বাণিজ্যমেলায় দর্শনার্থীদের আগ্রহ জুলাই চত্বরে
পুলিশের বুলেটের সামনে নির্দ্বিধায় বুক পেতে দেওয়া, পিছনে পুলিশ সামনে স্বাধীনতা, একটা মেধা পড়লে ১০ কোটা গিলে খাব, বুকের ভেতর অনেক ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর, রক্ত মাড়িয়ে সংলাপ নয়, এমন হাজারো সাহসী প্রতিবাদী স্লোগানে মুখরিত হয়েছিল গত বছরের (২০২৪) জুলাই ৩৬। সেই সময় রোমহর্ষক হত্যা ও নিষ্ঠুর নির্যাতন কোন কিছুই দমাতে পারেনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের।
সেই আন্দোলনের ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগের সম্মানার্থে এবারের ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায় (২০২৫) সর্বোচ্চ আবেগ অনুভূতি দিয়ে তৈরি হয়েছে জুলাই চত্বর ও জুলাই ৩৬ চত্বর। তাই এবারের মেলায় সব মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল এই দুই চত্বর। আজ শনিবার (১১ জানুয়ারি) বাণিজ্যমেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে জনসাধারণ ও ভুক্তভোগী কয়েকজন এমনই আবেগ-অনুভূতির কথা প্রকাশ করেন।
পূর্বাচলের বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্রের পূর্ব পাশে করা হয়েছে জুলাই চত্বর। আর প্রদর্শনী কেন্দ্রের পেছনে রয়েছে জুলাই ছত্রিশ চত্বর। সেখানে উপস্থিতি ছিল নজর কাড়ার মতো।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগের গল্প ও ছবি সংবলিত ব্যানার, প্লাকার্ড দিয়ে সাজানো হয়েছে দুই চত্বর। জুলাই চত্বরে বিশেষভাবে মেলা প্রাঙ্গণে স্থান পেয়ে আলোকিত করেছে আবু সাঈদ ও মীর মুগ্ধর ছবি প্রদর্শন। স্থান পেয়েছে আন্দোলনে শহীদদের ত্যাগ ও অবদানের কথা। প্রকাশ হয়েছে শহীদদের নামের তালিকা। চত্বরে রয়েছে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সেই সময়ের আলোচিত নানান সংবাদের ব্যানার। এসব প্রদর্শন আগত দর্শনার্থীরা দেখছেন এবং সেই সময়ের স্মৃতি স্মরণ করছেন। অনেকেই আবেগে আপ্লুত হয়ে আবু সাঈদ ও মীর মুগ্ধর প্রদর্শিত ছবি মেলে ধরছেন। ছবি তুলে স্মৃতি পাতায়ও রেখে দিচ্ছেন কেউ কেউ।
আবু সাঈদ, মুগ্ধসহ অন্যান্য শহীদদের রক্তের বিনিময়ে স্বৈরাচারের পতন হয়েছে জানিয়ে নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা মোহাম্মদ বেলাল হোসেন বলেন, এই নিয়ে দুই দিন বাণিজ্যমেলায় এসেছি। দুদিনর বেশির ভাগ সময় জুলাই চত্বর ও ছত্রিশ চত্বর সময় কাটিয়েছি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন করেছি জানিয়ে উত্তরা থেকে আগত মনিরুল ইসলাম সিফাত বলেন, আমি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন করেছি। আমার স্ত্রী ফারিয়া খান এ আন্দোলন করেছে।
ফারিয়া খান বলেন, নতুন বাংলাদেশ গড়তে আমরা আন্দোলন করেছি। এখন ফল পাচ্ছি। আবু সাঈদ, মুগ্ধসহ সকলের ত্যাগের স্মৃতি ধরে রাখতে চাই। তাদের কারণেই আজ দেশ স্বৈরাচারমুক্ত।
ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সাবেক কর্মকর্তা রোহান আহমেদ বলেন, ৭১ এ স্বাধীনতা পেয়েছি। এর মধ্যে পেয়েছি পতাকা ও বাংলাদেশ। দেশ স্বাধীন তবুও কেন যেন দেশ একটা জায়গায় বন্দি ছিল। এবারের সেই বন্দিত্ব থেকে মুক্ত হয়েছি, গত বছরের জুলাই ৩৬। এটাকে স্বাধীনতা বলব না। এটা অভ্যুত্থান। স্বৈরাচারের হাত থেকে আমরা মুক্ত হয়েছি। জুলাই চত্বর ও ছত্রিশ চত্বর ঘুরে দেখেছি. আবেগাপ্লুত হয়েছি। তাদের ত্যাগ আসাধারণ। তরুণদের ত্যাগের এই স্পিরিট ধরে রাখতে হবে।
জুলাই শহীদদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আজ এই নতুন বাংলাদেশ, তাদের স্মরণে মেলায় এমন আয়োজন প্রশংসনীয় জানিয়ে অমিত পার্থ বলেন, জুলাই চত্বর ও ছত্রিশ চত্বর মেলায় দেখে খুব ভালো লাগছে। এটা খুব জরুরি ছিল। যারা শহীদ হয়েছেন, তাদেরকে তো আর পাব না। কিন্তু তাদের ছবির সঙ্গে নিজের ছবিগুলো স্মৃতি করে রাখতে এসেছি।
এদিকে দেশে পণ্য প্রদর্শনীর সবচেয়ে বড় এই মেলায় এবার ৩৬২টি স্টল ও প্যাভিলিয়ন রয়েছে। এর মধ্যে ৩৫১টিই দেশীয় প্রতিষ্ঠানের স্টল-প্যাভিলিয়ন। আর বাকি ১১টি স্টল সাতটি দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের। অংশগ্রহণকারী দেশগুলো হলো- ভারত, পাকিস্তান, তুরস্ক, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, হংকং ও মালয়েশিয়া। এবারের বাণিজ্যমেলা সাজানো হয়েছে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান থিমে। এক্সিবিশন সেন্টারের দক্ষিণ-পূর্ব পাশে জুলাই চত্বর, দক্ষিণ-পশ্চিম পাশে কালচারাল সেন্টার, টেকনোলজি কর্নার, রিক্রিয়েশন কর্নার এবং উত্তর-পূর্ব (৬ একর) পাশে শিশু পার্ক ও উত্তর-পশ্চিম পাশে ছত্রিশ জুলাই চত্বর ও নামাজ ঘর রয়েছে। দেশীয় পণ্যের প্রচার, প্রসার, বিপণন ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে ১৯৯৫ সাল থেকে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার আয়োজন করছে বাংলাদেশ।