলে উল্লেখ করেন চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী। এবং দক্ষিণ চীন সাগরীয় অঞ্চলের উন্নয়নে চীনের প্রচেষ্টা শান্তিপূর্ণ ছিল বলেও জানান তিনি।
চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘ছোট-বড়, দুর্বল বা শক্তিশালী—সব দেশই সমান। আমাদের একে অপরকে সম্মান করা উচিত এবং একে অপরকে সমান চোখে দেখা উচিত।’