চমকের কাছে অনৈতিক সুবিধা চাওয়ার অভিযোগের ব্যাখা দিলেন আরশ
সাম্প্রতিক সময়ে নাটক পাড়ায় আলোচনায় তরুণ অভিনেত্রী রুকাইয়া জাহান চমক ও অভিনেতা আরশ খান। আলোচনা কাজে নয়, তির ছোড়াছুটিতে। গত ৪ আগস্ট একটি শুটিং ইউনিটে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে চমক অভিযোগ করেছেন, আরশ তাঁর কাছে অনৈতিক সুবিধা চেয়েছেন। আর আরশ বলছেন, ঘটনা ভিন্ন দিকে ঘোরাতে এমন অভিযোগ।
আরশের বিরুদ্ধে অভিযোগে অভিনেত্রী চমক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আরশ আমার ভালো বন্ধু ছিল। একসঙ্গে কাজ করছিলাম। আমাদের ভালো জুটি হতে যাচ্ছিলাম। একটা সময় সে বন্ধুত্বের চেয়ে বেশি কিছু আশা করে। আমি এমনটা কখনোই তাঁর কাছে আশা করিনি। যে কারণে ষড়যন্ত্র করছে। আর আমি নাকি আমাদের সিনিয়র অভিনেতা মাসুম বাশার আংকেলকে ধমক দিয়েছি, পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়েছি। তাহলে পুলিশ যখন এল, তখন পুলিশকে কেন বললেন না, তাঁর সঙ্গে আমি এমন আচরণ করেছি। মূল কথা এটা আমার বিরুদ্ধে তিনি নিয়ে যাচ্ছেন। আমি মোশাররফ করিম ভাই, অপূর্ব ভাই, চঞ্চল ভাইদের সঙ্গে কাজ করছি। যে কারণে কেউ হয়তো আমার ভালো ক্যারিয়ার মেনে নিতে পারছে না। হয়তো সে চাচ্ছে আমরা পার্টনার হই, বন্ধুর চেয়ে বেশি কিছু হয়ে অভিনয় করি। না করার জন্যই ষড়যন্ত্র। সাড়া দেওয়ায় তাদের ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।’
এই সময় ঘটনা প্রসঙ্গে চমক আরও বলেন, ‘তাঁরা বলছেন আমাকে নাকি প্রোডাকশন বয় “চমৎকার” বলায় আমি রেগে গেছি। এটা অযৌক্তিক। সেদিন সকালে আমাকে আরশ খান ফোন দিয়েছে। আমি তাঁর ফোন ধরিনি। পরে মেকআপ রুমে এসে আমাকে বলে, “তোমাকে ফোন দিলাম ধরলে না...” তখন আমি বলি, আমাকে কল টাইম দেওয়ার দায়িত্ব সহকারী পরিচালকের। তুমি আমাকে কো–অর্ডিনেশন করতে পারো না। এটা বলায় সে ক্ষেপে গিয়েছে। সে আমাকে বলে “তুমি বেয়াদবি করলা আমার সঙ্গে।” আমি বলি, কী বেয়াদবি করলাম? তার সবকিছু মাথায় উঠে গেছে।’
অভিনেত্রী চমক বলেন, ‘ডিরেক্টর একদম নতুন। সে আবার আরশের ঘনিষ্ঠ। আরশ তাকে সামনে আনার চেষ্টা করছে। আরশ বিষয়টি ম্যানুপুলেট করে, পরিচালককে বলে সিনক্রিয়েট শুরু করে। পরিচালক আরশের পক্ষ নেয়। পরে দেখি সবাই পরিচালকের পক্ষে কথা বলছে। তখন আমি বলি শুটিং করব না, চলে যাব। এ কথা শুনে পরিচালক বলতে থাকেন তার এলাকা উত্তরা। এখান থেকে এক পা নড়তে হলে আমাকে ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে। আমাকে