প্রধানমন্ত্রীর সময় শেষ, তাই তাড়াহুড়ো করে মেট্রোরেল উদ্বোধন : শামসুজ্জামান দুদু
মেট্রোরেলের রাস্তা হচ্ছে ৫১ কিলোমিটার। ৫১ কিলোমিটার শেষ করার সময় প্রধানমন্ত্রী কাছে নাই, এজন্য তাড়াহুড়ো করে ১০ থেকে ১১ কিলোমিটার মেট্রোরেল উদ্বোধন করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ‘দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলন’-এর আয়োজনে বেগম খালেদা জিয়া, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মির্জা আব্বাস, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালাম, অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী, খায়রুল কবির খোকন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, এ বি এম মোশাররফ হোসেন, সেলিমুজ্জামান সেলিম, মাওলানা শাহ্ মো. নেছারুল হকসহ সকল রাজবন্দিদের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আপনি বুঝতে পেরেছেন আর সময় বেশি নাই, আপনাকে চলে যেতে হবে। ক্ষমতা থেকে চলে যেতে হবে। আজ আপনি মেট্রোরেল উদ্বোধন করেছেন। যে মেট্রোরেলের রাস্তা হচ্ছে ৫১ কিলোমিটার। একান্ন কিলোমিটার এর কাজ শেষ করার পরে আপনি উদ্বোধন করবেন এটাই ছিল স্বাভাবিক। কিন্তু ১০ থেকে ১১ কিলোমিটার হওয়ার পরে আপনি উদ্বোধন করেছেন। তাহলে কি আমরা বুঝে নেব ৫১ কিলোমিটার এর কাজ শেষ করার সময় আপনার নাই। এইজন্য কি তাড়াহুড়া করে মেট্রোরেল উদ্বোধন করেছেন?’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, ‘আপনি জোর করে হোক, ভোট চুরি করে হোক তিনবারের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। আপনারতো এই বোধ আছে যে মানুষ এখন কত নিগৃহীত। আপনার বিরুদ্ধে, আপনার সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে দেশের মানুষের কি অবস্থা হয়েছে এটা তো আপনি বুঝতে পারেন। নাকি আমাদেরকে বুঝিয়ে বলতে হবে?’
ছাত্রদলের সাবেক এই সভাপতি বলেন, ‘আমরা দশ তারিখে দশ দফা উত্থাপন করেছি। সেই দাবিগুলো বাস্তবায়ন হলে রাষ্ট্র মেরামতের ২৭টি পয়েন্টের কথা বলেছি সেগুলো বাস্তবায়ন করব। আমরা ২৪ তারিখে প্রোগ্রাম করতে চেয়েছিলাম আপনাদের অনুরোধে ৩০ তারিখ করেছি। এরই মধ্যে আপনারা নেতাকর্মীদেরকে গ্রেপ্তার শুরু করেছেন। ইতোমধ্যে একজন শহীদ হয়েছেন। এইভাবে আপনি ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না। এটা মুক্তিযোদ্ধার জাতি।’
তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী খুব শক্তিশালী ছিল তারা কিন্তু টিকতে পারে নাই। জনগণের যখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায় তখন বিদ্রোহ করা ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। একাত্তরের দিকে তাকালে পানির মতো পরিষ্কার হয়ে যাবে। যত অন্যায়কারী জুলুমবাজ গত দুইশ বছরে বাঙালিদের উত্ত্যক্ত করেছে তারা ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। এখনো সময় আছে গণতন্ত্র ফেরত দেন, পদত্যাগ করুন, তা না হলে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আপনাকে বিদায় করা হবে।’
সাবেক এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘পাকিস্তান আমলে যখনই গণতন্ত্রের কথা বলা হয়েছে তখনই অত্যাচার করেছে তারা। শেখ মুজিবুর রহমান সাহেব ৭০ এর নির্বাচনে জয়লাভ করার পরে তাকে ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। যার কারণে পাকিস্তান ধ্বংস হয়ে গেছে। এটা বাঙালিদের দোষ না। এটা পাকিস্তানিদের দোষ। এখনও যদি গণতন্ত্র ফেরত দেওয়া না হয়, স্বাধীনতা ফেরত দেওয়া না হয়, আন্দোলনের গর্জনে আপনাকে (শেখ হাসিনা) পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হবে।’
কৃষক দলের সাবেক এই আহ্বায়ক বলেন, ‘আর ৩-৪ দিন পরে নতুন বছর আসছে, আমি নিশ্চিত নতুন বছর হবে নতুন সরকারের বিজয় বার্তা। আল্লাহ ছাড়া কোনো শক্তি নাই এই অবধারিত বিজয়কে কেউ বাধা দেয়। এই সরকারের ভাত দেওয়ার ক্ষমতা নাই, চাকরি দেওয়ার ক্ষমতা নাই, কিল দেওয়ার গোসাই। এই সরকারের লোকজন সব ব্যাংক থেকে টাকা লুটপাট করে ব্যাংকগুলোকে ফোকলা বানিয়ে দিয়েছেন। বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশ এ সরকারের বিপক্ষে। আমেরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন তাদের বিপক্ষে। কোনো দেশের রাষ্ট্রদূত কারো বাড়িতে গেলে অপমান-অপদস্থ হতে হয়। এ কেমন দেশে বাস করছি আমরা।’
সরকারের উদ্দেশে শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেন, তারেক রহমানকে দেশে আনার ব্যবস্থা করেন। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মির্জা আব্বাসসহ রাজবন্দিদের মুক্তি দেন। যদি মুক্তি না দেন তাহলে আমরা জেল গেট ভেঙে বের করে নিয়ে আসব। যেভাবে শেখ মুজিবুর রহমানকে পাকিস্তানের জেলখানা থেকে বের করে নিয়ে এসেছিলাম, সেইভাবে রাজবন্দিদের বের করে নিয়ে আসব।’
সংগঠনের সভাপতি কে এম রকিবুল ইসলাম রিপনের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, পিরোজপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক আলমগীর হোসেন, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান তামান্না, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) সহ-সভাপতি আসাদুর রহমান খান, মৎস্যজীবী দলের সদস্য সচিব আব্দুর রহিম প্রমুখ।