তনুর ভাইয়ের বন্ধু সাতদিন ধরে ‘নিখোঁজ’
‘ওরা আমাকে বলে, খালাম্মা আপনি চিন্তা করবেন না। কাল সকালে ওকে দিয়ে যাব। আমি বলি, কেন নেন? তাঁরা বলে, ওকে একটু দরকার আছে।’
ছেলে মিজানুর রহমান সোহাগকে গভীর রাতে তুলে নেওয়ার সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়দানকারী সাদা পোশাকের লোকজন এ কথা বলেই ধরে নিয়ে যায় বলে জানান মা সাহিদা আক্তার। চোখেমুখে অজানা আতঙ্ক আর শঙ্কা নিয়ে তিনি বলেন, ‘সাতদিন হয়ে গেলেও ছেলের কোনো খোঁজ পাইনি।’
সোহাগ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের নিহত শিক্ষার্থী সোহাগী জাহান তনুর ছোট ভাই আনোয়ার হোসেন রুবেলের বন্ধু। সে কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার নারায়ণপুর গ্রামের বাসিন্দা। আজ রোববার কুমিল্লা প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের কাছে সোহাগের নিখোঁজের কথা তুলে ধরেন তাঁর মা সাহিদা আক্তার ও বাবা নুরুল ইসলাম। এ সময় পরিবারের অন্য সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।
তবে জেলা পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মিজানুর রহমান সোহাগ নামে কোনো ব্যক্তিকে তারা আটক বা গ্রেপ্তার করেনি।
নুরুল ইসলাম ও সাহিদা আক্তার জানিয়েছেন, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ও পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) পরিচয় দিয়ে গত ২৭ মার্চ নিজেদের বাড়ি থেকে সোহাগকে নিয়ে যাওয়া হয়। খোঁজাখুঁজির পর গত ৩০ মার্চ বুড়িচং থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন সোহাগের বাবা ও মা। তবে এরপরও কোনো কাজ হয়নি বলে সাংবাদিকদের জানান তাঁরা।
সোহাগের বোন খালেদা আক্তার জানান, গত ২৭ মার্চ বিকেলে টিভিতে তনুর মৃত্যুর সংবাদ দেখে সোহাগ বলেছিল, তনু আমার বন্ধু আনোয়ারের বোন। তখন সে আনোয়ারকে ফোন দিলে ফোনটি বন্ধ পায়। পরে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টের নাজিরা বাজার এলাকায় একটি মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করে সোহাগ। এ কারণে তাকে প্রশাসনের কর্মকর্তারা উঠিয়ে নিয়ে যেতে পারে বলে ধারণা করছে পরিবার।
সোহাগের বাবা নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমার ছেলে অপরাধী হয়ে থাকলে তার বিচার চাই। অপরাধ না থাকা সত্ত্বেও কেন আমার ছেলেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘ওরা সিভিল পোশাকে ছিল। র্যাব ও ডিবির পরিচয় দিয়ে সোহাগকে নিয়ে যাওয়া হয়। ওদের হাতে অস্ত্র ছিল, ওয়্যারলেস ছিল।’
নুরুল ইসলাম আরো বলেন, ‘আমি কৃষিকাজ করি। কষ্ট করে মানুষ করেছি তাকে। র্যাব, ডিবির অফিসে অফিসে ঘুরেছি। কী অপরাধ আমার ছেলের।’
সোহাগের মা সাহিদা আক্তার বলেন, ‘কেন আমার ছেলেকে গুম করা হলো? রাত ১টার সময় আমার ছেলেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। আমরা ওর মোবাইল ফোনেও চেষ্টা করেছি। দুদিন রিং হয়। কিন্তু ওরা তা বন্ধ করে দেয়। র্যাব, বিজিবি সব কার্যালয়ে খোঁজ নিয়েছি। আমার ছেলের কোনো তথ্যই পাইনি।’
এ ব্যাপারে কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার মো. শাহ আবিদ হোসেন বলেন, ‘আমরা তাকে আটক করিনি, এ বিষয়ে আমরা কিছু জানি না। এ বিষয়ে তার পরিবার একটি জিডি করেছে।’