ইউক্রেনজুড়ে ‘বৃষ্টির’ মতো ক্ষেপণাস্ত্র হামলা!
১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ৯ মে হিটলারের নাৎসি সেনাদের পরাজিত করেছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন বাহিনী। আর সেই থেকেই এ দিনটিকে ‘বিজয় দিবস’ হিসেবে পালন করে মস্কো। আর এই দিন উপলক্ষে রাতে ইউক্রেনজুড়ে ‘বৃষ্টির’ মতো ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন ও বিমান হামলা চালিয়েছে রুশ বাহিনী। আজ সোমবার (৮ মে) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে লন্ডনভিত্তিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্স।
হামলার বিষয়ে ইউক্রেন বলছে, রাশিয়া রাতে হামলার জন্য ইরানের তৈরি যে ৩৫টি শাহেদ ড্রোন উৎক্ষেপণ করেছিল সবগুলোই আমাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে।’ আর কিয়েভ মেয়র বলেছেন, রাজধানীতে রুশ হামলায় পাঁচজন আহত হয়েছেন। তাদের হামলায় জ্বালানি ডিপো, যানবাহন, ভবন ও অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।’
এদিকে, কৃষ্ণ সাগরের তীরবর্তী ইউক্রেনীয় শহর ওড়েশায় রুশ ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে একটি খাদ্য গুদাম পুরোপুরিভাবে ভস্মীভূত হয়ে গেছে। এ হামলায় আহত হয়েছে অন্তত তিনজন।
রয়টার্স প্রতিবেদনে জানিয়েছে, মার্চের পর সর্বশেষ ১০ দিনে আকাশ পথে ইউক্রেনে হামলা জোরদার করেছে রাশিয়া। এর মধ্যে গতকাল রাতে সবচেয়ে বেশি হামলা চালিয়েছে রুশ বাহিনী।
বাখমুত দখলের জন্য মস্কো হামলা জোরদার করছে বলে দাবি করছে কিয়েভ। তারা বলছে, ‘পশ্চিমের ছোট শহর বাখুমতের নিয়ন্ত্রণ নিতে সর্বশেষ প্রচেষ্টা চালাচ্ছে রাশিয়া। দেশটির বিজয় দিবস উপলক্ষে নিজেদের জনগণকে ব্যয়বহুল এই উপহার দিতে চায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।’
ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় খারকিভ, খেরসন, মাইকোলাইভ এবং ওড়েশায় ১৬টি রকেট আঘাত হেনেছে। এ ছাড়া ইউক্রেনীয় বাহিনীর অবস্থান ও জনবহুল এলাকাতে ৫২ রকেট আঘাত হেনেছে। সামরিক বাহিনী বলছে, ‘দুর্ভাগ্যবশত, হামলায় বেসামরিক নাগরিক হতাহত হয়েছে। এ ছাড়া সুউচ্চ ভবন, ব্যক্তিগত বাড়ি ও অন্যান্য বেসামরিক অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’
এদিকে, বিজয় দিবস উপলক্ষে আগামীকাল মস্কোতে প্যারেড অনুষ্ঠিত হবে। ক্যালেন্ডারের এদিনকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে ধরে পুতিনের অধীনে থাকা রাশিয়ার। ১৯৪৫ সালের এই দিনেই নাৎসিদের পরাজিত করে সোভিয়েত ইউনিয়ন। এই দিনে ইউক্রেন আগ্রাসনকে ন্যায্যতা দিতে মরিয়া পুতিন।
নাৎসিদের সঙ্গে যখন সোভিয়েত ইউনিয়ন যুদ্ধ করেছিল তখন এই ভূখণ্ডের অংশ ছিল ইউক্রেন। জার্মান নাৎসিদের হারাতে রুশদের থেকে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল ইউক্রেনের মানুষেরা। ইউক্রেন ৮ মে বিজয় দিবস পালনে আগ্রহী। কারণ, এটি করে তারা রাশিয়া থেকে কিছুটা আলাদা থাকতে চায়।
এক বিবৃতিতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, ‘নাৎসিদের সঙ্গে যুদ্ধে আমাদের কয়েক লাখ সৈন্য বীরত্ব দেখিয়েছিল। আজও আমাদের সৈন্যদের মধ্যে সেই বীরত্ব দেখা যাচ্ছে। দুর্ভাগ্যবশত, শয়তান আবার ফিরে এসেছে। ওই সময়ের মতো আজও আমাদের শহর ও গ্রামগুলোতে শয়তানদের কার্যক্রম দেখা যাচ্ছে। আজও আমাদের মানুষদের হত্যা করা হচ্ছে, যেমনটা ওই সময়ও করা হয়েছিল। পুরনো শয়তানের মতো আধুনিক রাশিয়াকেও পরাজিত করা হবে।’
কিয়েভে হতাহতের বিষয়টি জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টেলিগ্রামে এক পোস্টে কিয়েভ মেয়র ভিটালি ক্লিটসকো লেখেন, ‘পশ্চিমাঞ্চলীয় সোলোমিয়ানস্কি ডিস্ট্রিক্টে একটি বিস্ফোরণে তিনজন আহত হয়েছেন। এ ছাড়া ডিস্ট্রিক্টটিতে ড্রোন হামলায় আরও দুজন আহত হয়েছেন।’
কিয়েভের প্রশাসন জানিয়েছে, জুলিয়ানি বিমানবন্দরের রানওয়েতে একটি ড্রোন আঘাত হেনেছে। তবে, এতে হতাহত বা অগ্নিকাণ্ডের মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি। ড্রোনের ধ্বংসাবশেষ শেভচেনকিভস্কির একটি বহুতল ভবনে আঘাত করেছে। এতে ভবনটির ক্ষতি হয়েছে।
ইউক্রেনের স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো বলছে, রাতে ইউক্রেনের দুই তৃতীয়াংশ ভূখণ্ডে আকাশ প্রতিরক্ষার সাইরেন বেজে উঠে। খেরসনের দক্ষিণাঞ্চলে ও জাপোরিঝিয়া দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া গেছে।
জাপোরিঝিয়ায় রাশিয়ার নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ভ্লাদিমির রঘব বলেন, ‘রুশ বাহিনী ওরিখিভ শহরের একটি গুদাম এবং ইউক্রেনীয় সেনাদের অবস্থানে আঘাত করেছে।’ তবে, বিষয়টি স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি রয়টার্স।