মাহমুদউল্লাহর সেঞ্চুরি ছাপিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার দুর্দান্ত জয়
ব্যাটিং স্বর্গে এসে রান না করলে কি চলে? রানের উইকেট পেলে যে কোনো ক্রিকেটারই তা লুফে নেবে এটাই তো স্বাভাবিক। দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটারটা সেটাই করেছেন। ওয়াংখেড়ের ছোট মাঠে রীতিমতো রানের উৎসব করলেন কুইন্টন ডি কক-হেনরিখ ক্লাসেনরা। সাকিব-মুস্তাফিজদের তুলোধুনো করে গড়েন রানের পাহাড়। যা টপকে জেতা তো দূরে নূন্যতম প্রতিরোধও গড়তে পারেনি বাংলাদেশ। পুরো দলের ব্যর্থতার দিনে শুধু লড়াই করেছেন মাহমুদউল্লাহ। স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে তুলে নিয়েছেন সেঞ্চুরি। কিন্তু তার সেঞ্চুরি ছাপিয়ে বড় জয় মাঠ ছাড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা।
মুম্বাইতে নিজেদের পঞ্চম ম্যাচে বাংলাদেশের হার ১৪৯ রানের বিশাল ব্যবধানে। এই নিয়ে টানা চার ম্যাচে হারল বাংলাদেশ। তাতে বিশ্বকাপে নিজেদের বিদায়ের ঘণ্টাও বাজিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। হাতে থাকা বাকি ৪ ম্যাচ জিতলেও সেমিফাইনালে যাওয়ার সমীকরণ নির্ভর করবে যদি-কিন্তুর ওপর।
বিশ্বকাপে আজ সোমবার (২৪ অক্টোবর) বাংলাদেশের বিপক্ষে আগে ব্যাট করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৫ উইকেটে ৩৮২ রান তুলেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। জবাব দিতে নেমে বাংলাদেশ থেমে যায় মাত্র ২৩৩ রানে। বিশ্বকাপের আগে যাকে বাদের খাতায় রাখা হয়েছিল সেই মাহমুদউল্লাহই সেঞ্চুরি করে আরও বড় হার থেকে বাঁচিয়েছেন বাংলাদেশকে।
পুরো বিশ্বকাপে একবারও ৩০০ না ছোঁয়া বাংলাদেশের সামনে ৩৮৩ রান তাড়া করা ছিল এভারেস্ট বিজয়ের সমান। অথচ রান তাড়ায় চূড়ায় ওঠা তো দূরে বাংলাদেশ ভেঙে পড়ে অল্পতেই। যদিও বড় রান তাড়ায় শুরুটা একটু দেখেশুনে করে। কিন্তু থিতু হয়েও টিকল না ওপেনিং জুটি। দলীয় ৩০ রানের মাথায় তানজিদ তামিমের বিদায়ে ভাঙে প্রথম জুটি। মার্কো ইয়ানসেনের বলে ক্লাসেনের হাতে ক্যাচ দিয়ে ১২ রানে ফেরেন তামিম।
একই ওভারে বিদায় নেন নাজমুল শান্ত। ধারাবাহিক ব্যর্থ হওয়া শান্ত ফেরেন গোল্ডেন ডাকে। চরম বিপদে হাল ধরতে পারেননি সাকিবও। তার ইনিংস থেমে যায় ১ রানে। মিডল অর্ডারের প্রাণভোমরা মুশফিকুর রহিমও টিকে থাকতে পারেননি। জেরাল্ড কুটসিয়ার অফ স্টাম্পের বাইরের শর্ট বল কাট করে ছক্কা মারার চেষ্টায় থার্ড ম্যানে ক্যাচ দেন মুশফিক (৮)।
৪২ রানে দ্রুত উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ যখন ধুঁকছিল তখন ভরসা ছিল লিটন দাসের ওপর। কিন্তু এবারও ব্যর্থ তিনি। ২২ রান করে রাবাদার এলবির ফাঁদে পড়েন এই ডানহাতি ব্যাটার।