আটকে রাখার চেষ্টা করা হয়। তখন আমি বাধ্য হয়ে আমাদের অ্যাক্টর ইকুইটির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে সহযোগিতা চাই, আমি নিরাপত্তা বোধ না করায় ঘটনা পুলিশকে জানাই। কিছুক্ষণ পরেই পুলিশ আসে। এর মধ্যে আবার পরিচালক আরশের কথা মতো অসুস্থ হওয়ার নাটক শুরু করে। তখন মাসুম বাশার আংকেল এসে বলেন, ‘আমার জন্য পরিচালক অসুস্থ হয়ে গেল... এই নিয়ে আংকেলের সঙ্গে আমার কথা–কাটাকাটি হয়। কিন্তু ঘটনার দিন আংকেল কিন্তু ডিরেক্টরস গিল্ডকে কিছু বলেননি। এখন সবাই বলছেন। আমি নিশ্চিত পরিকল্পনা করে আরশ আমার বিরুদ্ধে লেগেছে। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।’
এদিকে অভিনেত্রী চমকের অভিযোগ নিয়ে ভিন্ন কথা জানালেন আরশ খান। তাঁর কথায় উঠে এল অসৎ কোনো চিন্তা কখনোই ছিল না। সকালে ফোন করার কারণ প্রসঙ্গে এ অভিনেতা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি সকালে উঠে জিমে যাই। এর মধ্যে সাড়ে ৯টার দিকে পরিচালকের সঙ্গে কথা হয়। তাকে সবকিছু রেডি করতে বলি। পরে সাড়ে ১০টার দিকে সহকারী পরিচালক ফোন দিয়ে বলেন, চমক ফোন ধরছে না। আমি যেন একটা ফোন দিই। সে কারণেই আমি তাকে ফোন দিয়েছি। সে ফোন ধরে না। এখন আমি কি তাকে ফোন দিতে পারি না। আমাদের একসঙ্গে শুটিং। সে এলেই তো আমাদের দৃশ্যে শুটিং করতে পারব। এখানে অন্যায়টা কী?’
ফোন দেওয়া নিয়ে শুটিংয়ের মেকআপ রুমে দুই অভিনয়শিল্পীর কথা হয়। আরশ বলেন, ‘এর মধ্যে আমি হঠাৎ শুনি, চমক চিল্লাচিল্লি করছে। গিয়ে শুনলাম, একজন প্রোডাকশন বয় নাকি তাকে দেখে ‘চমৎকার’ বলেছে। চমক মনে করেছে, এটা বলে তাকে টিপ্পনী কেটেছে। সেটাও সেই প্রোডাকশনের ছেলেকে শাসন করে মিটমাট করে দিলাম। পরে আমি ক্যামেরাম্যান নাজমুল হাসানের সঙ্গে ফোনে কথা বলছিলাম। এর মধ্যে আবার শুনি, চমক চিল্লাচিল্লি করছে। সে শুটিং করবে না। এ নিয়ে পরিচালকের সঙ্গেও কথা হয়।’
আরশ আরও বলেন, পরিচালক সরাসরি জানিয়ে দেন, ‘সে চলে গেলে ক্ষতিপূরণ বাবদ তিন লাখ ৮০ হাজার টাকা দিতে হবে। দুই জনকে ডেকে তিনি বিষয়টি মীমাংসা করতে চান; কিন্তু ঘটনা বেড়ে চলে। চমক অনেক চিল্লাচিল্লি করতে থাকে। পরে সে অভিনয়শিল্পী সংঘে বিষয়টি জানায়। ‘শ্বশুরবাড়িতে প্রথম দিন’ নামের সেই নাটকের পরিচালক আদিব হাসান ডিরেক্টরস গিল্ডে বিষয়টি জানান।’
