ট্রেনে ওঠার আগেই জরিমানার টিকেট ধরিয়ে দিচ্ছে রেল
রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশন। ঈদুল ফিতরের দ্বিতীয় দিনের সকাল। স্টেশনের টিকেট কাউন্টারের সামনে দাঁড়াতেই দেখা গেল, গোল হয়ে থাকা কিছু মানুষের জটলা। জটলার কারণ খুঁজতে আরেকটু সামনে এগিয়ে দেখা গেল, রেলওয়ের পাঁচজন টিকেট পরীক্ষক বাড়তি দামে স্ট্যান্ডিং টিকেট বিক্রি করছেন। মূলত তাঁদের ঘিরেই মানুষের জটলা তৈরি হয়েছে।
এখানে কেন টিকেট বিক্রি করা হচ্ছে, একজন টিকেট পরীক্ষকের কাছে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘এই দেখেন, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের বাড়তি ভাড়ার টিকেট। এখানে দাঁড়িয়ে স্ট্যান্ডিং টিকেট বিক্রি করা হচ্ছে। কাউন্টার থেকে ২৫ শতাংশের বেশি স্ট্যান্ডিং টিকেট বিক্রি করার নিয়ম নেই। ফলে, এর বাইরে যেসব লোক আসছেন, তাদের কাছে আমরা ৫০ টাকা বাড়তি দামে টিকেট বিক্রি করছি।’
২৫ শতাংশের অতিরিক্ত যে লোকগুলো আসছে, তাদেরও তো যেতে হবে। টিকেট না দিলে তারা যাবে কীভাবে? এমন প্রশ্ন রেখে ওই টিকেট পরীক্ষক বলেন, ‘এটা নিয়ে ঠিক স্থানে গিয়ে প্রশ্ন তুলুন। আমাদের এভাবে কাজ করতে বলা হয়েছে, আমরা করছি।’
এ সময় টিকেট পরীক্ষকের পাশে থাকা এক যাত্রী বলে ওঠেন, ‘কাউন্টার বন্ধ। কাউন্টার থেকে টিকেট দিচ্ছে না। আবার এখানে দাঁড়িয়ে টিকেট বিক্রি করছে রেলের লোকজনই। সবাই সিন্ডিকেট করে এই কাজ করছে।’
ওই সময় টিকেট পরীক্ষকের নাম জিজ্ঞেস করা হলে তিনি তার নাম বলেন। কিন্তু, সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে আরেকবার নাম জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘আমার নাম দিয়ে কী করবেন? প্রশ্ন থাকলে স্টেশন মাস্টার বা ম্যানেজারের কাছে করেন। আমাদের গণমাধ্যমে কথা বলার অনুমতি নেই। রেল কর্তৃপক্ষ আমাদের বাড়তি ভাড়ার সিল দিয়ে টিকেট বিক্রি করতে বলছে। আমরা তাই করছি। দেখেন, টিকেটেও বাড়তি ভাড়ার কথা লেখা আছে।’
টিকেট পরীক্ষকের সঙ্গে কথা বলার সময় ঘড়ির কাঁটায় বেলা পৌনে ১১টা। তখন একই স্থানে মোট পাঁচজন টিকেট পরীক্ষক ছিলেন। তারা সবাই বাড়তি ভাড়ায় টিকেট বিক্রি করছেন। তাঁদের একজন নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘আপনি দেশের যে প্রান্তেই যাবেন, আপনাকে ৫০ টাকা বেশি দিয়ে আমাদের কাছ থেকে স্ট্যান্ডিং টিকেট নিতে হবে। এক স্টেশনের ভাড়া বেশি দিতে হবে। এক স্টেশনের ভাড়া কমপক্ষে ৫০ টাকা।’ এ বিষয়ে আরও তথ্য জানতে স্টেশন ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন তারা।
রেলের টিকেট চেকিং সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, মূলত কোনো যাত্রীকে যখন বিনা টিকেটে ভ্রমণের জন্য জরিমানা করা হয়, তখন মূল ভাড়াসহ কমপক্ষে এক স্টেশনের ভাড়া জরিমানা করা হয়। সেভাবেই এই টিকেট দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু, এভাবে টিকেট দেওয়ার তো নিয়ম নেই। যাত্রী টিকেট ছাড়া ট্রেনে ওঠার পর মূলত জরিমানা করা হয়। গেটের বাইরে বা টিকেট কাউন্টারের সামনে থেকে টিকেট দেওয়া নিয়ম নেই।’
এসব ব্যাপারে জানতে স্টেশন ম্যানেজার মাসুদ সারওয়ারের অফিস কক্ষে গিয়েও তাঁকে পাওয়া যায়নি। পরে তাঁর মুঠোফোনে কয়েকবার কল করেও বন্ধ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা শাহ আলম কিরণ শিশিরের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি ধরেননি।