ব্যবসায়ীকে মামলার ভয় দেখিয়ে দুই লাখ টাকা নেওয়ার অভিযোগ ওসির বিরুদ্ধে
গাজীপুরে ওষুধ ব্যবসায়ীকে ধরে নিয়ে অস্ত্র ও হত্যা মামলায় গ্রেপ্তারের ভয় দেখিয়ে দুই লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কোনাবাড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, টাকা নিয়েও ওই ব্যবসায়ীকে থানা থেকে ছেড়ে না দিয়ে মেট্রোপলিটন অধ্যাদেশে প্রসিকিউশন দিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। গত ৩ জানুয়ারি রাতে মহানগরীর কোনাবাড়ী বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ী হাউজিং এলাকার হোসেন আল মুন্সীর ছেলে নূরুল ইসলাম (৪৫)। তিনি কোনাবাড়ী বাজার এলাকার ওষুধের ব্যবসায়ী।
ব্যবসায়ী নূরুল ইসলাম বলেন, ‘গত ৩ জানুয়ারি শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে কোনাবাড়ি আমার ওষুধের দোকানে বসেছিলাম। হঠাৎ চার থেকে পাঁচজন যুবক আমাকে আওয়ামী লীগের নেতা, ৪ ও ৫ আগস্টের হত্যার ঘটনার সঙ্গে জড়িত এসব নানা কিছু বলে হেয় করতে শুরু করে। এক পর্যায়ে তারা আমাকে কিলঘুষিও মারে। এ সময় কোনাবাড়ি থানার এসআই হানিফ মাহমুদ ঘটনাস্থলে এসে লোকজনের কাছ থেকে আমাকে থানায় নিয়ে যায়। পরে থানা পুলিশ নানা ধরনের প্রশ্ন করে ও ভয়-ভীতি দেখাতে থাকে। তারা বলে আমি নাকি গত ৪ আগস্ট বাসন থানার সামনে ছাত্র জনতার ওপর হামলা ও গুলি চালিয়েছি। কিন্তু ওই সময়ে (১ থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত) আমার ছেলেকে নিয়ে ভারতের শিলিগুড়িতে একটি স্কুলে ভর্তির জন্য অবস্থান করছিলাম। ভিসার সময় শেষ হয়ে যাওয়ায় ৬ আগস্ট সড়কপথে বেনাপোল হয়ে বাড়িতে ফিরি। এসব বলার পরেও পুলিশ বলে, আজমত উল্লার বাসার কেন গিয়েছিলেন? রিপন সরকারের সঙ্গে আপনার ছবি কেন? আপনি ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত, হত্যা মামলায় দেবে, অস্ত্র মামলায় দেবে, আগামী এক বছরেও জামিন হবে না। এমন নানা ধরনের কথা বলে ভয় ভীতি দেখাতে থাকে।
ওই ব্যবসায়ী আরও বলেন, আমাকে থানায় নিয়ে আসার খবর পেয়ে আমার স্ত্রী, আমার ছোট দুই ভাগনে ও ভাগনার ছেলে থানায় আসেন। আমার স্ত্রী আমাকে দেখে ও পুলিশের ভয়ভীতির কথা শুনে কান্নাকাটি শুরু করে। এক পর্যায়ে থানার ভেতরেই তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। পরে ওসি নজরুল ইসলাম থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই উৎপল সাহার মাধ্যমে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করে আমার স্বজনদের জানায়, ওই টাকা দিলে পুলিশ তাকে সেফ (মামলা দেবে না) করবে। পরে দেন দরবার করে দুই লাখ টাকা ওসিকে দেওয়া হয়। কিন্তু তারপরও আমাকে ছেড়ে না দিয়ে পরদিন (৪ জানুয়ারি) আমাকে মেট্রোপলিটন অধ্যাদেশের আইনে আদালতে পাঠানো হয়। আদালত জামিন দিলে আমাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কোনাবাড়ি থানার এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ঘটনাটি কোনাবাড়ি থানার সেকেন্ড অফিসার উৎপল ও ওসি নিজেই তত্ত্বাবধান করেছেন। শিক্ষার্থীরা তাকে ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধও করেছে। তারপরও ওই ব্যবসায়ীর কাছ থেকে টাকা নিয়েছে। আবার মেট্রোপলিটন অধ্যাদেশের মাধ্যমে আদালতে পাঠিয়েছে।
কোনাবাড়ি থানার এসআই ও ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন মামলার বাদী হানিফ মাহমুদ বলেন, ‘টাকা নেওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। এ বিষয়ে ওসি স্যার ভালো বলতে পারবেন।’
মামলার সাক্ষী করা হয়েছে একটি মেডিকেল কলেজের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মো. খায়রুল ইসলামকে। তিনি বলেন, নূরুল ইসলাম আমার জানামতে ভালো লোক। তাকে ফাঁসানো হয়েছে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলেছিলেন, তাকে কোনো মামলায় না দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হবে। টাকা নেওয়ার বিষয় ও তাকে মামলার সাক্ষী করা হয়েছে সে বিষয়টিও তার জানা নেই।
এ ব্যাপারে কোনাবাড়ি থানার ওসি নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ওষুধ ব্যবসায়ীকে ধরে নিয়ে দুই লাখ টাকা নেওয়ার বিষয়টি সঠিক নয়।’
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কোনাবাড়ি-কাশিমপুর জোনের সহকারি পুলিশ কমিশনার সুবীর কুমার সাহা বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই।’