আরশের দাবি, ‘চমক আমার সামনে অভিনয়শিল্পী সংঘে ফোন দিয়ে বলে তাকে আটকায়ে রাখছে। টাকা না দিলে বের হতে দেবে না। কথা বলা শেষ হলে আমি চমককে বলি, এটা কী বলতেছ। কারণ, তেমন কিছু ঘটেনি। তখন সে আমাকে এ নিয়ে কথা বলতে নিষেধ করে। আমি আবারও বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করি। সবার সঙ্গে কথা হয়। শুটিং করতে যাব। এর মধ্যে দেখি পুলিশ।’
পুলিশ দেখে শুটিংয়ের সবাই অবাক হয়ে যান। পরে জানা যায়, পুলিশ এনেছেন চমক। আরশের ভাষ্য, শুটিংয়ের মধ্যে পুলিশ আসায় সিনিয়র অভিনেতা মাসুম বাশার কিছুটা বিরক্ত হন। তিনি বলেন, পুলিশ আসার মতো তেমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। এতে তাঁকে ছোট করা হয়েছে।
আরশ বলেন, ‘এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে চমক রেগে চিৎকার দিয়ে বলেন, ‘হাউ ডেয়ার ইউ...।’ তখন মাসুম বাশার বলতে থাকেন, ‘তুমি আমার সঙ্গে কেন জোরে কথা বলছ।’ আমি আবার তাদের হাত ধরে চুপ করাই। আঙ্কেল দেখি কাঁপছেন। পরে পুলিশ এলে তাকে ধরে কান্না করতে করতে চমক বলে, ‘আপনারা আমাকে সেভ করেন। আমি একটা ফাঁদে পড়েছি। আপনারা না এলে আমাকে উনি মারতেন। আরশ আমাকে বাঁচাইছে।’ আমি শুনে থ। আমি সঙ্গে সঙ্গে বলি, এটা মিথ্যা কথা, এমন কিছু হয়নি। পরে পুলিশ মাসুম বাশার আঙ্কেলের ফোন চেক করেন। একজন সিনিয়র অভিনয়শিল্পীকে এটা অনেক বড় অপমান করা। সে বারবার বলতে থাকে নিরাপত্তা বোধ করছে না। কেন সেটা সে নিজেও মনে হয় জানে না।’
ঘটনা এখানেই শেষ নয়। সেদিন সংগঠনগুলোর সদস্যরা শুটিংয়ে উপস্থিত অনেকের সঙ্গে কথা বলে। তাঁরা মীমাংসা করবেন। এরপর দুই দিন ধরে আরশ শুনছেন, তাঁকে ঘিরে আপত্তিকর কথা বলছেন তাঁর সহ–অভিনেত্রী চমক। এটা নিয়ে তাঁর মন খারাপ হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের ভালো সম্পর্ক। তাকে আমার মায়ের শাড়ি দিয়েছি কস্টিউম হিসেবে। এ নাটকে একদিন শুটিং করে রাতে চমক আমাকে বাসায় পৌঁছে দিয়েছে। আগেও দিয়েছে। সে এখন বলছে উল্টাপাল্টা কথা। আমি নাকি তার কাছে বাড়তি সুবিধা চেয়েছিলাম। আমার নাকি ব্যক্তিগত সমস্যা আছে। আমি সুবিধা পাওয়ার জন্য এ রকম করেছি। আমি যদি আসলেই তেমন হতাম, তাহলে আগেই স্বার্থ হাসিল করে শুটিং করতাম। সবই ঠিক ছিল, কিন্তু যখন মাসুম বাশার আঙ্কেল প্রসঙ্গে সবার সামনে মিথ্যা বলছিল, তখন সে চেয়েছিল তার সঙ্গে আমি যেন সায় দিই। না দেওয়ার কারণে সে আমাকে নিয়ে উল্টাপাল্টা কথা বলছে। তা ছাড়া শুটিংয়ের শেডে সে এর আগেও এমন অনেকের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছে। তার প্রমাণ আছে।’