ড্যাফোডিলের শিক্ষার্থীদের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের আহাজারি
‘এমন কইরা আমাগো দোকানপাট ভাঙলো; আগুন দিল, আমরা কি বিচার পামু না। দ্যাশে কি বিচার নাই?’ আজ সোমবার (৬ নভেম্বর) সকালে সাভারের আশুলিয়ায় নিজের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে এভাবেই আক্ষেপ করছিলেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী শাহরিয়ার হোসেন।
গতকাল রোববার রাতে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের দেওয়া আগুনে পোড়া দোকান মালিক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী শাহরিয়ার হোসেন। গত শুক্রবার ও গতকাল রোববার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এলাকাবাসীর দফায় দফায় সংঘর্ষ, জ্বালাও-পোড়াও, ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। আজ নিজ নিজ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনে শাহরিয়ারের মতো ক্ষতিগ্রস্তদের অনেকেই এমন আহাজারি করছিলেন। কেউ কেউ সব হারিয়ে বিলাপও করছিলেন।
গত শুক্রবারের (৩ নভেম্বর) ভাঙচুর ও হামলার জেরে স্থানীয়রাও ছিলেন বিক্ষুব্ধ। এর ধারাবাহিকতায় গতকাল রোববার রাতে মাইকে ঘোষণা দিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় চানগাঁও গ্রামের বাসিন্দারা। প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরাও নির্বিচারে ভাঙচুর করে প্রায় ১০০টির মতো দোকান।
স্থানীয় ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি শাহরিয়ার সুমন জানান, ‘শিক্ষার্থীরা অন্তত ৭০টি দোকান ভাঙচুর ও চারটি দোকানে আগুন দিয়েছে। এ ছাড়া বহু দোকানে লুটপাট চালিয়েছে।’
তবে এ দায় নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা। এতে যে ক্ষতি হয়েছে–সেই ক্ষত যে স্থানীয়দের অনেক দিন বয়ে বেড়াতে হবে, সেটা স্বীকার করছেন সবাই।
এমন পরিস্থিতিতে আগামী ১০ দিনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সব একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ।
আজ সোমবার এ খবর নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এজাজ উর রহমান। তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতি যে দিকে ধাবিত হচ্ছিল সেখান থেকে ফিরে আসতে এই সিদ্ধান্তের কোনো বিকল্প ছিল না।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর এক সদস্য জানান, যেভাবে গ্রামবাসী এবং শিক্ষার্থীরা মুখোমুখি হচ্ছিল তাতে আরও রক্তারক্তি হতো। কারণ শিক্ষার্থীদের কোনো ভাবেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। যে কারণে আগামী ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত সব ধরনের একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
এদিকে ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই বিভিন্ন হল ছাড়তে শুরু করে শিক্ষার্থীরা। তাদের পথে যাতে কোনো ধরনের বিপত্তির মুখে পড়তে না হয়, সে ব্যাপারে ভোর থেকেই সতর্ক ছিল পুলিশ ও র্যাব সদস্যরা।
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির রেজিস্ট্রার ড. মোহাম্মদ নাদির বিন আলী জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস অনলাইনে নেওয়া হবে। শিক্ষার্থীদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। তাদের নিজ নিজ বাসায় বা নিরাপদ স্থানে থেকে নিয়মিত অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণ করে পড়াশোনা ও শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
গত ২৭ অক্টোবর ড্যাফোডিলের টেক্সটাইল বিভাগের শিক্ষার্থী হাসিবুল ইসলাম অন্তরকে তুলে নিয়ে বেধড়ক মারধর করে খাগান এলাকায় ফেলে রেখে যায় বহিরাগত দুর্বৃত্তরা। শিক্ষার্থীরা তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় একটি হাসপাতালে পরে সাভারের এনাম মেডিকেলে নিয়ে যান। এরপর পরিবারের তত্ত্বাবধানে তাঁকে ময়মনসিংহের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ২ নভেম্বর বৃহস্পতিবার তিনি মারা যান। এ ঘটনায় হত্যা মামলা হয়। গাজীপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয় ঘটনা মূল হোতা রাহাত সরকারকে।
অবশিষ্ট আসামিদের গ্রেপ্তার ও সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে প্রথমে আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা। আঞ্চলিক সড়ক অবরোধ করে প্রথম দফায় বেশ কিছু দোকানপাট ভাঙচুর করে তারা।
দ্বিতীয় দফায় উভয়পক্ষ মুখোমুখি হলে মাইকিং করে শিক্ষার্থীদের প্রতিহত করার আহ্বান জানান এলাকাবাসী। তারপর শুরু হয় তাণ্ডব। ভাঙচুর ও অগ্নি সংযোগ করা হয় দোকানপাটে।
আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম কামরুজ্জামান বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা দোকানে ভাঙচুর চালিয়েছে। গ্রামবাসীর সঙ্গে যে ঝামেলা হয়েছিল, সেটা প্রশমিত হয়েছে। পরিস্থিতি এখন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে। তবে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।’