বিএনপিনেতা সালাহ উদ্দিনকে দেশে ফিরিয়ে আনতে মির্জা ফখরুলের আহ্বান
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদকে সসম্মানে দেশে ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘বিনা কারণে অন্যায়ভাবে দীর্ঘ আট বসর ভারতে কারাগারে ও নজরবন্দি অবস্থায় কাটাতে হয়েছে, তাকে ভারতের সর্বোচ্চ আদালত বেকসুর খালাস দেওয়ার পর দেশে ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব সরকারের। আমরা বাংলাদেশ সরকারের নিকট আহ্বান জানাচ্ছি—সালাহ উদ্দিন আহমেদকে মুক্ত অবস্থায় অবিলম্বে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করুন।’
আজ বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) বিকেল গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সালাহ উদ্দিন আহমেদকে অবিলম্বে আমাদের মধ্যে ফেরত চাই। ভারতের সর্বোচ্চ আদালতের রায় ও নির্দেশের প্রেক্ষিতে অবিলম্বে বাংলাদেশের এক শীর্ষ রাজনৈতিক নেতাকে অবিলম্বে স্বসম্মানে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর জন্য ভারত সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছি। আহ্বান জানাচ্ছি তার মানবাধিকার সমুন্নত রাখার জন্য, সম্মানিত করার জন্য।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সালাহ উদ্দিন আহমেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সময়ের মেধাবী ছাত্র ছিলেন। ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ও কেন্দ্রীয় সংসদের এককালীন ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি আইনজীবী ছিলেন, এক সময়ের বিচারক ছিলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সহকারী একান্ত সচিব ছিলেন, এমপি-মন্ত্রী ছিলেন। তার বর্ণাঢ্য জীবনে কোনো কালিমা লাগেনি। তিনি বর্তমানে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সালাহ উদ্দিন আহমেদ বিগত দীর্ঘ ৮ বছর যাবত ভারতে মিথ্যা মামলা মোকাবিলা করে নির্বাসিত জীবনযাপন করতে বাধ্য হয়েছেন। ভারতীয় আদালতে তাকে অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে অভিযুক্ত করে বিচারের সম্মুখিন করা হয়। তিনি বিচারিক আদালত ও আপিল আদালতের রায়ে বেকসুর খালাসপ্রাপ্ত হয়েছেন। তার বেকসুর খালাসের রায়ের মাধ্যমে এটি প্রমাণিত হয় যে, সালাহ উদ্দিন আহমেদকে বাংলাদেশের এই অবৈধ সরকার চক্রান্ত করে সীমাহীন নির্যাতন ও হয়রানি করেছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘২০১৫ সালে ১০ মার্চ তারিখ রাত প্রায় ১০ টার সময় আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে কিছু সাদা পেষাকধারী স্বশস্ত্র সদস্যরা উত্তরার এক বন্ধুর বাসা থেকে সালাহ উদ্দিন আহমেদকে তুলে নিয়ে যায়। দীর্ঘ ৬১ দিন অজ্ঞাত স্থানে তাকে গুম করে রাখা হয়। অবশেষে, ১০ মে চোখবাঁধা অবস্থায় একটি গাড়িতে করে তাঁকে দীর্ঘ পথযাত্রা করিয়ে ১১ মে ভোররাতে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের রাজধানী শিলংয়ের গলফ লিংক রাস্তার ওপর ফেলে রেখে যায়। এ ঘটনার কিছুক্ষণ পর সালাহ উদ্দিন আহমেদ নিজেই চোখ খুলে স্থানীয় পথচারীদের সহায়তায় শিলং পুলিশের কাছে তাঁর পরিচয় এবং বিস্তারিত ঘটনা তুলে ধরলে পুলিশ তাকে ভারতের ফরেনার্স এ্যাক্ট, ১৯৪৬ এর বিধানমতে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে গ্রেপ্তার করে।’
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘সালাহ উদ্দিন আহমেদ ভারতের আদালতে বিচারকালীন সময়ে রাষ্ট্রপক্ষের সমস্ত স্বাক্ষ্যপ্রমাণ মোকাবিলা ও খণ্ডন করে এবং নিজের পক্ষে ৭০টি দালিলিক প্রমাণ ও সাফাই স্বাক্ষী উপস্থাপন করে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন যে, তিনি বাংলাদেশে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে সাদা পোষাকধারী কিছু স্বশস্ত্র ব্যক্তিদের দ্বারা অপহরণ ও গুম হয়েছিলেন এবং ওই অপহরণকারীরা তাকে চোখ বাঁধা অবস্থায় সেখানে ফেলে রেখে আসে। ভারতীয় আদালত পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে সমস্থ স্বাক্ষ্য ও দলিল সমূহ পর্যালোচনা করে তাকে বেকসুর খালাস প্রদান করেন এবং তাকে বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করানোর জন্য ভারত সরকারকে নির্দেশনা প্রদান করেন। সেই রায়ের বিরুদ্ধে ভারত সরকার আপিল করলে মাননীয় আপিল আদালতও বিচারিক আদালতের বেকসুর খালাসের রায় ও প্রত্যাবর্তন করানোর নির্দেশনার আদেশ বহাল রাখেন।’