অনৈতিক প্রস্তাবে না বলায় পরীক্ষায় ফেল করানোর হুমকির অভিযোগ ঢাবি শিক্ষকের বিরুদ্ধে
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের এক শিক্ষকের অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় এক শিক্ষার্থীকে পরীক্ষায় ফেল করানোর হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ওই ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মো. নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ তুলে ভুক্তভোগী ওই নারী শিক্ষার্থী ইনস্টিটিউটের পরিচালক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
ভুক্তভোগীর ভাষ্য অনুযায়ী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের সান্ধ্যকালীন কোর্সের একজন স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী তিনি। এর বাইরে তিনি একটি সরকারি চাকরীও করেন। তিনি জানান, শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের সময় অভিযুক্ত শিক্ষক নুরুল ইসলাম ওই শিক্ষার্থীকে নানাভাবে বাজে ইঙ্গিত করতেন। একাকী ওই শিক্ষকের কক্ষে যাওয়ারও প্রস্তাব দিতেন। কিন্তু ওই শিক্ষকের অনৈতিক প্রস্তাবে সাড়া না দেওয়ায় ওই শিক্ষার্থীর গবেষণাপত্রে তিনি স্বাক্ষর করেননি, যাতে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী চূড়ান্ত মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিতে না পারেন। পরে ওই শিক্ষার্থী বিষয়টি পরীক্ষা কমিটির সভাপতি ও অন্যান্য কোর্স শিক্ষকদের জানালে তাদের সহযোগীতায় তিনি মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। মৌখিক পরীক্ষার পর গবেষণাপত্রে স্বাক্ষরের জন্য ওই শিক্ষকের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি গবেষণাপত্রে স্বাক্ষর করবেন না বলে জানান এবং পরবর্তী সময়ে ইনস্টিটিউটে তার সাথে সাক্ষাৎ করলে ওই শিক্ষার্থীকে ফেল করিয়ে দিবেন বলে হুমকি দেন। পরে এ বিষয়ে সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন ওই শিক্ষার্থী।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমি গরীব ঘরের মেয়ে। আমি ছোট্ট একটা সরকারি চাকরি করি। চাকরিতে প্রমোশনের আশায় এখানে (ঢাবির সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে) সান্ধ্যকালীন কোর্সে মাস্টার্সে ভর্তি হয়েছিলাম। কিন্তু আমার ওই শিক্ষক (অভিযুক্ত) আমাকে হুমকি দিয়েছেন যে, আমার এ সার্টিফিকেট কোনোভাবেই নাকি কাজে লাগাতে দিবেন না। উনি আমাকে এমন হুমকি দিয়েছেন যে, উনিসহ উনার সহকর্মীদের দিয়েও আমাকে এমন রেজাল্ট করিয়ে দিবেন, যাতে আমি ফেল করি। এজন্য আমার ব্যক্তিগত আশঙ্কা থেকেই মূলত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আমি এই আবেদনটা জানিয়েছি। আমি শুধু এটুকুই চাই যে, আমার লেখা অনুযায়ী যেন আমার খাতা মূল্যায়ন করা হয়। আমি আসলে কারো বিরোধিতা করতে চাই না, আমি শুধু আমার পরীক্ষার খাতায় আমার প্রাপ্য নম্বরটাই যেন পাই, এটাই আমার একমাত্র আবদার। আমি কারো শত্রু হতে চাই না, কাউকে শত্রু বানাতেও চাই না।’
ভুক্তভোগী আরও বলেন, ‘উনি আমাকে বিভিন্ন সময় উনার রুমে একা একা যেতে বলেছেন। এছাড়া যখন আমি ক্লাসে যেতাম তখন উনি আমাকে বিভিন্নভাবে ইঙ্গিত করতেন। আমি তো মেয়ে, আমি আসলে বুঝি যে, কে কিভাবে তাকাচ্ছে, কে কিভাবে ইঙ্গিত করছে। আমি ভেবেছিলাম যে, উনি শিক্ষক, সম্মানী মানুষ। উনি হয়তো ভবিষ্যতে নিজেকে শোধরাবেন। কিন্তু তিনি যে আমার শিক্ষা এবং চাকরি জীবনে প্রভাব ফেলবেন, এটা আসলে আগে বুঝতে পারিনি। উনি আমাকে কন্টিনিউয়াসলি হুমকি দিচ্ছেন। সেই প্রেক্ষিতেই আমি পরিচালক মহোদয় এবং উপাচার্য স্যারের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।’
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত শিক্ষক অধ্যাপক ড. মো. নুরুল ইসলাম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। অভিযোগকারীকে ডকুমেন্টস শো করতে বলেন।’
সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. মো. গোলাম আজমকে মুঠোফোনে কল দিলে তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে ফোনে আমি কিছু বলতে চাইনা।’
এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘এখন পর্যন্ত কোনো লিখিত অভিযোগ আমি হাতে পাইনি। তবে হাতে পেলে বিস্তারিত জেনে এ ব্যাপারে বলতে পারবো।’