একের পর এক উইকেট হারানোর মাঝে কিছুটা সময় টিকে ছিলেন মাহমুদউল্লাহ। কিন্তু তার একার পক্ষে এই রান তাড়া অসম্ভব। তাইতো বড় হার নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয় বাংলাদেশকে। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ১১১ রান আসে মাহমুদউল্লাহর ব্যাট থেকেই। ১১১ বলেই তার সেঞ্চুরি সাজানো ছিল ১১ চার ও ৪ ছক্কায়।
এর আগে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি দক্ষিণ আফ্রিকার। ইনিংসের সপ্তম ওভারেই বাংলাদেশকে সাফল্য এনে দেন শরিফুল ইসলাম। বাঁহাতি পেসারের ডেলিভারিটি ডিফেন্স করতে চেয়েছিলেন হেনড্রিকস। কিন্তু লাইনে যেতে পারেননি। বল গিয়ে আঘাত হানে স্টাম্পে। ৩৩ রানে ভাঙে ওপেনিং জুটি। হেনড্রিকস করেন ১৯ বলে ১২ রান।
দ্বিতীয় জুটিও স্থায়ী হয়নি। জ্বলে উঠার আগেই রাসি ফন ডার ডাসেনকে বিদায় করেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ৩৬ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা, ডাসেন করেন ১।
শুরুতে দক্ষিণ আফ্রিকার জোড়া উইকেট নেবার স্বস্তি স্থায়ী হয়নি বাংলাদেশের। বরং বাংলাদেশের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে ওঠেন কুইন্টন ডি কক ও এইডেন মার্করাম। তৃতীয় উইকেটে দুজন মিলে গড়েন ১৩১ রানে শক্ত জুটি। ৩১তম ওভারে এই জুটি ভাঙেন সাকিব। ফিরিয়ে দেন মার্করামকে।
বাংলাদেশ অধিনায়কের অফ স্টাম্পের ওপর ঝুলিয়ে দেওয়া বলে শট খেলতে গিয়ে ডিপ এক্সট্রা কভার থেকে কিছুটা সামনে ক্যাচ দেন মার্করাম। ৭ বাউন্ডারিতে ৬৯ বলে ৬০ রান করে থামেন দক্ষিণ আফ্রিকার ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক।
এরপর ক্লাসেনকে নিয়ে জুটি বাধেন কুইন্টন। তুলে নেন নিজের সেঞ্চুরি। সাকিবের বলে সিঙ্গেল নিয়ে তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগারে পৌঁছে যান ডি কক। ১০১ বলে চার ছক্কা ও ছয় চারে তিন অঙ্ক স্পর্শ করেন তিনি।
সেঞ্চুরির পর আরও আগ্রাসী হয়ে ওঠেন ডি কক। ছুটতে থাকেন ক্লাসেনকে নিয়ে। ১০১ বলে সেঞ্চুরি করা ডি কক পরের ২৮ বলে করেন দেড়শ। সাকিবদের রীতিমতো তুলোধুনো করে শেষ পর্যন্ত ১৭৪ রানে থামেন ডি কক। ১৪০ বলে ১৫ চার ও ৭ ছক্কায় সাজানো ছিল তার ইনিংস।
ডি কক ফেরার পর ঝড় তোলেন ক্লাসেন। ডেভিড মিলারের সঙ্গে জুটি বেধে দক্ষিণ আফ্রিকাকে রানের পাহাড়ে নেওয়ার বাকি কাজ সারেন ক্লাসেন। শেষ পর্যন্ত ৪৯ বলে ৯০ রান করেন তিনি। তার সঙ্গে মিলার করেন ৩৪ রান।
দক্ষিণ আফ্রিকা : ৫০ ওভারে ৩৮২/৫ (ডি কক ১৭৪, হেনড্রিকস ১২, ডাসেন ১, মার্করাম ৬০, ক্লাসেন ৯০, মিলার ৩৪, মার্কো ১ ; সাকিব ৯-০-৬৯-১, মুস্তাফিজ ৯-০-৭৬-০, নাসুম ৫-০-২৭-০, শরিফুল ৯-০-৭৬-১, মিরাজ ৯-০-৪৪-১, মাহমুদউল্লাহ ৩-০-২০-০, হাসান ৬-০-৬৭-২)।
বাংলাদেশ : ৪৬.৪ ওভারে ২৩৩/১০ (তামিম ১২, লিটন ২২, শান্ত ০, লিটন ১, মুশফিক ৮, মাহমুদউল্লাহ ১১১, নাসুম ১৯, শরিফুল ৬, মুস্তাফিজ ১১, হাসান ১৫; মার্কো ৮-০-৩৯-২, উইলিয়ামস ৮.৪-১-৫৬-২, রাবাদা ১০-১-৪২-২, জেরাল্ড ১০-০-৬২-৩, কেশভ ১০-০-৩২-১)
ফল : ১৪৯ রানে জয়ী দক্ষিণ আফ্রিকা।