সমন্বয়ের অভাবে কার্যকর হচ্ছে না নিরাপদ খাদ্য আইন
সরকারের একাধিক মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণে নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩ বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না। ফলে আইন থাকার পরও জনগণের নিরাপদ খাদ্যপ্রাপ্তি বিষয়টি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে।
গতকাল বুধবার রাজধানীর খামারবাড়িতে ‘নিরাপদ খাদ্য সম্মেলন-২০১৬’ শীর্ষক সেমিনার আয়োজন করে বাংলাদেশ ফুড সেফটি নেটওয়ার্ক। সম্মেলনের বক্তারা এ কথা বলেন।
খাদ্য উৎপাদনে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার, মাছ ও ফলে ফরমালিন, অন্যান্য প্যাকেটজাত খাবারে ভেজাল ও ক্ষতিকারক রং ব্যবহার বন্ধে নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩ প্রণয়ন করা হয়। কিন্তু আইন প্রণয়নের পর দুই বছর অতিবাহিত হলেও এটি কেবল কাগজে-কলমেই রয়ে গেছে।
আইন বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টদের কোনো বাস্তব পদক্ষেপ নেই বলে সম্মেলনে বক্তারা মনে করেন। তাঁরা বলেন, আইন প্রয়োগের দুর্বলতা বড় সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি সভাপতি ও সাবেক খাদ্যমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, জনগণের জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতেই সরকার আইন প্রণয়ন করেছে। কিন্তু আইনের বাস্তবায়ন একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এ জন্য সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে জনগণের সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। কারণ, আইন অনেক আছে, অনেক হয়েছে; কিন্তু আইনের বাস্তবায়নটা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ফুড সেফটি নেটওয়ার্কের অন্যতম সদস্য সংগঠন হাঙ্গার ফ্রি ওয়ার্ল্ডের কান্ট্রি ডিরেক্টর আতাউর রহমান মিল্টন বলেন, আইনটি তৈরির পর কে বাস্তবায়ন করবে, এ নিয়ে ১৩টি মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। সমন্বয়হীনতা দূর করে নিরাপদ খাদ্য আইন বাস্তবায়নে সরকার ‘নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ’ গঠন করেছে। তার পরও আইনের প্রয়োগ হচ্ছে না। আইন বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা নিজেরাই আইনটি ভালোভাবে বোঝেন না বলে তিনি মন্তব্য করেন।
সেমিনারে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) বাংলাদেশের প্রতিনিধি মাইক রবসন বলেন, নিরাপদ খাদ্যের বিষয়টি সফলভাবে নিশ্চিত করতে হলে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংগঠন ও জনগণকে যৌথভাবে কাজ করতে হবে। একই সঙ্গে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষকে আইন বিষয়ে জনগণকে অবহিত করার পাশাপাশি সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করতে হবে।
সেমিনারে সমাজের সর্বস্তরে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়। সুপারিশে বলা হয়, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষকে আইন সম্পর্কে সারা দেশে জনসচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। মাধ্যমিক ও উচ্চ পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে পুষ্টিবিদ নিয়োগ দিতে হবে। আইন বাস্তবায়নে নাগরিক ও পেশাজীবী সংগঠনগুলোকে সম্পৃক্ত করে দেশের জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে ‘নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থপনা সমন্বয় কমিটি’ তৈরি করতে হবে।
আলোচনায় উঠে আসা সুপারিশগুলো সরকার বিবেচনা করবে বলে আশ্বাস দেন অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি সভাপতি ড. আবদুর রাজ্জাক।
বাংলাদেশ ফুড সেফটি নেটওয়ার্ক নিরাপদ খাদ্য বিষয়ে জনসচেতনতামূলক ও নিরাপদ খাদ্যপ্রাপ্তি নিয়ে কাজ করে এমন পাঁচটি সংগঠনের একটি নেটওয়ার্ক। যেটি জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার অধীনে পরিচালিত হয়।
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ফুড সেফটি নেটওয়ার্কের সভাপতি ফরিদা আক্তার, এফএওর ফুড সেফটি প্রোগ্রামের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ড. শ্রীধর ধর্মাপরী, আয়ারল্যান্ডের ডুবলিন ইউনিভার্সিটি কলেজের অধ্যাপক অ্যালান রিলেই প্রমুখ।