সরকারি ক্যাডাররা কন্ট্রাক্ট কিলিংয়ে মেতেছে : রিজভী
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘বিএনপিসহ গণতন্ত্রকামী মানুষদের বিরুদ্ধে সরকারি ক্যাডাররা এখন কন্ট্রাক্ট কিলিং, টার্গেট কিলিংয়ে মেতে আছে। শেখ হাসিনার বাহিনীরা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকেও নিপীড়ন-নির্যাতনে হার মানিয়েছে।’
আজ রোববার (১৮ জুন) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এসব কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘দেশবাসী ভোট, পার্লামেন্ট হারিয়েছে, গণতন্ত্র ও আইনের শাসন হারিয়েছে, হারিয়েছে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা। শেষমেষ হারাতে বসেছে জীবন ও স্বাধীনতা। যারা গণতন্ত্র, মতপ্রকাশের স্বাধীনতাসহ নাগরিক স্বাধীনতা ফিরে পাওয়ার জন্য সংগ্রাম করছে, তারা বর্তমান মারাত্মক দুর্দিনের মধ্যে দিনযাপন করছে। বর্তমান শাসকগোষ্ঠী জনগণ কর্তৃক ধিকৃত হয়ে রাজনৈতিক পরিস্থিতির টালমাটাল অবস্থার সৃষ্টি করে সহিংসতা আর হত্যাকেই শ্রেষ্ঠ সমাধান হিসেবে মনে করছে। বিএনপিসহ গণতন্ত্রকামী মানুষের বিরুদ্ধে সরকারি ক্যাডাররা এখন কন্ট্রাক্ট কিলিং, টার্গেট কিলিংয়ে মেতে আছে।’
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সমালোচনা করে বিএনপিনেতা রিজভী বলেন, ‘সন্ত্রাসকে জীবনের শ্রেষ্ঠ কীর্তি বলে মনে করছে তারা। হত্যা, জখম করে কদিন পর আবার আরেকটি খুন-জখমের জন্য উন্মাদ হয়ে ওঠে তারা। অবৈধ সরকারের দুঃশাসনের প্রোডাক্ট হচ্ছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। সন্ত্রাস তাদের মানসিক ব্যাধি।’
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘দুদিন আগে জামালপুরের বকশিগঞ্জে সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিম আওয়ামী লীগের নেতা মাহমুদুল আলম বাবুর বিরুদ্ধে সত্য সংবাদ প্রকাশ করার কারণে তাকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা করেছে। প্রথমে নাদিমসহ দুজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ১৭ মে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করে বাবু চেয়ারম্যান। মামলাটি আদালতে খারিজ হয়ে গেলে মাহমুদুল আলম বাবু চেয়ারম্যান সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে তাকে বেধড়ক পিটিয়ে মাথায় আঘাত করার পরে হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানেই তার মৃত্যু হয়। একদিকে সরকারি ক্ষমতা, অন্যদিকে ঊর্ধ্বতন একজন পুলিশ কর্মকর্তার ভাই হওয়ায় বাবু চেয়ারম্যান এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। মৃত্যু যেন তার কাছে খেলা।’ এ সময় সাংবাদিক নাদিমকে পিটিয়ে হত্যার ভিডিও গণমাধ্যমকর্মী কাছে তুলে ধরেন তিনি।
রিজভী বলেন, ‘নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মো. রাহাদুল আমিন রবিনের ওপর উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক শেখ কামাল পারভেজ শোয়েবসহ ওসমান, অনিক, শহিদুল, আবিদ, আলফাজ, জিসান ছাড়াও অজ্ঞাত ১০ থেকে ১৫ জন ছাত্রলীগ-যুবলীগের সশস্ত্র ক্যাডাররা অতর্কিতে হামলা চালিয়ে গুরুতর জখম করেছে।’
রুহুল কবির রিজভী আরও বলেন, ‘রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বরে ফাস্টফুড বিক্রেতা হাফিজুল ইসলামকে প্রকাশ্যে হত্যা করে যুবলীগ সন্ত্রাসীরা। তার অপরাধ সে যুবলীগের ডাকে মিছিলে অংশ নেয়নি। যুবলীগকর্মী আসাদুজ্জামানসহ কয়েকজন সরাসরি এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত বলে পুলিশ জানিয়েছে।’
রিজভী বলেন, ‘আমরা আগেই জানিয়েছিলাম, চট্টগ্রামের তারুণ্যের সমাবেশ থেকে বাড়ি ফেরার পথে মীরেরসরাই উপজেলার জোরারগঞ্জ থানা এলাকায় ছাত্রদল নেত্রী নাদিয়া নুসরাতকে নির্যাতন ও গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে প্রেরণের ঘটনা। সেখানে নির্যাতনের খবর পেয়ে নুসরাতের মা কহিনুর বেগম ছুটে গেলে তাকেও বেধড়ক মারধর করা হয়। জোরারগঞ্জ থানার ওসি জাহিদ হোসেন ও ডিউটি অফিসার সঞ্জয় কুমার সাহা তার অভিযোগ গ্রহণ না করে উল্টো নাদিয়া নুসরাতের বিরুদ্ধে ২০২২ সালের একটি গায়েবি মামলায় তাকে জড়িত করে। একটি মনুষ্যত্বহীন সরকার ক্ষমতায় আছে বলেই নারীরা আজ আতঙ্কের এক ভয়াল বিচ্ছিন্ন দ্বীপে বাস করছে।’
রিজভী আরও বলেন, ‘বরিশালের গৌরনদী উপজেলায় কেন্দ্রীয় যুবদলের সহসভাপতি কামরুজ্জামান দুলাল দলীয় সমাবেশে যোগদান শেষে ঢাকা ফেরার পথে বাসস্ট্যান্ডে তার আত্মীয় জাকির হোসেনের আড়তের বসে চা পান করে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন। পরবর্তীতে স্থানীয় মালিপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আলমগীর কবিরাজের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী আড়তে তালা ঝুলিয়ে দেয়। এ ব্যাপারে গতকাল দৈনিক প্রথম আলো ও সমকালসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়।’ তিনি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
এই বিএনপিনেতা বলেন, ‘এই বাংলাদেশের জন্য কি ৩০ লাখ মানুষ জীবন দিয়েছিল, দুই লাখ মা-বোন নির্যাতন সয়েছিল? আওয়ামী সরকারের বিরোধীদের জীবন কাটে হামলা-মামলা-গুমের আতঙ্কে। নিষ্ঠুর রাজদণ্ড এখন প্রতিনিয়ত নির্মমভাবে নির্বিচারে নেমে এসেছে জনগণের পিঠে। গুম-খুন-ক্রসফায়ারের প্রকোপ আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। আওয়ামী সন্ত্রাসীরা মনে হয় দেশব্যাপী মধ্যযুগীয় উইচ হান্টিংয়ের অমানবিকতার পুনরাবৃত্তির প্রতিযোগিতা করছে।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিতি ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল ও সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ প্রমুখ।