প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা বিচার বিভাগের হৃদপিণ্ডে আঘাতের সমান : হাইকোর্ট
প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার ঘটনার দায়ের করা মামলায় জামিন শুনানিতে হাইকোর্ট বলেছেন, প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা একটি ন্যক্কারজনক ঘটনা। প্রধান বিচারপতি বিচার বিভাগের হৃদপিণ্ড। তার বাসভবনে হামলার অর্থই হলো বিচার বিভাগের হৃদপিণ্ডে আঘাত করা। বিচার বিভাগ মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল। তাই প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা কোনোভাবে মেনে যাওয়া যায় না।
তিন শীর্ষ আইনজীবীর জামিন শুনানিতে আজ মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান ও বিচারপতি মো. বশির উল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।
আদালতে জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কে এম মাসুদ রুমী।
আদালত শুনানির শুরুতে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী তিন আইনজীবী নেতার জামিন প্রার্থনা করেন। এ সময় হাইকোর্ট বিএনপির আইনজীবীদের প্রতি প্রশ্ন রেখে বলেন, প্রধান বিচারপতি বিচার বিভাগের প্রতীক। তার বাসভবনে ন্যক্কারজনক হামলা করা হলো, আপনারা কি এর প্রতিবাদ করেছেন? কোনো নিন্দা জানিয়েছেন?
এ সময় অ্যাডভোকেট এ জে মোহাম্মদ আলী, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস বলেন, আমরা সংবাদ সম্মেলন করে ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছি। বিএনপির আইনজীবীদের সংবাদ সম্মেলন সম্পর্কিত পত্রিকার কাটিং আদালতের কাছে তুলে ধরেন।
‘প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা নাটকের অংশ বলে মনে করি’, বিএনপি আইনজীবীদের এই বক্তব্য উল্লেখ করে হাইকোর্ট বলেন, প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা আমরা নাটকের অংশ বলে মনে করি না। এটা ন্যক্কারজনক ঘটনা। আপনারা একেকজন এক আদর্শের থাকতে পারেন। বাইরে রাজনীতি করতে পারেন। কিন্তু, কোর্ট নিয়ে রাজনীতি করবেন না। জুডিশিয়ারি সবার। জুডিশিয়ারিকে মেলাইন (হেয়) করবেন না।
এ সময় জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, জুডিশিয়ারিকে হেয় করার প্রশ্নই আসে না। জুডিশিয়ারি না থাকলে আমাদের অস্তিত্ব থাকবে না। ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, প্রধান বিচারপতিকে আমার জীবনের অংশ বলে মনে করি।
এ সময় হাইকোর্ট রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কে এম মাসুদ রুমীর কাছে তার বক্তব্য জানতে চান। কে এম মাসুদ রুমী বলেন, ২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশ থেকে তাণ্ডব চালানো হয়েছে। বিচারপতির বাসভবনে হামলা করা হয়েছে। কিন্তু, বিএনপির আইনজীবীরা এটাকে নাটকের অংশ বলে মন্তব্য করেছেন। তারা এ ঘটনার প্রতিবাদ জানাননি।
শুনানি শেষে আদালত বিএনপির তিন আইনজীবী আইন পেশায় তাদের অবদান, তাদের ব্যক্তিগত ইমেজ বিবেচনায় নিয়ে তিন সপ্তাহের আগাম জামিন দেন। এই জামিন আদেশ অন্য মামলায় রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না বলেও আদেশে উল্লেখ করা হয়।
জামিন পাওয়া তিন আইনজীবী হলেন, বিএনপি নেতা ও সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, মাহবুব উদ্দিন খোকন ও নিতাই রায় চৌধুরী। তিন সপ্তাহ পর তাদের ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে নিয়মিত জামিন নিতে হবে।