নির্যাতিত চার সহস্রাধিক নেতাকর্মী নিয়ে মিলনমেলা বিএনপির
যশোরে বিএনপির চার সহস্রাধিক নেতাকর্মী অন্যরকম এক মিলনমেলায় মেতেছিলেন। পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে দফায় দফায় রাজনৈতিক মামলা, হামলা, নির্যাতন ও লুটপাটের শিকার হন এসব নেতাকর্মী।
আজ রোববার (১২ জানুয়ারি) যশোর শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে বিনোদন পার্ক জেস গার্ডেনে এ মিলনমেলায় মিলিত হন তাঁরা। পিকনিক মুডে সেখানে সারা দিন চলে আড্ডা, হাসি-ঠাট্টা আর খানাপিনা। সেই সঙ্গে বিগত সাড়ে ১৫ বছরের ভীতিকর সময়ের স্মৃতিচারণা তো ছিলই।
মিলনমেলায় আসা যশোর সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক দপ্তর সম্পাদক আসাদুজ্জামান শাহীন জানান, ২০১৪ সালের ৯ জানুয়ারি রাতে পুলিশ তাঁর বাড়িতে অভিযান চালায়। তাঁকে না পেয়ে ছোট ভাইকে আটক করে। এ সময় তাঁর স্ত্রীর কানের দুল খুলে নেওয়ার চেষ্টা করে পুলিশ। তখন তিনি (স্ত্রী) বাড়ি থেকে দৌঁড়ে মাঠে চলে যান। পুলিশ তাঁকে দাবড়িয়ে ধরে কান থেকে সোনার দুল খুলে নিয়ে যায়।
সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি আবদার হোসেন খান আজকের মিলনমেলায় আসার আগেও আদালতে হাজিরা দিয়ে এসেছেন। বিনা দোষে তিন দফায় পাঁচ মাস জেলে আটকে রেখেছিল হাসিনার পুলিশ। পুলিশের উপস্থিতিতে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা তাঁর বাড়ি ভাঙচুর করে। বাড়ির ভেতর থেকে ফ্রিজ, টিভি নিয়ে যায়।
মিলনমেলায় আসা নেতাকর্মীদের প্রায় সবার অভিজ্ঞতা কম-বেশি একইরকম। এ ধরনের আয়োজনে আসতে পেরে সবাই খুশি। সাড়ে ১৫ বছর ভীতিকর এক পরিস্থিতির মধ্যে থাকতে থাকতে তাঁরা ট্রমাটাইজড হয়ে পড়েছিলেন বলে জানান। সেই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য এই মিলনমেলা খুবই কার্যকর হয় বলে তারা মনে করছেন।
এই মিলনমেলার আয়োজন করে যশোর নগর ও সদর উপজেলা বিএনপি।
নগর বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলাম চৌধুরী মুল্লুক চাঁদ বলেন, নগর ও সদর উপজেলা বিএনপি এই মিলনমেলার আয়োজক হলেও এই আয়োজন সফল করতে বুদ্ধি, পরিকল্পনা দিয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত।
সদর উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এ ধরনের আয়োজন বাংলাদেশের রাজনীতিতে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। এর আগে কোথাও এমন মিলনমেলা হয়নি বলে তিনি দাবি করেন।
আমন্ত্রিত অতিথি হয়ে মিলনমেলায় আসা যশোর জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক গোলাম রসুল বলেন, নির্যাতিত নেতাকর্মীদের নিয়ে এ ধরনের আয়োজন খুবই ভালো উদ্যোগ। এটা নির্যাতিত নেতাকর্মীদের জন্য এক ধরনের স্বীকৃতিও। এর আগে এ ধরনের অনুষ্ঠান কোথাও হয়েছে বলে তিনি শোনেননি বলে জানান।
অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, গত সাড়ে ১৫ বছর ধরে দফায় দফায় জেল, জুলুম, হামলা, মামলা, নির্যাতন, বাড়িঘর লুটপাটের শিকার হতে হতে বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা এক ধরনের ট্রমাটাইজড হয়ে পড়েছিলেন। সেই ভীতিকর মানসিক অবস্থা থেকে তাদের বের করে আনার জন্যই এই মিলনমেলার আয়োজন।
অমিত আরও বলেন, নির্যাতিত নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সমমনা দলগুলোর যশোরের শীর্ষ নেতা, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা এবং সাংবাদিকদের এ মিলনমেলায় আমন্ত্রণ জানানো হয়। পাশাপাশি গত সাড়ে ১৫ বছরে নানা ভয়ভীতি, হুমকি উপেক্ষা করে যারা বিএনপির কর্মসূচিতে যানবাহন দিয়েছেন, চেয়ার-টেবিল ডেকোরেটর সরঞ্জাম দিয়েছেন তাঁদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়। পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের নির্যাতনের ভয়ে মাসের পর মাস পালিয়ে থাকা বিএনপির নেতাকর্মীদের যারা পরম মমতায় আশ্রয় দিয়েছেন তাদেরও এই মিলনমেলায় আমন্ত্রণ জানানো হয়।