ইতালি এখনও বাধ্যতামূলক যৌনশিক্ষার বিরুদ্ধে
ইউরোপের বেশির ভাগ দেশেই যৌনশিক্ষা বাধ্যতামূলক৷ হাতেগোনা যে কয়েকটি দেশ যৌনশিক্ষাকে পাঠক্রমভুক্ত করার বিপক্ষে, ইতালি তাদের মধ্যে অন্যতম৷ ৪৮ বছর ধরে চেষ্টা চলছে, কিন্তু কোনো কাজ হয়নি৷
ইতালিতে যৌনশিক্ষাকে স্কুলের পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত করার প্রথম জোরালো পদক্ষেপটি নেওয়া হয়েছিল ১৯৭৫ সালে৷ তারপর থেকে গত ২০২১ সালের আগ পর্যন্ত আরও অন্তত ১৪ বার একই দাবি তোলা হয়েছে৷ কিন্তু প্রতিবারই সরকার সে আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে বা আবেদনকারীদের অপেক্ষায় থাকার পরামর্শ দিয়েছে৷
২০২১ সালে ইতালির ইতিহাসে ১৬তম বারের মতো তৎকালীন সরকারের কাছে এ দাবি তুলেছিলেন স্টেফানিয়া আসারি৷ কিন্তু ফলাফল একই, অর্থাৎ সরকারের সেই এক জবাব, কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে সারা দেশে যৌনশিক্ষা বাধ্যতামূলক করা সম্ভব নয়৷
ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে শুধু যে ইতালিতেই যৌনশিক্ষা বাধ্যতামূলক নয়, তা কিন্তু নয়৷ আরও আটটি দেশে যৌনশিক্ষা এখনও পাঠক্রমের বাইরে৷ সে দেশগুলো হলো বুলগেরিয়া, পোল্যান্ড, রোমানিয়া, লিথুয়ানিয়া, হাঙ্গেরি, স্লোভাকিয়া, ক্রোয়েশিয়া ও স্পেন৷
জার্মানিসহ ইউরোপের বেশির ভাগ দেশেই স্কুল পর্যায়ে যৌনশিক্ষা বাধ্যতামূলক৷ যেসব দেশের শিক্ষার্থীরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌনতার ভালো-মন্দ জানতে পারছে না, সেসব দেশে শিক্ষার্থীরা ইন্টারনেটে প্রয়োজনীয় জ্ঞান আহরণের জন্য প্রচুর সময় কাটাচ্ছে৷
মিলান বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিকেল সায়েন্স বিভাগের সাইকোথেরাপিস্ট এবং গবেষক আলবার্তো পেল্লাই জানান, ইতালিতে শিশু-কিশোরদের এই প্রবণতা বেশ উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে৷ তার কাছে অবশ্য শিশু-কিশোরদের যৌনতা সম্পর্কে ধারণা নিতে ইন্টারনেটের দিকে ঝুঁকে পড়া বড় কোনো সমস্যা নয়৷ বড় সমস্যা হলো—ইন্টারনেটে যৌনতা সম্পর্কে বিজ্ঞানসম্মত সঠিক তথ্য পাওয়া খুব কঠিন৷
বেশিরভাগ ওয়েবসাইটে একেবারে মিথ্য বা অর্ধসত্য পরিবেশন করা হয়েছে, অনেক ক্ষেত্রে যৌনতাকে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে—যা খুবই হিংস্র ও অমানবিক৷ এমন অবৈজ্ঞানিক জ্ঞান নিয়ে যৌনকর্ম করার কারণে অনেক শিশু-কিশোরের খুব অল্প সময়ের মধ্যে সেক্সুয়েলি ট্রান্সমিটেড ডিজিজ (এসটিডি) অর্থাৎ ক্লামিডিয়া এবং সিফিলিসের মতো যৌনবাহিত রোগ হয়ে যায়৷
ইতালিতে পাঠক্রমে যৌনশিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি আঞ্চলিক সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে৷ কিন্তু বিশ্লেষকরা মনে করেন, কেন্দ্রীয় সরকার সারা দেশে যৌনশিক্ষা বাধ্যতামূলক না করলে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন কখনও আসবে না৷ তারা মনে করেন, যৌনশিক্ষার বিষয়টিকে পরিবার এবং বাবা-মায়দের ওপর ছেড়ে দেওয়া কোনো সমাধান নয়৷
ইতালির সেক্সোলজি সেন্টার (সিআইটেস)-এর প্রোসিডেন্ট মারিয়া ক্রিস্টিনা ফ্লোরিনি মনে করেন, ‘স্কুলগুলোতে শিক্ষকদের উচিত শিক্ষার্থীদের সারা বছর ধরে যৌনশিক্ষা দেওয়া, কারণ কোন শিক্ষার্থী কেমন তা তারা খুব ভালো জানেন।’