সিলেট ও সুনামগঞ্জে অবনতি, আরও তিন জেলায় বন্যার আশঙ্কা
সিলেট ও সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছেন দুর্গতরা। পানিবন্দি বিপুল সংখ্যক মানুষ আছে খাবার ও পানির সংকটে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, ১০টি নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টায় কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও রংপুর জেলার দুধকুমার, তিস্তা ও ধরলা নদীসমূহের পানি বাড়তে পারে।
অপরদিকে, আজ বুধবার সকাল ৯টা থেকে শুরু হওয়া পরবর্তী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, উত্তরাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র (এফএফডব্লিউসি)।
আজ বুধবার (১৯ জুন) বিকেলে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের (এফএফডব্লিউসি) নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয়ন রায়হান স্বাক্ষরিত বন্যার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, নেত্রকোণা জেলার নদীসংলগ্ন কিছু নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সব প্রধান নদ-নদীর পানি বাড়তে পারে।
মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার মনু-খোয়াই নদী সংশ্লিষ্ট নিম্নাঞ্চলে চলমান বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে।
এতে আরও বলা হয়, আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টায় কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও রংপুর জেলার দুধকুমার, তিস্তা ও ধরলা নদীসমূহের পানি বাড়তে পারে। ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং আগামী ৭২ ঘণ্টা তা অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পেতে পারে।
এফএফডব্লিউসি আরও জানিয়েছে, গঙ্গা-পদ্মা নদ-নদীসমূহের পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। সুরমা ছাড়া দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সব প্রধান নদ-নদীর পানি বাড়ছে।
টানা বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিলেট জেলা বন্যায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সিলেট মহানগরী এবং জেলার ১৩টি উপজেলায় অন্তত ১০ লাখ মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। সিলেট সদর উপজেলা, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট, জকিগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ, দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ, বালাগঞ্জ, ওসমানীনগর ও বিশ্বনাথ উপজেলায় ১৫৪৮টি গ্রাম বন্যায় প্লাবিত। এসব এলাকার ৮ লাখ ২৫ হাজার মানুষ বন্যাকবলিত। পুরো জেলায় আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে ৬৫৬টি। এতে আশ্রয় নিয়েছেন প্রায় ২০ হাজার মানুষ।
আজ বুধবার (১৯ জুন) সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসনের দেওয়া তথ্যমতে, সিলেট সিটি করপোরেশনের ৪২টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৩টি ওয়ার্ড এবং জেলার ১৩টি উপজেলার ১০৬টি ইউনিয়নের ১ হাজার ৫৪৮টি গ্রাম বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। প্রায় ২০ হাজার মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কসহ সিলেটের বিভিন্ন উপজেলার পাকা সড়কে পানি উঠায় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে খেতের ফসল, ভেসে গেছে চাষের মাছ।
সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান জানান, বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় জেলা ও উপজেলা প্রশাসন সার্বক্ষণিকভাবে জরুরিসেবা দিয়ে যাচ্ছে। সরকারি ও বেসরকারিভাবে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। প্রতিটি ইউনিয়নভিত্তিক মেডিকেল টিম গঠন করে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হচ্ছে।