এক হাসপাতালেই ১১ দিনে নয়জন ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু
চলতি মাসের ১১ দিন আজ। এই ১১ দিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর এক হাসপাতালেই মারা গেছে নয়জন। আর গত মাসে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ১৫। হাসপাতালটি ৫০০ শয্যার। অথচ, চলতি মাসের এই কদিনেই ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন এক হাজার ২৪৫ জন। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় ছিল ১৬০ জন। বর্তমানে এই রোগে চিকিৎসাধীন ৪৭৭ জন। গত সোমবার সকাল থেকে আজ মঙ্গলবার (১১ জুলাই) সকাল পর্যন্ত মুগদা মেডিকেলে ডেঙ্গুতে মারা গেছে একজন।
বলছিলাম, মুগদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের কথা। হাসপাতাল সূত্র বলছে, এমনিতেই রোগীর চাপ অনেক বেশি। তারপর আবার প্রতিদিন বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। ফলে, রোগীর অবস্থা শঙ্কামুক্ত হলেই তাকে ছাড়পত্র দেওয়া হচ্ছে। কারণ, নতুন আসা রোগীকে জায়গা দিতে হচ্ছে।
আজ দুপুরে হাসপাতালের ১০ তলায় সরেজমিন দেখা যায়, কোথাও তিল ঠাঁই নেই। অবস্থাটা এমন, ১১ তলার সিঁড়ি থেকে নেমে দ্রুত হাঁটার সুযোগ নেই। সিঁড়ির সোজা সামনের ফ্লোরেও ডেঙ্গুরোগীর বিছানা বিছানো। কারণ, রোগীর চাপ অধিক। ১০ তলায় রোগী রাখার আর মোটেও জায়গা না থাকায় ১১ তলায় ফ্লোরে রোগী রেখেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
সেখান থেকে তিন তলার নারী ওয়ার্ডে (ডেঙ্গু) গিয়ে দেখা যায়, বেড খালি না থাকলেও ফ্লোর পুরোপুরি ভরাট হয়নি এখনও। অন্যদিকে, শিশু ওয়ার্ডের অবস্থাও প্রায় একই। রোগী ও রোগীর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে; ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ায় তারা ভয়ে রয়েছে।
এসব বিষয় নিয়ে কথা বলার এক পর্যায়ে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মো. নিয়াতুজ্জামান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমাদের ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে গতকাল সোমবার সর্বমোট এক হাজার ১৪০ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। আগে চিকিৎসক ও নার্সের সংকট ছিল। কিন্তু, সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে চিকিৎসক ও নার্স নিয়োগ দিয়েছে। ফলে, সংকট কেটে গেছে। এখন সংকট শুধু ডেঙ্গু রোগীর জন্য জায়গা দিতে না পারার। সেজন্য, ডেঙ্গু রোগীদের জন্য ওয়ার্ড বাড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছি। সামনে আরও রোগীর সংখ্যা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’
মুগদা হাসপাতালের ১০ তলায় শাহরীন আক্তার নামের এক নারীর সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তার স্বামী ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত। এ হাসপাতালের ফ্লোরে থাকছেন তিনি। নাম সবুর হোসেন। শাহরীন বলেন, ‘জানি না কী হবে। তবে, ভয় লাগছে। প্রতিদিন মানুষ মরছে। আমাদের পরিবারের সবাই গত তিন মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে।’
ছয় বছরের শিশু মারিয়া সুলতানা। সেও ডেঙ্গু আক্রান্ত। নোয়াখালী থেকে এসেছে তারা। মারিয়ার মা আবিদা সুলতানা বলেন, ‘আমার একটিই মেয়ে। ওর কিছু হয়ে গেলে আমাদের আর আনন্দের কিছুই থাকবে না। ওই আমাদের সব আনন্দের উৎস। তবে, আমার মেয়ের অবস্থা আগের চেয়ে ভালো। তবে, আমার পাশের বেডের এক শিশুর অবস্থা অনেক খারাপ। ওর মা-বাবার কান্না দেখে আমিই কেঁদে ফেলেছি। আল্লাহ সবাইকে রক্ষা করুক।’
নারী ওয়ার্ডে গিয়ে কথা হয় শাহনা বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমার জ্বর হয় গত ৩ জুলাই। হাসপাতালে আসি গত শুক্রবার। তারপর রিপোর্ট পজিটিভ আসে। এখন আগের চেয়ে একটু ভালো আছি। কিন্তু, ঠিকমতো ডাক্তার আসে না। আজ সকাল থেকে বসে আছি ডাক্তার আসবে বলে। কিন্তু, এখন বিকেল ৪টা বাজে; এখনও ডাক্তার আসেননি।’
শাহনার বেডে পাশে বসে ছিলেন তার স্বামী মো. আজাদ। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছিলেন, ‘সিটি করপোরেশন থেকে ওষুধ স্প্রে করে যখন, তখনই বেকল মশাগুলো উড়ে ওপরে ওঠে। একটু পরে আবার মশার স্থানে মশা চলে আসে। ধোঁয়া ছাড়া ওষুধের গন্ধও পাওয়া যায় না। কী স্প্রে করে, আল্লাহ জানেন। চারদিকে দুর্নীতির মহোৎসব চলে। সব ভুয়া ওষুধ দিয়ে টাকা মেরে দেয়। দাঁড়িয়ে দেখি এসব। কিন্তু, মশা মরতে দেখি না।’
মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডা. মো. নিয়াতুজ্জামান বলছিলেন, ‘ডেঙ্গু রোগী আরও বাড়তে পারে। ফলে, সতর্ক থাকতে হবে সবাইকে। সর্বপ্রথম সতর্ক থাকতে হবে দেশের নাগরিকদের। যেন পানিতে ডেঙ্গুর লার্ভা না জমে। পাশাপাশি সিটি করপোরেশন বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আরও সতর্ক হতে হবে। সারা দেশ থেকেই ডেঙ্গু রোগী আসছে আমাদের হাসপাতালে।’