একাত্তরের পরাজিত শক্তি চব্বিশের আন্দোলনকে ব্যবহার করে মুক্তিযুদ্ধের গৌরবকে মুছে ফেলতে চায় : নাছির
একাত্তরের পরাজিত শক্তির একটা অংশ চব্বিশের আন্দোলনকে ব্যবহার করে একাত্তরের গৌরবকে মুছে ফেলতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির।
আজ শনিবার (১১ জানুয়ারি) সকালে বরিশালের গৌরনদী বাসস্ট্যান্ড অডিটোরিয়ামে সরকারি গৌরনদী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, উপজেলা ও পৌর শাখা ছাত্রদলের আয়োজনে ‘গৌরনদীর ছাত্র সমাবেশে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আহ্বান, ৩১ দফা বাস্তবায়ন’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তার বক্তব্যে এসব কথা বলেন নাছির।
এসময় নাছির আরও বলেন, একাত্তরের পরাজিত শক্তির একটা অংশ চব্বিশের আন্দোলনকে ব্যবহার করে একাত্তরের গৌরবকে মুছে ফেলতে চায়। একাত্তর আমাদের জাতির সবচেয়ে গৌরবময় ঘটনা। একাত্তর কখনো মুছে ফেলা যাবে না। চব্বিশের আন্দোলন একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের পরিপূরক। একাত্তরের পরাজিত শক্তি যদি চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান দিয়ে একাত্তরের পরাজয়ের গ্লানি মুছে ফেলার চেষ্টা করে, তাহলে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের ফলে সৃষ্ট হওয়া ঐক্যে ফাটল ধরবে। একাত্তর ও চব্বিশ উভয়কে ধারণ করলেই কেবল জাতীয় ঐক্য অর্থবহ হবে।
নাছির আরও বলেন, গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তিগুলোর মধ্যে শক্তিশালী ঐক্য না থাকার কারণে ফ্যাসিবাদ দীর্ঘায়িত হয়েছিল। বিশেষ করে সিভিল সোসাইটি, পেশাজীবী ও বুদ্ধিজীবী মহল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে রাজনৈতিক কর্মীদের সাথে ঐক্যবদ্ধ না হওয়ায় আওয়ামী লীগ তিনটি ভুয়া-অবৈধ-ডামি নির্বাচন করতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু আমি মনে করি চব্বিশের পরাজিত শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই অব্যাহত আছে, এখানে সকল পক্ষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।
ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পাশাপাশি অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধি হিসেবে যুক্ত করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ঐক্য সবসময়ই পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে দৃঢ় হয়। কিন্তু অংশীজনদের মধ্যে মতবিনিময় না করে একতরফা নানাবিধ সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে, যার কারণে ঐক্য প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সরকার ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে শুধু বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের প্ল্যাটফর্মকে গণ্য করছে। আন্দোলনের পরে তারা কেবল একটি সুনির্দিষ্ট প্ল্যাটফর্মের প্রতিনিধি। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল-সহ অন্যান্য ছাত্র সংগঠনগুলো দেশের বৃহত্তর ছাত্রসমাজকে প্রতিনিধিত্ব করে। কিন্তু আমাদেরকে রাষ্ট্রীয় কোনো উদ্যোগে যুক্ত করা হয় না, এমনকি মতামতও নেওয়া হয় না।
পাঠ্যবইয়ে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতা হওয়ার কারণে ওয়াসিম আকরামের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি জানিয়ে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, একটি বিষয় আমি উল্লেখ করতে চাই, যারা শহীদ হয়েছেন, যাদের রক্তের বিনিময়ে আমরা মুক্তি পেয়েছি, তাদেরকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে নিত্যনতুন তত্ত্বের আবির্ভাব ঘটেছে। যারা শহীদ হয়েছেন তারা সবাই নিজ নিজ বিবেকের তাড়নায় আন্দোলনে এসেছিলেন, যেভাবে জহির রায়হান তার ‘সময়ের প্রয়োজনে’ গল্পে দেখিয়েছিলেন- মুক্তিযোদ্ধারা সবাই সময়ের প্রয়োজনে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু আন্দোলন পরবর্তী সময়ে একটা গোষ্ঠী শহীদের রক্তের কথা বলে, শহীদের ত্যাগের কথা বলে তাদের নিজস্ব চিন্তাধারা, তত্ত্বকথা বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছে। তারা একদিকে শহীদদের মধ্যে বিভাজন না করার কথা বলেন, অন্যদিকে সকল শহীদের মালিকানা নিয়ে আন্দোলনের অন্য সকল অংশীদারকে উপেক্ষা করছেন। এমনকি কেউ কেউ তাচ্ছিল্যের সুরেও কথা বলেন। আমাদের মনে রাখতে হবে, আন্দোলনের কমপক্ষে চার ভাগের একভাগ শহীদ সরাসরি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি ও ছাত্রদলের সাথে সংশ্লিষ্ট। তারা সবাই গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে উত্তরণের জন্য আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তাদের মূল দাবি ছিল গণতন্ত্র এবং ভোটের অধিকার।
এর আগে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জহির উদ্দিন স্বপন। যেখানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহ সভাপতি রিয়াদ রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম ও জুয়েল হোসেন।