প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনের আঙিনা যেন ফসলি মাঠ। বিশাল এই আঙিনায় ধান, শাক-সবজি, ফুল-ফল, মধু ও মাছ চাষের পাশাপাশি চলছে হাঁস-মুরগি, কবুতর, গরু পালন। তিল-সরিষার মতো পেঁয়াজও চাষ করেছেন এদেশের মাটি ও মানুষের সঙ্গে বেড়ে ওঠা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। মোট চাষের প্রায় অর্ধেক জমির পেঁয়াজ কাটা হয়েছে। এতে ফলন পাওয়া গেছে ৪৬ মন। বাকি জমিতে আরও ৫০ মনেরও বেশি পেঁয়াজ পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এসব ফসল ফলাতে ব্যবহার করা হয়েছে গণভবনের গরুর খামারে উৎপাদিত জৈব সার।

বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) এক প্রতিবেদনে গতকাল রোববার এ তথ্য জানিয়েছে। তথ্য থেকে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈশ্বিক খাদ্য সংকট মোকাবিলায় দেশের জনগণকে প্রতি ইঞ্চি জমিতে আবাদের আহ্বান জানিয়েই ক্ষান্ত হননি, নিজেও তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনের অব্যবহৃত প্রতি ইঞ্চি জমি কাজে লাগিয়েছেন। গ্রামের গৃহস্তবাড়ির মতো পুরো গণভবনকে প্রায় একটি খামার বাড়িতে পরিণত করে সৃষ্টি করেছেন এক বিরল উদাহরণ।

দেশি পেঁয়াজের বর্তমান বাজার দর ৩৫ থেকে ৪০ টাকা কেজি। এতে গণভবনে ফলন পাওয়া ৪৬ মন পেয়াজের দাম আসে আনুমানিক ৬৫ হাজার থেকে ৭৩ হাজার টাকা। পাঁচজনের মধ্যবিত্ত একটি পরিবারে মাসে পাঁচ কেজি হিসেবে পেঁয়াজের প্রয়োজন ধরলে গণভবনে উৎপাদিত প্রায় ১০০ মন পেঁয়াজে ৭০০ থেকে ৮০০ পরিবারের এক মাসের পেঁয়াজের চাহিদা পূরণ হবে।

করোনা মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, স্যাংশন-পাল্টা স্যাংশনে টালমাটাল বিশ্বে খাদ্য ও নিত্যপণ্যের সংকট দেখা দেওয়ার পর থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর প্রায় প্রতিটি বক্তব্যে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করছেন। তিনি সরকারি, বেসরকারি ও দলের সব অনুষ্ঠানে প্রতি ইঞ্চি জমি আবাদের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়ে আসছেন।

প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈশ্বিক খাদ্য সংকট মোকাবিলায় দেশের জনগণকে প্রতি ইঞ্চি জমিতে ফসল ফলানোর আহ্বান জানিয়ে আসছেন। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি নিজে গণভবন আঙিনার পতিত প্রতি ইঞ্চি জমিকে উৎপাদনের আওতায় এনেছেন এবং জনগণের প্রতি করা নিজের আহ্বানকে বাস্তবে রূপদান করে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থপন করেছেন।’

প্রেস সচিব বলেন, ‘এদেশের আলো-হাওয়ায় বেড়ে ওঠা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাধারণ জীবন যাপনে অভ্যস্ত। দেশের মাটি-মানুষ, কৃষির সঙ্গে মিশে আছে তাঁর প্রাণ।’

সূত্র জানায়, গণভবন আঙিণায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাঁশফুল, পোলাওয়ের চাল, লাল চালসহ বিভিন্ন জাতের ধান, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লালশাক, পালং শাক, ধনেপাতা, গ্রাম-বাংলার জনপ্রিয় বতুয়া শাক, বরোকলি, টমেটো, লাউ, সিমসহ প্রায় সব ধরনের শীতকালীন শাক-সবজি চাষ করছেন।

এ ছাড়া, গণভবনে তিল, সরিষা, সরিষা ক্ষেতে মৌমাছি পালনের মাধ্যমে মধু আহরণ, হলুদ, মরিচ, পেঁয়াজ, তেজপাতাসহ বিভিন্ন ধরনের মশলা, আম, কাঁঠাল, কলা, লিচু, বরই, ড্রাগন, স্ট্রবেরিসহ বিভিন্ন ধরনের ফল, গোলাপ, সূর্যমুখী, গাঁদা, কৃষ্ণচূড়াসহ বিভিন্ন ধরনের ফুলেরও চাষ করছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি অবসর পেলেই এসব তদারকিও করেন বলে গণভবন সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

গণভবনের আঙিনায় আলাদা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গরুর খামার, দেশি হাস-মুরগি, তিতির, চীনা হাঁস, রাজহাঁস, কবুতরের খামার করেছেন। তিনি গণভবন পুকুরে চাষ করছেন রুই-কাতলা, তেলাপিয়া, চিতলসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। এমনকি, গণভবন পুকুরে মুক্তার চাষও করছেন শেখ হাসিনা। অবসর সময়ে গণভবনের লেকে মাছ ধরেন তিনি।

গণভবন সূত্র জানায়, উৎপাদিত এসব নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের জন্য সামান্য রেখে গণভবন কর্মচারী এবং দরিদ্র-অসহায় মানুষের মধ্যে বিলিয়ে দেন।