নামেই ১০০ শয্যা, সেবায় নেই ৫০ শয্যাও!
কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি নামে ১০০ শয্যার হলেও সুযোগ-সুবিধা নেই ৫০ শয্যারও। ফলে নদীবন্দর ও বাণিজ্য শহর হিসেবে অধিক জনবহুল এই উপজেলার দরিদ্র জনগোষ্ঠী সঠিক চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
এতে দিন দিন চিকিৎসা প্রত্যাশীদের ক্ষোভ বাড়ছে প্রতিষ্ঠানটির প্রতি। ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ মোকাবিলায় প্রতিদিন বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে এখানকার চিকিৎসক-নার্সসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের।
জানা যায়, ১৯৬৫ সালে স্থাপিত ভৈরব পল্লী স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি পর্যায়ক্রমে ১৯৭৭ সালে ৩১ শয্যার থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং ১৯৯৪ সালে ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রূপান্তরিত হয়। চলতি বছরের শুরুতে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ৩৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের অবকাঠামো নির্মাণ করে। অবকাঠামো নির্মাণের পর প্রশাসনিক অনুমোদনের আগেই গত ২০ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় সংসদ সদস্য ও বিসিবির সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন ‘ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৫০ শয্যা থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীতকরণ’ করা হয়েছে মর্মে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এবং উদ্বোধন করেন।
সেদিন পাপন তাঁর বক্তব্যে বলেন, আপনাদের স্বাস্থ্যসেবার চাহিদার দিকটি বিবেচনা করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিকে ৫০ থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীতকরণ করা হলো। খুব শিগগিরই প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদিসহ সব বিভাগের চিকিৎসাসেবা শুরু হবে। আপনাদের চাহিদা বেড়ে গেলে ১০০ শয্যা থেকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিকে ২০০ শয্যায় উন্নীতকরণ করা হবে। কিন্তু তাঁর উদ্বোধন এবং ঘোষণার পর প্রায় আট-নয় মাস অতিবাহিত হলেও হাসপাতালটির ১০০ শয্যার প্রশাসনিক অনুমোদনসহ আনুষঙ্গিক কার্যক্রমের কিছুই হয়নি। ফলে কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এলাকার জনগণ।
এদিকে প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক, নার্স, টেকনিশিয়ান, স্বাস্থ্য ও পরিচ্ছন্নকর্মীর সংকটের পাশাপাশি আছে পর্যাপ্ত ওষুধ স্বল্পতা। এ ছাড়া এক্স-রে, আল্ট্রাসনুগ্রাফি মেশিন প্রায়ই নষ্ট হয়ে পড়ে থাকে। অন্যদিকে প্রয়োজনীয় ল্যাব সরঞ্জাম ও ডেন্টাল বিভাগের যন্ত্রপাতি না থাকায় দরিদ্র জনগণকে বাধ্য হয়ে বাইরের প্রাইভেট হাসপাতাল ও ল্যাব থেকে সেবা গ্রহণ করতে হচ্ছে। এতে তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
জানতে চাইলে চিকিৎসা নিতে আসা বৃদ্ধা জমিলা বেগম ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ায় জানান, হোচট খেয়ে ভেঙে ফেলা পায়ের চিকিৎসা নিতে আসেন তিনি। টিকেটে নিয়ে এক ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে ডাক্তার দেখান। তিনি এক্স-রেসহ বিভিন্ন পরীক্ষা দেন। কিন্তু কোনো কিছুই হাসপাতাল থেকে করা যায়নি। বাইরের একটি ক্লিনিক থেকে করতে হয়েছে।
বৃদ্ধা জমিলার অভিযোগ, এমন হলে খামোখা এখানে এসে লাভ কী?
চিকিৎসা নিতে আসা সোহরাব মিয়া অভিযোগ করেন, সকাল গিয়ে দুপুর গড়িয়ে গেলেও ডাক্তার পাওয়া যায় না। এক সপ্তাহে এক ডাক্তার দেখালে পরের সপ্তাহে এসে দেখেন আগের ডাক্তার নেই। ওষুধ তিনটি লেখলে একটি পাওয়া যায়। চিকিৎসার নামে এখানে তারা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। ভৈরব এমনিতেই একটি জনবহুল এলাকা। এ ছাড়া নদী, সড়ক ও রেলপথের সহজ যোগাযোগের কারণে পাশের জেলা নরসিংদী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া এলাকার একটা বড় অংশের জনগণসহ হাওরাঞ্চলের মানুষ ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থেকে সেবা নিয়ে থাকে। এই বাড়তি জনগণের স্বাস্থ্যসেবাকে সুনিশ্চিত করতে ১০০ শয্যার প্রশাসনিক অনুমোদনসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ দ্রুত প্রত্যাশা করেন উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. ইকবাল হোসেন ও হাজি আসমত আলী এতিম বালিকা শিশু সদনের তত্ত্বাবধায়ক মো. সাইদুর রহমান বাবলু।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. কিশোর কুমার ধর জানান, বর্তমানে হাসপাতালটিতে ৫০ শয্যার সুবিধা আছে। কিন্তু রোগী ভর্তি থাকে প্রতিদিন ৭০ থেকে ৮০ জন। এই অতিরিক্ত ২০ থেকে ৩০ জন শয্যা পায় না। থাকতে হয় ফ্লোরে। বরাদ্দের খাবার, ওষুধসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও পায় না তারা। এরাই তাদের সঙ্গে ক্ষোভ দেখায়, বাইরে গিয়ে বদনাম করে। এসব সমস্যা সমাধানে তিনি অবিলম্বে ঘোষিত ১০০ শয্যার কার্যক্রমের অনুমোদন প্রত্যাশা করেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. বুলবুল আহমেদ বলেন, এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ভৌগোলিক কারণে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এসব দিক বিবেচনা করে এটিকে ৫০ থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীতকরণ করা হলেও এখনও প্রশাসনিক অনুমোদন হয়নি। তাই জনগণ তাদের প্রত্যাশিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। প্রশাসনিক অনুমোদনসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা প্রদানে স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি।