ঢাবিতে চান্স না পেয়ে যা বললেন ৫৫ বছর বয়সী বেলায়েত
৫৫ বছর বয়সে যে বেলায়েত শেখ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষে ‘ঘ’ ইউনিটের অধীনে ১ম বর্ষ স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন, প্রকাশিত ফলাফলে তিনি অনুত্তীর্ণ হয়েছেন।
আজ মঙ্গলবার (৫ জুলাই) দুপুর ১টায় প্রকাশিত সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘ঘ’ ইউনিটের ফলাফলে বেলায়েত জিপিএসহ মোট ২৬ দশমিক ০২ পেয়েছেন। এর মধ্যে এমসিকিউ অংশে ৮ পেয়েছেন। বাংলায় ২, ইংরেজিতে ২.৭৫ এবং সাধারণ জ্ঞান অংশে পেয়েছেন ৩.২৫। এছাড়া তিনি লিখিত অংশে কোনো নম্বরই পাননি।
ফলাফল প্রকাশের পর বেলায়েত শেখের সাথে এনটিভি অনলাইনের কথা হয়। প্রকাশিত ফলাফলে আশাহত হয়ে ভারাক্রান্ত মনে তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমি এক সপ্তাহ যাবৎ অসুস্থ। এই অসুস্থ শরীরে অনেক আগ্রহ নিয়ে ফলাফল দেখার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। কিন্তু চান্স হলো না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আসলে আমার অনেক স্বপ্ন ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ার। সেই স্বপ্ন আর পূরণ হলো না। ভর্তি পরীক্ষা ভালোই দিয়েছিলাম। তবে এত কম নম্বর পাব ভাবিনি। আশা করেছিলাম পাস করবো। তবে সেটাও হলো না। আমার মনে হচ্ছে, লিখিত অংশের কোন নম্বর যোগ করা হয়নি।’
বেদনাহত স্বরে বেলায়েত বলেন, ‘আমার অনেক খারাপ লাগছে। আমার ভাগ্যটাই আসলে ভাল না। আল্লাহ আমাকে সৃষ্টিই করেছেন কষ্ট দিয়ে। জন্মের পর থেকে শুধু কষ্টই করলাম, সুখ আর পেলাম না। চেষ্টা করছি, চেষ্টা করে যাই। কি আর করার? কয়দিন আর বাঁচব? রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘এ’ ইউনিটে ২৬ তারিখে পরীক্ষা। ওটা দিব। সবার কাছে দোয়া চাই।’
বেলায়েতের পরীক্ষার ফলাফল শুনে পরিবারের সদস্যদের অনুভূতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ফলাফলের কথা আমার মাকে এখন পর্যন্ত জানাইনি। কারণ, আমার থেকে আমার মা-ই বেশি কষ্ট পাবে। আর পরিবারের সদস্যদের মধ্যে যারা আমার পরীক্ষা দেওয়াকে ভালভাবে নিত না তাদেরকেও জানানো হয়নি।’
এর আগে গত ১১ জুন উচ্চমাধ্যমিক পড়ুয়া তার ছোট ছেলেকে সাথে নিয়ে পরীক্ষা দিতে আসেন বেলায়েত। এ পরীক্ষায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত ভবনের ৮০২ নং কক্ষে তার সিট বরাদ্দ ছিল।
জানা যায়, যখন বেলায়েত হোসেনের বয়স ৫০ বছর তখন নবম শ্রেণিতে ভর্তি হন। এরপর ২০১৯ সালে তিনি রাজধানী ঢাকার দারুল ইসলাম আলিম মাদ্রাসা থেকে ৪ দশমিক ৪৩ জিপিএ পেয়ে এসএসসি পাস করেন। ২০২১ সালে রামপুরার মহানগর কারিগরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ৪ দশমিক ৫৮ জিপিএ পেয়ে এইচএসসি পাস করেন। অবশেষে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন পূরণে প্রস্তুতি নিতে একটি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিংয়ের মাওনা শাখায় ভর্তি হন।
উদ্যমী এই বেলায়েত শেখের জন্ম ১৯৬৮ সালে। গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার কেওয়া পশ্চিমখণ্ড এলাকার মৃত হাসেন আলী শেখ ও জয়গন বিবির ছেলে বেলায়েত শেখ। ছোটবেলা থেকেই খুব কাছ থেকে অভাব দেখেছেন। এর মধ্যেই পড়াশোনা চালিয়ে গেছেন।
বেলায়েত ১৯৮৩ সালে এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন। কিন্তু পারিবারিক অস্বচ্ছতা ও তার বাবার দুরারোগ্য ব্যাধির কারণে পড়াশোনা ছেড়ে পরিবারের হাল ধরতে হয়। ফলে, ১৯৮৩ সালে এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া হয়নি তার। এজন্য উচ্চশিক্ষা নেওয়ার স্বপ্নটাও আর পূরণ হয়ে ওঠেনি। পরবর্তীতে পূরণ না হওয়া সেই স্বপ্ন ভাই ও সন্তানদের মাধ্যমে পূরণ করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তাদের কেউই সফল হননি। এজন্য ৫০ বছর বয়সেই জেদ করে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে অবশেষে, ৫৫ বছর বয়সে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেন।