টিকটকার খুন, খালাতো ভাইসহ গ্রেপ্তার ২
গাজীপুরে দাম্পত্য কলহ ও পারিবারিক বিরোধের প্রতিশোধ নিতে এক টিকটকার বিউটিশিয়ানকে হাত-পা বেঁধে খুন করেছেন তাঁর স্বামী, খালাতো ভাইসহ হত্যাকারীরা। এ ঘটনায় তাঁর মা বাদী হয়ে আজ সোমবার (৫ জুন) থানায় মামলা করেছেন।
ঘটনার সময় হত্যাকারীরা বোরকা পরে ওই পার্লারে গিয়ে টিকটকার বিউটিশিয়ানকে বেঁধে শ্বাসরোধে হত্যা করেন।
পুলিশ ঘটনার সঙ্গে জড়িত এক নারীসহ নিহত বিউটিশিয়ানের খালাতো ভাইকে গ্রেপ্তার করলেও তাঁর স্বামী পলাতক রয়েছেন। গ্রেপ্তার করা ব্যক্তিরা হলেন—গাজীপুর সদর উজেলার জয়দেবপুর থানাধীন খুদে বর্মী এলাকার সোমা রাণী ঘোষ (৩০) ও সদর থানাধীর আদাবৈ এলাকার নিহত বিউটিশিয়ানের খালাতো ভাই রাকিবুল ইসলাম (২২)।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউল ইসলাম জানান, গতকাল রোববার রাতে আদাবৈ এলাকার ‘রাজকন্যা বিউটিপার্লার’-এর একটি কক্ষ থেকে ওই রুবিনা আক্তারের (২৪) হাত-পা বাঁধা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় নিহত রুবিনার মা আছিয়া বেগম বাদী হয়ে আজ থানায় মামলা করেন। পুলিশ ঘটনার সঙ্গে জড়িত খালাতো ভাই রাকিবুল ইসলাম ও সোমা রাণী ঘোষকে গ্রেপ্তার করে। তবে, নিহত রুবিনার স্বামী ঘটনার পর থেকেই পলাতক রয়েছেন। গ্রেপ্তার দুই আসামিকে আদালতের মাধ্যমে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
ওসি আরও জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার হওয়া দুজন হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত জিনিস জব্দ করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের আগে খুনিরা ঘটনাস্থল রেকি করেছিল।
ওসি বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানান প্রায় বছর খানেক আগে মৃদুল ঘোষকে ভালোবেসে বিয়ে করেন বিউটিশিয়ান রুবিনা আক্তার। এটি রুবিনার তৃতীয় বিয়ে। এ বিয়ের দেনমোহর ২০ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়। রুবিনা গাজীপুর সদরের আদাবৈ এলাকার আব্দুস ছালাম তালুকদারের মেয়ে। স্বামী মৃদুল ঘোষ সদর উজেলার জয়দেবপুরের খুদে বর্মী এলাকার বাসীন্দা। বিউটিপার্লারের ব্যবসার পাশাপাশি রুবিনা টিকটক করতেন। সম্প্রতি তিনি পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। বিষয়টি মৃদুল জেনে গেলে তাদের মধ্যে দাম্পত্য বিরোধের সৃষ্টি হয়। এর জেরে মৃদুলকে বটি দিয়ে কুপিয়ে ও মারধর করে ঘর থেকে বের করে দেন ও দেনমোহরের ২০ লাখ টাকা দাবি করেন রুবিনা। দেনমোহরের টাকা পরিশোধ না করলে নানাভাবে হয়রানি করারও হুমকি দেন রুবিনা। এসব থেকে পরিত্রাণ পেতে ও প্রতিশোধ নিতে মৃদুল বিষয়টি রুবিনার খালাতো ভাই রাকিবুলকে জানান।’
ওসি জিয়াউল ইসলাম বলেন, ‘এদিকে রাকিবুলদের সঙ্গে দীর্ঘদিন পারিবারিক বিরোধ চলে আসছিল রুবিনার পরিবারের। এ সুযোগকে কাজে লাগাতে সমস্যা সমাধান করার আশ্বাস দিয়ে মৃদুলকে সঙ্গে নিয়ে রুবিনাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন রাকিবুল। এ কাজের জন্য রাকিবুল একজোড়া নূপুর ও তিন হাজার টাকা চান মৃদুলের কাছে। খুনের কাজে সহযোগিতার জন্য নগদ পাঁচ হাজার টাকা ও বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে সম্পর্কীয় পিসতুতো বোন সোমা রাণী ঘোষকে ভাড়াটিয়া খুনি হিসেবে ঠিক করেন মৃদুল। পরে পরিকল্পনা অনুযায়ী মৃদুল ও সোমাকে দুটি বোরকা সরবরাহ করেন রাকিবুল। ঘটনার দিন বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ওই বোরকা পরে সোমা ও রুবিনার স্বামী মৃদুল একটি অটোরিকশায় চড়ে রুবিনার রাজকন্যা বিউটিপার্লারে যান। তারা পার্লারের কক্ষে ঢুকে রুবিনাকে মেঝেতে শুইয়ে হাত-পা বেঁধে ফেলেন। পরে একটি তোয়ালে দিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। এ সময় বাইরে দাঁড়িয়ে পাহারা দেন রাকিবুল। হত্যার পর সেখান থেকে মৃদুল ও সোমাকে একটি মোটরসাইকেলে নিয়ে আমতলী এলাকায় পৌঁছে দেন তিনি।’