সরকার পুরোনো খেলা শুরু করেছে : রিজভী
শেষ রক্ষা পেতে সরকার আবারও সেই পুরোনো খেলা শুরু করেছে অভিযোগ করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে জনগণ ফুঁসে উঠেছে। তাদের সকল অন্যায়-অবিচার-অপকর্মের বিচার দেশের জনগণ করবেই। আর যারা এই নিশিরাতের সরকারকে সহযোগিতা করছেন, তারা এসব বন্ধ করুন। জনগণের পায়ের আওয়াজ শুনুন। শেখ হাসিনার ১৫ বছরের অবৈধ মসনদ খান খান হয়ে যাবে। শেষ রক্ষা পেতে সরকার আবারও সেই পুরোনো খেলা শুরু করেছে।’
আজ বুধবার দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ‘এই নিশিরাতের সরকার পতনের শেষ প্রান্তে পৌঁছে ১০ ডিসেম্বর বিএনপির কর্মসূচিকে নিয়ে ‘পোড়া মাটি নীতি’ অবলম্বন করেছে। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ টিকিয়ে রাখার জন্য বিরোধীদলীয় কর্মসূচিকে বানচাল করতে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বিএনপির নেতাকর্মীদের হত্যা-নির্যাতন ও মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। গণমাধ্যমের শিরোনাম হচ্ছে অসংখ্য ককটেল ফাটানোর অভিযোগে পুলিশের মামলা দায়ের, কিন্তু কেউ ককটেল ফুটতে দেখেনি বা শোনেনি। কাওরান বাজারে ককটেল বিস্ফোরণ মামলায় আসামি বিএনপি নেতাকর্মীরা। কিন্তু ককটেল বিস্ফোরণের কোনো শব্দ পায়নি এলাকাবাসী।’
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জে পুলিশের মামলায় জাপানে থাকা প্রবাসী ছাত্রদল নেতা গায়েবি মামলার আসামি। সেই পুরোনো কায়দায় সারা দেশে আবারও গায়েবি মামলার হিড়িক চলছে। বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মাহবুবুল ইসলাম মাহবুবকে গতরাতে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে মোহাম্মদপুরের বাসা থেকে উঠিয়ে নিয়ে গেলেও এখনও পর্যন্ত তার কোনো হদিস দিচ্ছে না। এ নিয়ে দল ও তার পরিবার গভীর উৎকণ্ঠায় রয়েছে। তাকে ডিবি পুলিশই তুলে নিয়ে গেছে। আমি অবিলম্বে তাকে জনসমক্ষে হাজির করার আহ্বান জানাই।’
রিজভী অভিযোগ করে বলেন, ‘গত রোববার ছাত্রদলের সাবেক নেতা ও ২০১৮ সালের শরীয়তপুর-৩ আসনের বিএনপি মনোনীত ধানের শীষের প্রার্থী মিয়া নুরুদ্দীন অপুকে দুদকের একটি ফরমায়েশি ভুয়া মামলায় ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে আদালতে হাজির করা হয়। তিনি অত্যন্ত অসুস্থ। বিএনপির একজন সাবেক সংসদ সদস্য প্রার্থীকে এহেন নিপীড়ন-নির্যাতন-অসম্মান নজীরবিহীন। কোনো সভ্য সমাজে এই ধরনের জুলুম-নির্যাতন-ডাণ্ডাবেড়ি পরানোর মতো ন্যক্কারজনক ঘৃণ্য-বর্বরোচিত চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের কাজ হতে পারে না। মিয়া নূর উদ্দিন অপু কোন খুন বা ডাকাতি মামলার আসামি নন। তিনি বর্তমান ফ্যাসিস্ট সরকারের ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলার আসামি।’
রিজভী বলেন, ‘জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ কারাবন্দিদের জন্য রাষ্ট্রের তরফ থেকে অনুসৃত যে ন্যূনতম নীতিমালা তৈরি করেছে। সেখানকার ৩৩ নং অনুচ্ছেদে ডাণ্ডাবেড়ি পরানোকে অমানবিক বলা হয়েছে। ২০১৭ সালের ১৩ মার্চ এবং ২০১৮ সালের ৮ অক্টোবর বাংলাদেশের হাইকোর্ট বেঞ্চ কোনো আদালতের এজলাসে বিচারাধীন আসামিকে ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে কাঠগড়ায় তোলার বিরুদ্ধে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন। তাকে দীর্ঘদিন কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে, জামিনও দেওয়া হচ্ছে না-যা অমানবিক ও মানবাধিকারের লঙ্ঘন। আমি অবিলম্বে মিয়া নুর উদ্দিন অপুর মুক্তি এবং ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে হাতে হ্যান্ডকাফ দিয়ে আদালতে তোলার জন্য দায়ী কারা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।’
সারা দেশে বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা-মামলা-গ্রেপ্তারের চিত্র তুলে ধরে রিজভী আরও বলেন, ‘রাজশাহী জেলাধীন বাগমারা উপজেলা বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ও গণিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলাম রঞ্জুকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। জামিন হওয়ার পরেও গত ২৮ নভেম্বর ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি’র সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক মো. আশরাফুজ্জাহান জাহানকে কারাফটক থেকে পুনরায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ-ডেমরা থানাধীন ৬৪ (পূর্ব) নং ওয়ার্ড বিএনপি’র সহ-সভাপতি জাকির হোসেন বাবুল এবং সহ-কোষাধ্যক্ষ মজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।’
রিজভী আরও বলেন, ‘গাজীপুরের শ্রীপুর, কালিয়াকৈর, কালীগঞ্জে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেতা হুমায়ুন কবির খান, কালিয়াকৈর উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি হেলাল উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক পারভেজ আহমেদসহ অসংখ্য নেতাকর্মীর নামে চারটি গায়েবি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলার বাদী পুলিশ এবং আওয়ামী লীগের ক্যাডাররা। ঝালকাঠি জেলাধীন রাজাপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট তালুকদার আবুল কালাম আজাদ, সাধারণ সম্পাদক মো. নাসিম উদ্দিন আকনসহ বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদলের ২৬ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ৮০ জনকে আসামি করে বিস্ফোরক আইনসহ দণ্ডবিধি আইনে গায়েবি মামলা দায়ের করেছে উপজেলা আওয়ামী লীগ এর দপ্তর সম্পাদক।’
রিজভী বলেন, ‘গত ২৫ নভেম্বর রাতে ৫০ জন নেতাকর্মীকে আসামি করে শিবগঞ্জ থানায় বিস্ফোরক আইনে গায়েবি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মৃত ও বিদেশ থাকে এমন নেতাকর্মীদেরকেও আসামি করা হচ্ছে। শিবগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি মীর শাহ আলম এই মামলার ১নং আসামি, তিনি গত ১৫ দিন যাবৎ দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। বিদেশে থাকা অবস্থায় তার নামে মিথ্যা, বানোয়াট ও কাল্পনিক গল্প সাজিয়ে মামলা দিয়েছে ভোটারবিহীন সরকার।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির যুববিষয়ক সম্পাদক মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, সহ-স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, নির্বাহী কমিটির সদস্য তারিকুল ইসলাম তেনজিং প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।